বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর ক্ষত কাটিয়ে ১৫ লক্ষাধিক টন শীতকালীন সবজী উৎপাদনে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে কৃষিযোদ্ধাগন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২২, ২:০০ পিএম

বরিশালের বানরীপাড়ার প্লাবন ভ’মিতে কচুরিপানার ঢিবিতে ভাসমান সবজী চাড়া উৎপাদন কৃষি অর্থনীতিতে ব্যপক অবদান রাখছে।


ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত একের পর এ প্রকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলার কৃষি যোদ্ধাগন এবারো সবজি আবাদ এবং উৎপাদনেও বিশেষ অবদান রাখছে। দেশে উৎপাদিত প্রায় ২ কোটি টন শীত ও গ্রীস্মকালীন সবজির প্রায় ২০ লাখ টনই আসছে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলা থেকে। গত মাসের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভরকরে নজিরবিহীন প্রবল বর্ষনের পরেও এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে ১৫ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষে মাঠে মাঠে কাজ করছেন দক্ষিণাঞ্চরের কৃষি যোদ্ধাগন। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল লক্ষ্য অর্জনে আশাবাদ ব্যৗাক্ত করেছেন। তবে এজন্য প্রয়োজন প্রকৃতির সহায়তা। চলতি মাসে যদি বড় ধরনর কোন প্রকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেয়, তবে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও সবজি উৎপাদন লক্ষ অর্জন নিয়ে কোন সংশয় নেই বলে মনে করছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
পর্যায়ক্রমে আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে নিকট অতীতেও দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সবজির ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠছে দক্ষিণাঞ্চল। গত দেড় দশকে দক্ষিণাঞ্চলে সবজির আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে তিনগুনেরও বেশী। কৃষিবীদদের মতে, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত মানের সবজী বীজ সহ আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌছলে উৎপাদন প্রায় দ্বিগুনে পৌছান সম্ভব হবে।
এমনকি খোলা মাঠে ও বাড়ির আঙিনার পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে পতিত জমিতেও সবজির আবাদ বাড়ছে। আর দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের অনেক এলাকায় আবাদকৃত সবজির বীজ ও চাড়ার যোগান হচ্ছে বরিশাল ও পিরোজপুরের ‘ভাসমান বেড’ থেকে। যুগের পর যুগ ধরে বরিশালের বানরীপাড়া,উজিরপুর এবং পিরোজপুরের নাজিরপুর ও সদর উপজেলার কিছু অংশে কচুরীপানার ঢিপ তৈরী করে তার ওপর শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন ফসলের চারা তৈরী হচ্ছে। এ অঞ্চলের কৃষকদের উদ্ভাবিত সনাতন ও লাগসই প্রযুক্তির ‘সারজন পদ্ধতি’তে বিভিন্ন সবজির চারা তৈরী করে জলাবদ্ধ বিশাল এলাকার মানুষের আর্থÑসামাজিক অবস্থা সহ কৃষিÑঅর্থনীতিও অনেকটাই সচল রয়েছে। আর এ অঞ্চলে ভাসমান বেডে উৎপাদিত এসব সবজি চাড়া শুধু দক্ষিণাঞ্চলই নয় সারা দেশের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে বলে দাবী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের।
চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টন। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে কার্তিকের নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকার আগাম শীতকালীন সবজি সহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পরেও কৃষি যোদ্ধাগন পুনরায় রবি ফসল আবাদে মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন বাড়ীÑঘরের আঙিনায়ও বিপুল পরিমান সবজির আবাদ হচ্ছে। অগ্রহায়নের অকাল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলে শতাধীক কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হওয়ায় কৃষকরা মারাত্মক ধাক্কা খেলেও সে ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাড়াচ্ছে। ফলে শীতকালীন সবজির উৎপাদন ১৫ লাখ টন অতিক্রম করতে পারে বলেও আশাবাদি ডিএই।
দেশে রবি ও গ্রীষ্ম মৌসুমে ১০ লাক্ষাধিক হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ২ কোটি টনেরও বেশী সবজি উৎপাদন হচ্ছে। এরমধ্যে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলাতেই প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদ হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের লক্ষ্য অনুযায়ী হেক্টর প্রতি ২০.৬৪ টনের মত উৎপাদন হলে এবারো প্রায় ১৫ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন হবার ব্যাপারে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
শীতকালীন সবজি ছাড়াও প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টরে গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে আরো প্রায় ৫ লাখ টন শাক-সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। ফলে দেশে উৎপাদিত ২ কোটি টন শাক-সবজির প্রায় ২০ লাখ টনের যোগান দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার কৃষিযোদ্ধাগন।
ইতোমধ্যে লালশাক, পালংশাক, সিম, ফুলকপি, বাধা কপি, শালগম, গাজর ও মুলা সহ বিভিন্ন ধরনের আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে এসেছে। তবে এর বাইরে সাম্প্রতিক প্রবল বর্ষনের ধকল কাটিয়েও লাউ সহ বেশ কিছু বারমাসি সবজীও বাজারে রয়েছে। তবে এবার অগ্রহায়নের অকাল বর্ষণের রেশ ধরে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় কিছুটা বেশী। কৃষকরা এবার কিছুটা বেশী দাম পেলেও অগ্রহয়নের বর্ষনে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘দেশে গত বছর প্রায় ১ কোটি ৯৮ লাখ টনের মত শীতকালীন সবজী উৎপাদন হয়েছে। দেশে উৎপাদিত সবজি ‘অভ্যন্তরীন পূর্ণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে’ বলে আশা করছে কৃষি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। ডিএই’র মতে বর্তমানে ‘বিশে^র প্রায় ১১৪টি দেশে বাংলাদেশের কৃষি পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। এরমধ্যে শীতকালীন সবজীই অন্যতম’। এ বাজার আরো সম্প্রসারনে সরকার দেশে সবজী আবাদ বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রনালয়।
এদিকে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট Ñবারী’ মাঠ পর্যায়ে গবেষনা কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যসব ফসলের মত বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজীরও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এমনকি বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় যে ভাসমান ঢিবিতে সবজি বীজ সহ বিভিন্ন ফসল আবাদ হচ্ছে, বারি’র বিজ্ঞানীগন সে ক্ষেত্রেও আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাচ্ছেন। ফলে কৃষকগন আরো আস্থা এবং নির্ভরতা সাথেই ভাসমান বেড পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে মনযোগী হচ্ছেন। এরফলে প্লাবন ভ’মিতে অধীক ফসল উৎপাদনও সম্ভব হচ্ছে। এতেকরে কৃষকগন লাভবান হচ্ছেন।
তবে মাঠ পর্যায়ে বারী উদ্ভাবিত বউন্নত বীজ সহ অনেক প্রযুক্তিরই কাঙ্খিত সম্প্রসারন ঘটছে না। অথচ বারি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে পৌছলে, দেশ কৃষিতে আরো এগিয়ে যাবার পাশাপাশি রপ্তানী বাজার সম্প্রসারনেরও সুযোগ ঘটবে বলে মনে করছেন কৃষিবীদগন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন