বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবিতে জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৪ পিএম | আপডেট : ১:৪০ পিএম, ১৪ নভেম্বর, ২০২২

মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে মাদরাসা শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জামিয়াতুল মোদার্রেছীন।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ঢাকা মহানগর জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবু বকর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শতকরা ৯১% মুসলমান যে দেশে বসবাস করে সে দেশে কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য, কৃষ্টি, দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতির সাথে সাথে বর্তমান চাহিদাকে সমন্বয় করে দেশবরেণ্য আলেম ওলমাদের অংশগ্রহণে একটি যুগোপযোগি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক তৈরি হবে এটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। আলেম-ওলামাগণ বারবার একই দাবী করেন যে, মুসলিম জনগোষ্ঠির ইমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি সমুন্নত রেখে আধুনিক বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্তি ও মাদরাসা শিক্ষার বৈশিষ্ট উপযোগী পরিমার্জন সাপেক্ষে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন ও সংস্কার করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০২২ সালের জন্য এনসিটিবি ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য যে ৯টি বই (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, শিল্প সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিজ্ঞান) পাইলটিং/পরীক্ষামূলকভাবে পাঠদান করা হয় এবং ২০২৩ সাল থেকে ৬ষ্ঠ, ৭ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ঐসমস্ত বই স্কুল ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে মর্মে এনসিটিবি ঘোষণা দিয়েছে, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্ণিত পাঠ্যপুস্তক মাদরাসা শিক্ষার জাতীয় লক্ষ-উদ্দেশ্য (জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এ বর্ণিত) এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট উপেক্ষা করে রচিত হয়েছে।
তারা বলেন, এসব পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত অধিকাংশ ছবি, চিত্র, শব্দ, বাক্য, তথ্য ও উপাত্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মর্মাহত এবং তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে সঙ্কিত করে তুলবে। অধিদপ্তরসমূহ ইতিমধ্যেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে। সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৯টি বইয়ের মধ্যে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের বানী, উদ্ধৃতি, নীতি-নৈতিকতা সৃষ্টিকারী কোন বিষয় স্থান পায়নি। উপরন্ত আপত্তিজনক বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন : বিজ্ঞান বইয়ে ১১ জন উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি দিয়ে তাদের লজ্জাস্থানের পরিচয় দেয়া হয়েছে এবং ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে ওষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঈমান হারা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৯টি বইয়ে শতশত মেয়ের বেপর্দা ছবি ছাপানো হয়েছে। হিন্দু মহিলার শাঁখা পরা ছবি রয়েছে।
ইংরেজি বইয়ে কুকুর ও নেকড়ে বাঘের ২৪টি ছবি ছাপানো হয়েছে যা ইউরোপীয় সংস্কৃতির অংশ বিশেষ।
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ (মানুষ সৃষ্টি হয়েছে বানর থেকে), দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি এবং দেবতাদের পরিচয় দেয়া হয়েছে যা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রত্যাখ্যাত।
জীবন জীবিকা বইয়ে ইশপের গল্প, প্রনাম, গানশোনা, নাচ, বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাশ্চাত্য ও মূর্তিপূজার সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও দূর্গাপুজা, গীতাঞ্জলী, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। উপরন্ত বইগুলোতে যে সমস্ত মানুষের নাম ব্যবহৃত হয়েছে একটি মুসলিম দেশে সত্যিই আপত্তিকর। যেমন: আনিকা, লিটল, রাড, প্লাবন, রতন, দীপক, নন্দিনী, এন্তি, মিসেল, মনিকা চাকমা, ডেবিট, প্রিয়াঙ্কা, মন্দিরা ইত্যাদি। সামগ্রিক বিবেচনায় ৯১% মুসলমানের দেশে পাশ্চাত্য ও দেব-দেবীর বিশ্বাস ও তাদের আরাধনার শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরি বইগুলো স্কুলের জন্যও উপযোগি নয়। মাদরাসায় এসকল বই পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গ্রহণ ও ব্যবহারের প্রশ্নেই আসেনা।
জমিয়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, এই ধরণের পাঠ্যপুস্তক মাদরাসায় পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত এবং নির্দেশিত হলে, মাদরাসা শিক্ষাবান্ধব সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের ঐতিহ্য বিরোধী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ধর্ম ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে, যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না ।

মানববন্ধনে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবী হলো- ১। মাদরাসা শিক্ষার জন্য এ সরকারের প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ এ বর্ণিত মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী এবং পাঠ্যবই, এনসিটিবি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে প্রণয়ন করার বিকল্প নেই । অনতিবিলম্বে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করে এ কাজ শুরু করতে হবে।

২। দাবীকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্বপর্যন্ত প্রচলিত পঠ্যপুস্তকসমূহ পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে ।

৩। সাধারণ শিক্ষায় এসএসসি পরীক্ষা দশটি বিষয়ে ১০০০ নম্বরের অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করতে হবে।

৪। বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চাকুরী জাতীয়করণ করতে হবে।

৫। সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রধান সহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন/ভাতা প্রদান করতে হবে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি, টিফিনসহ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।

৬। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত ২০১৮ সালে প্রণিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা মঞ্জুরীর ১৪ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

৭। মহিলা কোটা শিথিল ও সংশোধনপূর্বক যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে ।

৮। আরবি প্রভাষকগণের উচ্চতর পদে আসীন হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

১৯। অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরবি প্রভাষকদের জন্য পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

১০। কামিল পাশ সহকারী মৌলভীদের উচ্চতর স্কেলের ব্যবস্থা করতে হবে

১১। মাদরাসা শিক্ষকগণের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে ।

১২। মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) স্কুল ও কলেজের নীতিমালা ২০২১ এর সাথে সমন্বয় করে মাদরাসার অনার্স স্তরের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করতে হবে।
১৩। প্রায় দুই হাজার শিক্ষকের ইনক্রিমেন্ট কর্তন করা হয়েছে যা অমানবিক। অনতি বিলম্বে বকেয়াসহ প্রাপ্য ইনক্রিমেন্ট প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মোহাম্মদ কামাল হোসেন ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ৭:৩১ পিএম says : 0
এদেশের শিক্ষার অনৈসলামিকরণের এজেন্ডা বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজে পালন করছে।
Total Reply(0)
Md Akbar Hussain ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ৭:৩১ পিএম says : 0
বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর হাতে মাদ্রাসা শিক্ষা নিরাপদ নয়।
Total Reply(0)
Imran Hossain Jibon ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ৭:৩১ পিএম says : 0
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ইসলামী ও ইসলামী শিক্ষার ওপর অনেক দিক দিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, মিথ্যাচার চলছে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন