পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা : নতুন বছরে নতুন আমেজে ক্লাশ শুরু হয়েছে জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাশ নেয়ার সকল উপকরণ থাকা সত্যেও পঞ্চগড় জেলার ২৮৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরনো নিয়মেই চলছে। ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে সরকারের মূল্যবান যন্ত্রাংশ। এছাড়াও দেশের চলমান অগ্রযাত্রা থেকে কয়েক গুণ পিছিয়ে পড়ছে এ জেলার শিক্ষার্থীরা। আর এ জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের। জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বার বার তাগাদা সত্যেও উন্নতি হয়নি ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। জেলার চারটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও দুটি সরকারি কলেজসহ ২৮৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। ক্লাশ চলছে, তবে পুরনো আদলে। এমনকি কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বলতেই পারেন না যে ওই বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাশ নেয়ার উপকরণ রয়েছে। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু লোক দেখানোর জন্য প্রজেক্টরের ব্যবহার করা হয়। কোন কোন বিদ্যালয়ে আবার মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে কোন ক্লাশ না হলেও প্রধানমন্ত্রীর ড্যাশবোর্ডে নিয়মিত তথ্য প্রেরণ করে। ফলে এ জেলার শিক্ষার্থীরা অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীদের তুলনায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। জেলা শিক্ষা অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলায় ২০১২ সালের ৩০ মে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাশ নেয়া শুরু হয়। ক্রমানয়ে জেলার মাধ্যমিক, দাখিল ও কলেজসহ ২৮৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১টি করে ল্যাপটপ, ১টি প্রজেক্টর ও স্কিন সরবরাহ করা হয়েছে। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজন করে শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। শুরুতে কিছুদিন ভালভাবে ক্লাশ হলেও এর কিছুদিন যেতে না যেতেই মুখ থুবরে পড়ে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাশ নেয়া পদ্ধতি। এ পর্যন্ত জেলার ৮ শতাধিক শিক্ষককে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। প্রশিক্ষণ নেয়া শিক্ষকের মাধ্যমে ইন হাউজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেও তা মানেনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে বন্ধ হয়ে রয়েছে এই পদ্ধতিতে ক্লাশ নেয়া। পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র জিল্লুর রহমান জানান, কোনদিন মাল্টিমিডিয়ার ক্লাশ পায়নি। আমাদের কলেজে এই পদ্ধতিতে ক্লাশ নেয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা তাও জানি না। একই কথা জানান ওই কলেজের শিক্ষার্থী বোরহান আলী জানান, আগ্রহ থাকা সত্যেও আমরা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাশ করতে পারি না। কেন মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাশ হয় না তা জানি না। পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জুঁই আক্তার প্রামাণিক জানান, ভর্তি হওয়ার পর থেকে কোন দিন মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাশ করতে পারিনি। পঞ্চগড় সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাজরিন আক্তার জানান, কয়েকদিন মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাশ হয়েছিল। কিন্তু এখন আর হচ্ছে না। এদিকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষকরা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে নারাজ। কোন কোন শিক্ষক আর্থিক অভাবের কারণে ল্যাপটপ কিনতে পারছেন না বলেও জানা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেখা রাণী দেবী প্রথমে কৌশলে এড়িয়ে যান। পরে তিনি জানান, নতুন বছরের শুরু তাই এখনো মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাশ নেয়া শুরু হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যেই পুনরায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাশ নেয়া শুরু হবে। পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কানাই লাল কুন্ডু জানান, আমার কলেজে দুটি প্রজেক্টর রয়েছে। এর মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে গেছে। আর আইটি এক্সপার্ট না থাকায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাশ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। জেলা শিক্ষা অফিসার শঙ্কর কুমার ঘোষ জানান, আমরা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাশ নিতে নির্দেশ দিয়েছি। কিছু প্রতিষ্ঠানে ভালভাবেই মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাশ চলছে। সব উপকরণ থাকার পরও যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাশ নেয়া হচ্ছে না তদন্ত করে সেইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আশা করি কিছু দিনের মধ্যেই ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ক্লাশ শুরু করবে। সকল উপকরণ থাকার পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ভূমিকায় জেলার সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে তারা অবিলম্বে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাশ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন