‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের সার্ভিস প্রোভাইডারের পাওনা পরিশোধের পদ্ধতিসহ ৮ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৯৮২ কোটি ৯১ লাখ ১১ হাজার ৮০৫ টাকা। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৪তম সভা হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য টেবিলে ২টিসহ মোট ৮টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪টি, বিদ্যুৎ বিভাগের ১টি এবং সেতু বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল টেবিলে উপস্থাপিত দুটি প্রস্তাব ছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের। অনুমোদিত ৮টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৯৮২ কোটি ৯১ লাখ ১১ হাজার ৮০৫ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, ময়মনসিংহ জোন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-১: লট-৫ এর আওতায় পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে কারিগরিভাবে ৩টি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি থেকে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ ২য় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল ইলেক্ট্রিক এনন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১০২ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৯ টাকা।
সভায়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের লক্ষ্যে নিয়োগকৃত সার্ভিস প্রোভাইডারকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৫ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ইউএস ডলার ৩৫ শতাংশ পরিশোধের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে চট্টগ্রমের কর্ণফুলী নদীতে বাস্তবায়নাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’-এর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের লক্ষ্যে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে চায়না কমিউনিকেশনস কন্সট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডকে ৯৮৩ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ১৬৬ টাকায় ৫ বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। উক্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্ক্যানারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে বিধায় অনুমোদিত মূল্য অপরিবর্তিত রেখে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬৫৬ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ৪০৮ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার ৯৪০ ইউএস ডলার (সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২৬ কোটি ৮৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৫৮ টাকা) পরিশোধের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
তিনি বলেন, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল)-এর জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ডিএপি সার উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩০ হাজার মেট্রিকটন ফসফরিক এসিড আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি থেকে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই (স্থানীয় এজেন্ট: মেসার্স আর. কে. এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা) এই ফসফরিক এসিড সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ২১৫ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৮৮০ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দেশটি থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৯ টাকা।
তিনি জানান, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ১৩তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১৩তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৫৯৪.১৭ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৯ টাকা।
সভায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ১৪তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে সারের দাম নির্ধারণ করে ১৪তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টনের দাম নির্ধারণ হয় ৫৯৪.১৭ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৯ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৫০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানির একটি প্রস্তাব ছিল। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৭৮৮ ডলার হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় ব্যয় হবে ৪১৫ কোটি ৫৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রস্তাবটি ছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি। প্রতি মেট্রিক টনের দাম পড়বে ৭২৫ দশমিক ২৫ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ৩০৮ কোটি ৭৮ লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টাকা।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ফিফা বিশ্বকাপ কাতার-২০২২ এর প্রচারস্বত্ব সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি, সিদ্ধান্ত হলে তা পরে জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন অতিরিক্ত সচিব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন