পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দুই পায়েই গুলি লেগেছে। তার দুই পায়ে ১৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গত শুক্রবার জিন্নাহ হাসপাতাল প্রশাসনের বরাতে এ তথ্য জানায় জিও নিউজ। গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের ওয়াজিরাবাদ শহরে এক সমাবেশে ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকদের বরাতে আল-জাজিরা জানায়, এ হামলায় ইমরানসহ ১৪ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া এক পিটিআই কর্মী নিহত হন।
জিন্নাহ হাসপাতাল প্রশাসন জানায়, গুলিটি তার ডান পায়ে ঘষা লেগে বাঁ পায়ের হাড়ে আঘাত করে। পিটিআই প্রধানের দুই পায়ে ১৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে উল্লেখ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ইমরান খানকে শওকত খানম হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় আনা হয়েছিল। এর আগে ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছিলেন তার চিকিৎসক ফয়সাল সুলতান। তিনি বলেন, লাহোরের শওকত খানম হাসপাতালে ইমরান খান চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা স্থিতিশীল এবং তিনি ভালো আছেন।
এদিকে ইমরান খানকে হত্যার উদ্দেশে হামলার ঘটনায় নাভিদ নামে একজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। থানায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ইমরান খানকে গুলি করার কথা স্বীকার করে সে। এ ব্যাপারে আরো তথ্য জানতে আটক নাভিদকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। এর মধ্যে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে নাভিদ মাদকাসক্ত এবং সে ভিডিওতে যেসব কথা বলেছে সেগুলো নিয়ে ‘সন্দেহ’ আছে। পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অভিযুক্ত জানিয়েছে, ওয়াজিরাবাদে ওয়াকাস নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৬টি গুলিসহ একটি পিস্তল কেনে সে। অভিযুক্ত আরো বলেছে, সে প্রথমে ইমরান খানকে একটি মসজিদের ছাদ থেকে গুলি করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সময় আসরের নামাজ চলায় মসজিদের ছাদে যেতে পারেনি সে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চকালে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় হামলাকারীরা।
ইমরান খানের বক্তব্য, সংবাদ সম্মেলন সম্প্রচার নিষিদ্ধ : পাকিস্তান ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (পেমরা) পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের প্রেস কনফারেন্স সম্প্রচার বা পুনঃসম্প্রচার করা থেকে টেলিভিশন চ্যানেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গতকাল শনিবার জারি করা একটি নোটিশে একথা বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ইমরান তার লং মার্চ বক্তৃতা চলাকালে এবং একদিন আগে ‘হত্যা পরিকল্পনার জন্য ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কুসংস্কার করেছিলেন’। একদিন আগে ওয়াজিরাবাদে তার ওপর হত্যাচেষ্টার পর তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ইমরান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার অভিযোগ দ্বিগুণ করে দেন, যাকে তিনি মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির বলে চিহ্নিত করেন। তিনি একটি সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।
তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে আক্রমণ এবং একজন সামরিক অফিসারের কথিত জড়িত থাকার বিষয়টি নোটিশ নিতে বলেছেন, যাকে তিনি সেনাবাহিনীতে ‘কালো ভেড়া’ বলেছেন। তিনি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়ালের কাছে তার ন্যায়বিচার দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
যেহেতু তিনি দাবি করেছেন যে হামলার প্রথম তথ্য প্রতিবেদন ‘উচ্চ ক্ষমতার’ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে নিবন্ধিত হচ্ছে না, তাই ইমরান সেনাপ্রধানকে গুপ্তচর সংস্থার কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসিরকে অপসারণ করার এবং হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে তদন্ত করার আহ্বান জানান।
এর প্রতিক্রিয়ায় পিটিআই সিনেটর ফয়সাল জাভেদ বলেছেন, দল আদালতে নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং ‘লাখ লাখ মানুষ এখনও ডিজিটাল মিডিয়াতে ইমরানের বক্তৃতা দেখতে থাকবে’।
ফাওয়াদ চৌধুরী ইমরান খানের ওপর পেমরার নিষেধাজ্ঞাকে ভীরুতা ও কাপুরুষতা বলে অভিহিত করেছেন। এক বিবৃতিতে ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, ইমরান খানের প্রেস কনফারেন্স এবং বক্তৃতার ওপর নিষেধাজ্ঞা একটি কাপুরুষোচিত আদেশ। তিনি বলেন, সরকার এতটাই ভীত যে, ইমরান খানের সত্যকে গুলি করা হচ্ছে, তারা পেমরার এ অসাংবিধানিক আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। পিটিআই নেতা আরো বলেন, আয়না না দেখলে এ সরকারের কুৎসিত চেহারা লুকায়িত থাকবে, সেটা হবে না।
হামলা তদন্তে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ দাবি করেছেন, ইমরান খানের ওপর হামলার তদন্ত পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট কমিশনের উচিত ঘটনার তদন্ত করা, কিন্তু দুঃখজনক ঘটনাকে দোষারোপ করা হচ্ছে এবং কটূক্তি দেখানো হচ্ছে।
লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ শরীফ বলেন, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির উচিত দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অবসানে একটি পূর্ণাঙ্গ আদালত কমিশন গঠন করা।
তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ আদালত ভিত্তিক কমিশন দেশ ও জনগণের জন্য উপকারী, আমার আবেদন না মানা হলে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির কাছে ফুলকোর্ট কমিশন গঠনের অনুরোধ রয়েছে, আপনারা যখনই ডাকবেন আমি আদালতে হাজির হব।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, ইমরান খানের ওপর হামলার নিন্দা করেছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য দোআ করেছেন।
মামলা নথিভুক্ত না করে কী ধরনের তদন্ত : পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) নেতা জুবায়ের নিয়াজি বলেছেন, ইমরান খানের ওপর হামলার মামলা নথিভুক্ত না করে কী ধরনের তদন্ত হচ্ছে? লাহোরের শওকত খানম হাসপাতালের বাইরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় জুবায়ের নিয়াজি বলেন, ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও ইমরান খানের ওপর হামলার এফআইআর নথিভুক্ত করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আহতদের বক্তব্য এখনো রেকর্ড করা হয়নি, তবে অভিযুক্তের বক্তব্য ভাইরাল করা হয়েছে। পিটিআই নেতা আরো বলেন, আমি ইমরান খানের আত্মীয় হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে হামলা মামলার বাদী হয়েছি। তিনি বলেন, যখন এখনও এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়নি, তখন জিজ্ঞাসা করতে হবে আপনি কোন তদন্ত করছেন?
একাধিক জায়গা থেকে গুলি করা হয় : পিটিআই নেতা আসাদ উমর দাবি করেছেন, ইমরান খানের গাড়িবহরের ওপর একাধিক স্থান থেকে গুলি চালানো হয়েছে।
লিবার্টি চক লাহোরে পিটিআই-এর বিক্ষোভে ভাষণ দিতে গিয়ে আসাদ উমর বলেন, এমন প্রত্যক্ষদর্শী আছেন যারা একাধিক জায়গা থেকে ইমরান খানের গাড়িবহরের ওপর গুলি চালাতে দেখেছেন। তিনি বলেন, পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে ইমরান খানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, দুটি ভিন্ন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বিস্ফোরণ ব্যবহার করা হয়েছে। পিটিআই নেতা আরো বলেন, কতদিন এফআইআর বন্ধ করবেন, ইমরান খানকে খুন চেষ্টার বিরুদ্ধে মামলা হবে।
তারা বলেছে, আমাদের রেড লাইন পার হতে হবে আর আমরা চুপচাপ বসে আছি, এটা হতে পারে না। আসাদ উমর আরো বলেন, ৭৫ বছর বয়সী সিনেটর ও তার স্ত্রীর পবিত্রতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সূত্র : আল-জাজিরা, ডন অনলাইন, জং নিউজ ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন