সময়টা ২৫ নভেম্বর ২০২০। ফুটবলের কিংবদন্তী ডিয়াগো ম্যারাডোনা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমালেন অনন্তলোকে। জাতিগত ভাবে আর্জেন্টাইন হলেও তাকে বেধে রাখা যায় নি কোন মানচিত্রে। আজও গ্রাম বাংলায় এই ফুটবলের জাদুকরের দেশ আর্জেন্টিনাকে অভিহিত করা হয় ‘ম্যারাডোনার দেশ’ হিসেবে। মেক্সিকোতে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের এই নায়ক, এইবার রক্ত-মাংসের শরীর নিয়ে মাঠে থেকে অনুপ্রেরণা দিতে পারছেন না আলবিসেলেস্তাদের। কিন্তু তিনি ঠিকই আছেন আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে, কোচ লিওনেল স্কালনির পাশে, মেসি-মারিয়াদের হৃদয়ে। নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে গেলেও খ্যাপাটে এই ফুটবলারের কি মরণ আছে? হয়তো বা ইশ্বরের হাত দিয়ে ঠিকই আশীর্বাদ করবে আলবিসেলেস্তার মাঠের সৈনিকদের। আজ আজ রাত ১টায় লুসাইল স্টেডিয়ামে সি গ্রæপের আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো ম্যাচে, সেই হাত খালি চোখে দেখা যাবে না, কেবল অনুভব করা যাবে।
ম্যারাডোনা শারীরীকভাবে বিগত হওয়ার আজ দুই বছর একদিন। ঠিক এই মুহূর্তেই কেন জানি আর্জেন্টাইনদের খুবই দরকার তাকে। কোপা আমেরিকার ২০১৯ সালের আসরে ব্রাজিলের বিপক্ষে হারের পর ৩৬ ম্যাচে অপারাজিত ছিল আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপের গ্রæপের প্রথম ম্যাচে সউদীর বিপক্ষে হেরে সেই স্বপ্নযাত্রায় ছেদ আসে লিওনেল মেসিদের। অথচ এই ম্যাচের আগে যে আর্জেন্টাইন ঘোর বিরোধী কেউও ভাবেনি ম্যাচটা মেসিরা ২-১ ব্যবধানে হেরে যাবে। আজ থেকে ঠিক ৩২ বছর আগে ম্যারাডোনাও একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। মেক্সিকো বিশ্বকাপ জিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিউন হয়ে ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনা গিয়েছিল ইতালি বিশ্বকাপে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ম্যারাডোনা, ক্যানাজিয়ারা প্রথম ম্যাচেই হেরে বসল ক্যামেরুনের বিপক্ষে। তবে আলবিসেলেস্তারা ঠিকই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল। শুধু তাই নয়, শেষ ষোলতে ব্রাজিল, কোয়ার্টার ফাইনালে যুগোসøাভিয়া ও সেমিতে স্বাগতিক ইতালিকে হটিয়ে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা ছুয়ে দেখার দ্বারপ্রান্তে পৌছে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে জার্মানির বিপক্ষে অন্তিম মুহূর্তের বিতর্কিত পেনাল্টিতে হেরে যায় দলটি।
তাই আজ রাতে মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঠে নামার আগে আশাহত হচ্ছেন না মেসিরা। তবে ইতালিতে ম্যারাডোনা যা করে দেখিয়েছিলেন, মেসির তা করতে হলে পার করতে হবে কিছু বাধা। আপাতত মেক্সিকো আর পরের ম্যাচে পোল্যান্ডের দুর্গ জয় করতে হবে। সুদীর্ঘ ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ শিরোপা খরা কাটাতে প্রস্তুত মেসি-মারিয়ারা। কিন্তু প্রথম ম্যাচের অপ্রত্যাশিত হার, সেই স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ হওয়ার উপক্রম হলেও আশার প্রদীপতো একেবারে নেভেনি। ম্যাচের আগে দুশ্চিন্তার কারন হলো, পায়ের পেশিতে ব্যথা অনুভব করছেন মেসি, সেই সাথে আগের ম্যাচে ফুলে ওঠা গোড়ালি তো আছেনই। তবে জীবন-মরণ লড়াইয়ের এই ম্যাচে মেসি শঙ্কা জয় করে ফিরবেন, এমনটাই আশা আলবিসেলেস্তাদের। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে আজেন্টাইন গণমাধ্যম মুন্ডো আলবিলেস্তে। ভালো খবরই দিচ্ছে তারা। গণমাধ্যমটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, পায়ের পেশির ব্যথা নিয়ে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছেন মেসি। আশা করা যাচ্ছে পরবর্তী ম্যাচে খেলবেন এলএম১০।
কাতার বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার আগে-পরে ইনজুরি তালিকা যোগ হয়েছেন বেশ কজন আর্জেন্টইন ফুটবলার। ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ মিস করেছেন লো সেলসো। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই মিডফিল্ডারের বিকল্প আছে স্কালোনির হাতে। বয়স ও অভিজ্ঞতা কম বলে শেষ ম্যাচে এনজো ফের্নান্দেজকে মাঠে নামনি আর্জেন্টাইন বস। তবে মেক্সিকোর বিপক্ষে এই বেনফিকা মিডফিল্ডারের খেলার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে বেঞ্চে বসাতে হতে পারে সেন্টারব্যাক ক্রিস্টিয়ান রোমেরোকেও! অথচ এই ডিফেন্ডারকে কেন্দ্র করেই সউদী ম্যাচের রক্ষণের কৌশল সাজিয়েছিলেন স্কালোনি।
মেক্সিকোর বিপক্ষে আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত ৩৫ ম্যাচে মোকাবেলা করে জিতেছে ১৬ বার আর হেরেছে মাত্র ৫টা ম্যাচ। আরও আশার বাণী হচ্ছে বিশ্বকাপে তিনবারের মোকাবেলায় (১৯৩০, ২০০৬, ২০১০) শতভাগ জয় আলবিসেলেস্তাদের।
এদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচটা পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে মেক্সিকো। যথারীতি তুখোর ফর্মে আছে তাদের গোলরক্ষক ওচোয়া। মধ্যমাঠ তাই মেক্সিকানদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা। হেরেরা, আলভারেজ ও গুরদাদো এদের মাধ্যে আছে মেধা ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণ। তিনজনই খেলেন ইউরোপের বড় লিগে। এমনকি ফরোয়ার্ড লাইনের জেমিনেস ও লোযানও বিশাল দুই নাম ইউরোপেরে ফুটবল বাজারে। তবে উলভসে খেলা হেমিনেজ চলতি মৌসুমে ভুগছেন গোল খড়ায়। প্রথমবারের মত আর্জেন্টাইনদের বিপক্ষে বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে মেক্সিকোর সবচেয়ে বর হাতিয়ার ম্যানেজার জেরার্ডো টাটা মার্টিনো। এই বর্ষীয়ান কোচ কোন দেশের নাগরিক জানেন? আর্জেন্টিনার! মার্টিনো তার প্রিয় ৪-৩-৩ কৌশলই সাজাবেন জন্মভ‚মির বিপক্ষে। মেসিরা কি পারবেন ম্যারাডোনা হয়ে উঠতে নাকি মার্টিনোর জাদুতে মেক্সিকোর প্রথম? জানার জন্য অপেক্ষে করতে হবে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন