আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিজনবর্গকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। ( সূরা তাহরীম : ৬)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্তনি পার্থিব জীবনের শোভা মাত্র। (সূরা কাহাফ : ৪৬)।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। যদি প্রশ্ন করা হয় কোন শিক্ষা? পরিস্কার জবাব, অবশ্যই সুশিক্ষা। আদর্শ ও চরিত্রবান এবং দেশপ্রেমিক সন্তান গঠনে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ( হে রসূল!) আপনি জিজ্ঞাসা করুন, যারা জানে, আর যারা জানেনা, তারা কি এক সমান হতে পারে? যারা বুদ্ধিমান,শুধু তারাই ভেবে দেখে এবং উপদেশ গ্রহণ করে। ( সূরা যুমার : ৯)। হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, তোমাদের সন্তানদের তিনটি গুণের শিক্ষা দাও। ১. তোমাদের নবীর ভালোবাসা ২. তাঁর আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ভালোবাসা। ৩. কুরআন শরীফের তিলাওয়াত। কেননা, কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি সম্মানিত নবী ও সুফিদের সাথে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় থাকবে। যেদিন এটা ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। ( আল জামে আস-সগীর : পৃষ্ঠা-২৫, হাদিস : ৩১১)।
সন্তানদের সুশিক্ষার প্রথম ধাপ হলো জন্মের পরে তার একটি সুন্দর নাম রাখা। এটা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার একান্ত কর্তব্য। প্রত্যেক ব্যক্তির নাম তার চরিত্রের উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে ইসলামে নামের গুরত্ব অপরিসীম। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আবু বকর যায়েদ (রহ.) লিখিত ‘তাসমিয়াতুল মাওলুদ’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, আমরা স্বভাবতই দেখি ব্যক্তির নামের সাথে তার চরিত্রের চনচলতা পাওয়া যায়। যে ব্যক্তির নামের অর্থে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রেও গাম্ভির্যতা পাওয়া যায়। খারাফ নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্র খারাফ হয়ে থাকে। আর ভালো নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্র ভালো হয়ে থাকে।
সন্তানদের নেক ও ভাগ্যবান করে গড়ে তোলা একদিকে যেমন পিতা-মাতার দীনি দায়িত্ব, তেমনি সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনও তাদের অধিকারভুক্ত ব্যাপার। প্রকৃতপক্ষে সন্তানদের অধিকারসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হলো, অভিভাবকগণ অত্যন্ত হিকমত, চেন্তাÑভাবনা,ধৈর্য, কর্তব্য সচেতনতা, উদারতা, রুচিশীলতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও একাগ্রতার সাথে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। সন্তানদের এই অধিকার পূরণ করেই আপনি বা আপনারা আশা করতে পারেন যে, আপনার সন্তান আপনার জন্য শান্তির কারণ, সমাজের জন্য রহমতের মাধ্যম, জাতির জন্য গৌরবের আধার এবং দীনের মহা-সম্পদ হতে পারে।
সন্তান যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকবে তখন থেকে তাকে ইসলামী রীতি-নীতিতে চাল-চলনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। সন্তানকে ইসলামের শিক্ষা-দীক্ষায় পারদর্শী করতে সচেষ্ট হতে হবে। খাবার থেকে শুরু করে ঘুম পর্যন্ত কোথায় কি সুন্নাত খুব যত্নের সাথে শিখাতে হবে। কোথায় কোন দোয়া পড়তে হয় সেগুলোও একে একে মুখস্ত করিয়ে দিতে হবে। কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে। এক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে অবশ্যই পারদর্শী ও বিজ্ঞ হতে হবে। সন্তানদের সামনে পিতা-মাতা ও অভিবাবকদের উচিত ঝগড়া না করা। ধৈর্য ধারণ করা। তাদেরকে সদা সত্য বলা ও সত্য পথে চলার উপকারীতা, মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, পরনিন্দাচর্চা ও চোগলখুরির উভয় জাহানের ভয়াবহতা, হালাল গ্রহন ও হারাম বর্জনের লাভ ও ক্ষতি ইত্যাদি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। সন্তানদের সুশিক্ষার অন্যতম দিক হলো সাত বছর বয়সে তাকে নামাজের কথা বলা। হযরত আমর বিন শুয়াইব (রা.) তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, শিশুরা যখন সাত বছর বয়সের হয়, তখন তাদেরকে নামাজের আদেশ দাও। যখন দশ বছর বয়স হয়ে যায়,তখন যদি তারা নামাজে গাফলতি করে, তবে প্রহার করে হলেও নামাজে দাঁড় করাও এবং তাদের শয়নের জায়গা আলাদা করে দাও। ( আবু দাউদ ও তিরমিযী শরীফ)।
রাস্তায় বের হলে ছোট-বড় সকলকে সালাম দেওয়া, মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা, পিতা-মাতা, পীর-উস্তাদকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করা- এসব মহৎ গুণের কথা সন্তানদের শিখাতে হবে। কি করলে সন্তানের উপকার হবে আর কি করলে ক্ষতি হবে এ ব্যাপারে পিতা-মাতাকে অবশ্যই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সন্তানদের সৎ, চরিত্রবান ও পিতা-মাতার অনুগত সন্তান হিসেবে কবুল করুন। তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাওফীক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) জামে মসজিদ, আলমবাগ,নতুন জুরাইন,ঢাকা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন