মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

খেরসনের দখল নিলেও আতঙ্কে কিয়েভ বাহিনী

ইউক্রেন শান্তির জন্য প্রস্তুত : জেলেনস্কি পুতিনের পরিকল্পনা আসলে কী?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের পর ইউক্রেনীয় বাহিনী খেরসনে ইন্টারনেট এবং টেলিভিশন সংযোগ পুনরুদ্ধারে কাজ করছে। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। পাশাপাশি, গতকাল তিনি খেরসন সফরে যেয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের পক্ষ শান্তির জন্য প্রস্তুত।

এখন ডিনিপ্রো নদীর বিপরীত তীরে ঘাঁটি গেড়ে থাকা রাশিয়ান সৈন্যরা আবার গোলাবর্ষণ শুরু করতে পারে বলে আতঙ্কে রয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। খেরসনের কর্মকর্তারা ১৩ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ডিনিপ্রো নদীতে পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছেন। রাশিয়ার ফেলে যাওয়া বিস্ফোরক এই অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং যারা ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাদের বাড়িঘরে মাইন বা কোন ফাঁদ আছে কি না তা পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বাড়ি ফিরে না আসার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। খেরসনের গভর্নর ইয়ারোসøাভ ইয়ানুশেভিচ নাগরিকদের জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলতে বলেছেন এবং সোমবার শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে দূরে থাকতে বলেছেন কারণ সামরিক বাহিনী সেখানে মাইন চিহ্নিত করে তা নিষ্ক্রিয় করার জন্য কাজ করবে। সেখানে বিকেল পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কারফিউ বলবত থাকবে।

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার খেরসন সফরে যেয়ে বলেছেন যে, ইউক্রেনের পক্ষ শান্তির জন্য প্রস্তুত। ‘আমরা শান্তির জন্য প্রস্তুত, আমাদের সমস্ত দেশের জন্য শান্তি,’ রয়টার্স তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে। ইউক্রেনীয় নেতা এর আগে বলেছিলেন, কিয়েভ প্রয়োজনীয় মাইন-সুইপিংয়ের কারণে সাংবাদিকদের খেরসনে যেতে দিতে চায় না।

গত ৯ নভেম্বর, রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন জোনে যৌথ বাহিনীর কমান্ডার সের্গেই সুরোভিকিনের প্রস্তাবে ডিনিপারের ডান তীর থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। সামরিক কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, রাশিয়ান বাহিনী সফলভাবে ইউক্রেনীয় আক্রমণ প্রতিহত করছে এবং কাখোভস্কায়া এইচপিপি বাঁধের নীচে অঞ্চলের সম্ভাব্য বন্যার কারণে গোষ্ঠীটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার হুমকির কারণে বাহিনী সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সুরোভিকিনের মতে, সমস্ত বেসামরিক নাগরিক যারা তাদের সরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল, তাদের বাম তীরে আনা হয়েছে। তাদের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি।

পুতিনের পরিকল্পনা আসলে কি : রাশিয়ার সেনারা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন ছেড়ে চলে গেলেও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সতর্ক করছেন - যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, খেরসন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার এ যুদ্ধের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
গত বুধবার মস্কো ঘোষণা করে যে, তারা খেরসন শহর থেকে রুশ সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ‘আমি জানি এটা একটি কঠিন সিদ্ধান্ত তবে আমরা আমাদের সৈন্যদের জীবন এবং আমাদের বাহিনীর লড়াই করার সক্ষমতাকে রক্ষা করবো,’ বলেন জেনারেল সুরোভিকিন। পশ্চিামার বলছেন, খেরসন থেকে এই সেনা প্রত্যাহার রাশিয়া এবং ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি বড় এবং অপমানজনক আঘাত। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলছেন ব্যাপারটাকে তারা মোটেও এভাবে দেখছেন না।

দিমিত্রি পেসকভ বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, খেরসন থেকে রুশ সৈন্যদের হটে যাওয়াটা প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য অপমানজনক কিছু নয়। টিভি উপস্থাপক ভøাদিমির সলোভিয়ভ তার অনুষ্ঠানে বলছিলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম মার্চ মাসেই কিয়েভে আমাদের পতাকা উড়ুক। তাই কিয়েভ ও চেরনিহিভ থেকে আমাদের সৈন্যদের পিছিয়ে আসাটা ছিল বেদনাদায়ক।’ ‘কিন্তু এটাই যুদ্ধের নিয়ম...আমরা নেটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি,’ বলেন তিনি।
যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক বিজয়গুলো সত্ত্বেও একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং সেসব এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত যুদ্ধ চলতে থাকলেও রুশ দখল এখনো কায়েম আছে। রুশ সৈন্যদের প্রস্থানের পর খেরসন শহরে উল্লাস হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এমন আতংকও আছে যে রাশিয়া হয়তো সেখানে পাল্টা আক্রমণও চালাতে পারে - জানাচ্ছেন নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতারা।

রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের স্থলযুদ্ধ বিষয়ক সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জ্যাক ওয়াটলিং গার্ডিয়ান পত্রিকায় এক নিবন্ধে লিখেছেন, পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার কৌশলে একটা পরিবর্তন এনেছেন। তিনি বলছেন, ‘এর লক্ষ্য হচ্ছে তাদের নতুন তৈরি করা প্রতিরক্ষা ব্যুহের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর আক্রমণকে মোকাবিলা করে তাকে দুর্বল করে ফেলা, এবং অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালিয়ে পশ্চিমা জোটের মনোবল ও অস্ত্রের মজুতকে হ্রাস করা। অন্যদিকে আগামী বছরে নতুন লোক এনে সামরিক বাহিনীকে পুনরুজ্জীবিত করা।’ রাশিয়া ও ইউক্রেনে এখন শীতকাল প্রায় এসে গেছে। এসময় প্রচণ্ড ঠান্ডা ও ভারী তুষারপাতের কারণে যুদ্ধ হয়ে উঠবে অত্যন্ত কঠিন। জ্যাক ওয়াটলিং বলছেন, ইউক্রেনের জন্য যা জরুরি তা হলো রুশ সৈন্যরা যেন শীতের সময়টায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করা। তিনি আরো বলছেন, এমন কিছু খবরও আছে যে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইউক্রেনকে সুপারিশ করছে যেন তারা আলোচনায় বসে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে - ইউক্রেন আভাস দিয়েছে যে তারা অভিযান অব্যাহত রাখবে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ যুদ্ধে শীত একটা নির্ণায়ক ভুমিকা পালন করবে এবং এ সময়টায় উভয় পক্ষই হয়তো অভিযানে বিরত থাকবে - এমনটাও হতে পারে। কিছু বিশ্লেষক ও কূটনীতিক এমনকি শীতের সময়টায় একটা শান্তি আলোচনার সম্ভাবনার কথাও বলছেন। সূত্র : বিবিসি নিউজ, তাস, রয়টার্স, সিএনএন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Khairul Hasan ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ৯:১৩ এএম says : 0
প্রকৃত মালিকরাই ভূমি ফেরত পেয়েছে। অবৈধ ব্যর্থ হলো
Total Reply(0)
Md Sumon ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ৯:১৪ এএম says : 0
যুদ্ধ আপতত শেষ হচ্ছে না, সবই খেলা। পুতিনকে বুজা মুশকিল।
Total Reply(0)
Sayed Faiz ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ৯:১৪ এএম says : 0
সামনে শীত তাই সে সেনাদের নিরাপদ অবস্থানে সরিয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন