বিএনপি’র বিভাগীয় গনসমাবেশে যোগ দিতে সারা দেশ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দক্ষিণাঞ্চলের জনশ্রোত এখন বরিশাল মহানগর মুখি। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলারে বোঝাই করে শেষ রাত থেকেই মানুষ পৌছছে মহানগরীতে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক এ মহানগরীতে পৌছে গেছে। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান-বেলপার্কে গত রাতে অন্তত ২০ হাজার মানুষ রাত্রী যাপন করে। শুক্রবার দিনভরই সমাবেশস্থলে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। বুধবার থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা এ নগরীতে পৌছতে শুরু করেন।
দেশের প্রধান বিরোধী দলের বিভাগীয় এ গনসমাবেশকে সামনে রেখে আরো ১০ দিন আগেই বরিশালে পরিবহন ধর্মঘটে ঘোষনা দেয় বাস-মিনিবাস মালিক সমিতিগুলো। শুক্রবার সকাল থেকেই বরিশালের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি শুক্রবার সকাল থেকে বরিশালের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের অন্য জেলাগুলোর সাথে বাস সার্ভিস বন্ধ রেখেছে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠান-বিআরটিসি’ও। সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপো ম্যানেজারের মতে ‘যাত্রীর অভাবে তাদের বাস ছাড়েনি’।
অপরদিকে বাস ও মিনিবাস ধর্মঘটের রেশ ধরে শুক্রবার সকাল থেকেই মহানগরীতে ইজিবাইক ও গ্যাস চালিত থ্রীÑহুইলার চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি পটুয়াখালী,পিারোজপুর ও বরগুনাতে বৃহস্পতিবার রাতে ও ঝালকাঠীতে শুক্রবার সকালে আকষ্মিক পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সব ধরনের যানবাহনের চলাচল বন্ধ করে গোটা দক্ষিণাঞ্চলকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। বরিশাল মহানগরীতে প্রবেসের সবগুলো রাস্তায়ই এ্যাম্বেুলেন্স, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসগুলোতে তল্লশী করেই নগরীতে প্রবেস করতে দেয় বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের লোকজন। মহানগর ট্রাফিক পুলিশও কোন কোন স্থানে যানবাহনে তল্লাশী চালায়। শুক্রবার বিকেলে বিমান বন্দরে অবতরন করা দুটি ফ্লাইটের দেড় শতাধিক যাত্রীর বেশীরভাগই কোন যানবাহন না পেযে রিক্সা ভ্যানে করে ১৫ কিলোমিটার দুরে নগরীতে প্রবেস করতে গিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হন। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মুমুর্ষ রোগীদের হাসপাতালে স্থানন্তর করতে গিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ও দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। কোন ধর্মঘট ডাকা না হলেও শুক্রবার এক চত’র্থাংশ রিক্সাও বরিশালের রাস্তায় নামেনি। অঅজই একই চিত্র চোখে পড়ছে। ফলে জনগনের দূর্ভোগ এখনো সব বর্ণনার বাইরে।
আজকের এ গনসমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতেই বরিশাল ও ভোলার মধ্যে স্পীডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয়ার পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঐ রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। শণিবার সকাল থেকে দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো নৌ রুটেই যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয় অঘোষিতভাবে।
কিন্তু এতসব কিছুর পরেও যোগাযোগ শূণ্য দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা সহ ইউনিয়ন পর্যায় থেকেও নেতা-কর্মী সহ সাধারন মানুষ গত দুদিন ধরেই বরিশালের গনসমাবেশে আসছেন। শণিবার সকাল থেকে নিকট দুরের জনশ্রোত শুরু হয়েছে। দুপুর ১টার পরে মহানগরীর সাধারন মানুষ ঘর থেকে বের হতে শুরু করবে বলে আশা করছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। সবার গন্তব্য নগরীর বেল পার্কে বিভাগীয় গনসমাবেশ।
সকাল ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সমাবেশস্থলের মাঠ প্রায় ভরে গেছে। যে হারে জন¤্রােত আসছে, তাতে দুপুর ১২ টার মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ ময়দানে আর তিল ধার ঠাই থাকবে না বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফলে মাঠ ছাপিয়ে চার পাশের রাস্তাগুলোতে দাড়িয়েই নেতৃবৃন্দের ভাষন শুনতে হবে আমজনতার। তবে জনতার এ অবস্থান কতদুর পর্যন্ত পৌছে তা বুঝতে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আজ দুপুরে শুরু হওয়া বিএনপির এ বিভাগীয় গনসমাবেশে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। মহানগর বিএনপি সভাপতি মুনিরুজ্জামান ফারুখের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও গনসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ এবিএম জাহিদ হোসেন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, মির্জা আব্বাস, মহিলা দল নেত্রী বেগম আফরোজা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সারোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী সোহেল, সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন ও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন সহ একাধিক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন