ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জার্মানি ইউক্রেনকে তার নিজস্ব হাউইটজার এবং একাধিক রকেট লঞ্চার সহ কিছু অস্ত্র পাঠিয়েছে, যেগুলি রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে উপযোগিতার প্রমাণ দিয়েছে। এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মান সরকারের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসন্ন। দেশটি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহকারী লাভজনক নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইন প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। তবে কিছু লক্ষণ বলছে যে, জার্মান সমাজ ইউক্রেন যুদ্ধে ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। অক্টোবরে জরিপ প্রতিষ্ঠান সেমাস-এর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানদের ৪০ শতাংশ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বিশ্বাস করে যে, ন্যাটো রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উস্কে দিয়েছে। একসময় কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির অংশ ছিল এমন প্রদেশগুলিতে এই মনোভাবের হার ৫৯ শতাংশ।
সেমাসের সমীক্ষার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা এই মত পোষণ করেন যে, ইউক্রেন ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ এবং মোটামুটি একই সংখ্যক এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ^াস করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র জৈবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউক্রেনের মাটিতে গোপন গবেষণাগার স্থাপন করেছে। এই জরিপে এপ্রিল মাসের তুলনায় বর্তমানে রাশিয়া-বান্ধব বা রাশিয়া সাথে সমঝোতাপূর্ণ মতামতের উত্তরদাতাদের ভাগ বেড়েছে। তবে সমীক্ষায় শুধু জার্মানিতেই ইউক্রেন-ক্লান্তি বাড়েনি, বেড়েছে ইউরোপের অনান্য দেশেও। ইতালিতে, ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর জন্য জনসমর্থন প্রায় ৪১ শতাংশের কাছাকাছি, জার্মানিতে ৫৭ শতাংশ এবং ফ্রান্সে ৬২ শতাংশ। সেøাভাকিয়া, বুলগেরিয়াতে সংশয় বিরাজ করছে যার পার্লামেন্ট এটি সত্ত্বেও কিয়েভে সামরিক সরবরাহ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং হাঙ্গেরি বর্তমানে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তগুলি থেকে দূরে রয়েছে। গ্রীসে ২৮ শতাংশ ইউক্রেন-রাশিয়া সঙ্ঘাতের জন্য ন্যাটোকে দায়ী করে এবং বুলগেরিয়ায় এর সংখ্যা ৪৪ শতাংশ।
যুদ্ধ এবং বিশেষ করে জ্বালানি মূল্য ও মূল্যস্ফীতির উপর এর প্রভাব বিশ^ জুড়ে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। প্রাগে ২৯ অক্টোবর ইউক্রেনের সমর্থনে ইইউপন্থী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ৫ নভেম্বর হাজার হাজার মানুষ কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্য এবং শান্তির আহ্বান জানিয়ে রোমে মিছিল বের করে। জার্মানিতে যুদ্ধ এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের বিরুদ্ধে সমাবেশ এবং ধর্মঘট ঘটছে। ব্যপক মন্দার মধ্যে ইইউ সরকারগুলি গণমুখি আন্দোলনকারীদের কাছ থেকেও একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। ইতালি এবং সুইডেনের সাম্প্রতিক নির্বাচন, যেখানে উগ্র ডানপন্থী দলগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে জয় লাভ করেছে, ইউরোপের সরকারগুলির জন্য একটি সতর্ক সংকেত। ফলে, যদি বার্লিন কিয়েভের প্রতি সমর্থন আরও কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়, তাহলে ইইউ-এর অন্যান্য দেশগুলিও দ্রুত তা অনুসরণ করবে। সূত্র: আলজাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন