শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

অসাধু সিন্ডিকেট নিধন করছে মা ও পোনা মাছ বিপাকে সাধারণ মানুষ

রূপগঞ্জে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মুক্ত জলাশয় দখল

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রশাসনের নাকের ডগায় এক শ্রেণির অসাধু গ্রাম্য সিন্ডিকেট উপজেলার বিভিন্ন মুক্ত জলাশয়ে ঘের দিয়ে দখলে নিয়েছে বিলও খাল। অন্যদিকে  কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে নিধন করা হচ্ছে মা ও পোনা মাছ। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খালে-বিলে বেড়জাল, জগতবেড়, কনুই জাল, কারেন্ট জাল, মশারি জালসহ বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে অবাধে মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন করে চলছে তো চলছেই। এতে  একদিকে মুক্ত জলাশয় থেকে সাধারণ লোকজন মাছ ধরে খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে দখলদাররা বলছেন এটা সামাজিক মৎস চাষ। আর সামাজিকভাবে মৎস্য চাষের নামে প্রকৃত জমি মালিক ও গ্রামের সাধারণ লোকজনতে বঞ্চিত করে বিল দখলে নিয়েছেন তারা। ফলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে প্রতিপক্ষ তৈরী হওয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে কারেন্ট জাল ব্যবহার, সেচ দিয়ে  ও বাধ দিয়ে পুকুর, খাল, শুকিয়ে শিকার করা হচ্ছে পোনা মাছ ও মা মাছ। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারী না থাকলে বড় ধরনের মাছের আকাল দেখা দিতে পারে বলে  মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
উপজেলার মধুখালী, গুতিয়াব, দক্ষিণবাগ, শিমুলিয়া, কেন্দুয়া, বিরাব, গুতুলিয়া, ভোলাব পিরুলিয়া, কায়েতপাড়া, দেইলপাড়া, বরুনা, নিমেরটেক, বড়ালু, পাড়াগাঁও, পশ্চিমগাঁও, দক্ষিণপাড়া, নয়ামাটি, বসুলিয়া রাতালদিয়া, কামশাইর এলাকার বিলে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে মা মাছ ও পোনা মাছ নিধনের দৃশ্য। বাদ যায়নি রাজউকের অধীনে থাকা পূর্বাচল উপশহর এলাকার লেকগুলো। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে বাঁশের মাচা, গাছের ডাল-পালা দিয়ে ঘের করে দখলে নিয়েছে। সিন্ডিকেট করে মাছ চাষে করলেও স্থানীয়  সাধারণ লোকজনকে মাছ ধরায় বাধা দিচ্ছে। ফলে মুক্ত জলাশয় সিন্ডিকেটের দখলে থাকায় মাছ কিনে খেতে হচ্ছে। এছাড়াও মধুখালীর মুক্ত জলাশয় ডিঙ্গামারার বিলে বেশকিছু অংশে সাইদুর নামের এক মাছ ব্যবসায়ী জাল দিয়ে ঘের করে দখলে নিয়েছে। জাঙ্গীর এলাকার হুমাউন মাস্টার ও কতিপয় বাসিন্দা মিলে দখলে নিয়েছে জাঙ্গীরের বিল। নবগ্রাম এলাকায়ও দেখা গেছে একই দৃশ্য। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এসব বিলে যাদের জমি নেই তারাও মাছ চাষ প্রকল্প নামে দখলে নিচ্ছে বিল। এ সময় বিলে কোন ছোট বাচ্চারাও মাছ ধরতে গেলে আটকিয়ে নির্যাতন করা হয়। অপরএকটি সূত্র জানায়, মাছ শিকারের জন্য এসবক প্রকল্প নামধারীরা ব্যবহার করছে কারেন্ট জালের। বিলের পানি সেচযন্ত্রের সাহায্যে শুকিয়ে নিধন করা হচ্ছে পোনা ও মা মাছ। একই নিয়মে বর্ষার পানি কমে যাওয়ার সময় খালের পানিকে গতিরোধ করে নির্ধারিত অংশ শুকিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে। সরকারি পুকুর ও দীঘিতেও অনিয়মের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করায় সাধারণ লোকজন মুক্ত জলাশয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পিতলগঞ্জ এলাকার শ্রী চরন বাবু বলেন, বাঙ্গালীর গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ, আগের সেই দিন আর নাই। দেশি মাছ এখন হারিয়েই যেতে বসেছে। তারওপর বর্ষাকালে যা-ও কয়েকটা পাওয়া যায়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিল দখল করায় মাছ ধরা যাচ্ছে না ফলে কিনে না খেলে দেশী মাছ খাওয়া সম্ভব নয়। এভাবে অবৈধভাবে মাছ শিকার করলে ভবিষ্যতে দেশি মাছ আর পাওয়াই যাবে না। স্থানীয়রা আরো জানান, বর্ষার পানি আসার সাথে সাথেই এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবীরা সরকাররি নিষেজ্ঞা না মেনে বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল দিয়ে রাতদিন মা ও পোনা মাছ নিধন করে চলছে। আবার পানি চলে যাওয়ার সময় বিভিন্ন কায়দায় পোনা মাছ ও মা মাছ নিধন করে থাকে। তারা মনে করছেন এভাবে চলতে থাকলে দেশী মাছের আকাল পড়বে। মুশুরী গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন, এভাবে মাছ নিধন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে মাছের আকাল দেখা দিবে। এমনিতে দেশি মাছ সহজে পাওয়াই যায় না। কামশাইর এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন জানান, স্থানীয় জেলে ও কিছু ভাড়াটিয়া জেলেরা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দিনে ও রাতের আঁধারে বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করে ঢাকার বিভিন্ন আড়তে ও স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে অবাধে বিক্রি করছে। এসব বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার বসাক বলেন, ১৯৫০ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইনে সব ধরনের মা মাছ ও ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত পোনা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে অভিযান চালিয়ে ৭৯ কেজি জাটকা আটক ও এক জনকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে পানি চলে যাওয়ার সময় সেচযন্ত্র দিয়ে মাছ নিধন অবৈধকাজ। এ সময় তিনি মুক্তজলাশয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দখলে নিয়েছে বলে  স্বীকার করেন এবং ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দেন। তবে এসব মৎস্য চাষ সামাজিক মৎস্য চাষ হিসেবে কেউ কেউ অনুমোদন নিয়েছেন বলে দাবী তার। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শতাধিক পাউন্ড কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে এবং ২ জনকে অবৈধভাবে মাছ শিকার করায় ছয় মাস করে জেল এবং জরিমানা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এসব অবৈধ মৎস্য শিকারিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। এ সময় তিনি আরো বলেন, মুক্ত জলাশয় দখল করে মাছ চাষ অন্যায়। সামাজিক মৎস্য চাষের কারণে সাধারণ লোকজন বঞ্চিত হয়ে থাকলে তদন্ত করে  আইনি ব্যবস্থা  নিব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন