বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বাউবি’র যুগান্তকারী পদক্ষেপ

ড. মো. আজিজুল হক

| প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৬ এএম

উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ পদ্ধতির একমাত্র সরকারি বিশ^বিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় বা বাউবি পর্যায়ক্রমিকভাবে জনমানুষের আকাক্সক্ষা ও চাহিদা বিবেচনায় রেখে যুগোপযোগী বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সে ধারাবাহিকতায় মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত ও অধিকতর যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য চালু হচ্ছে ব্যাচেলর অব মাদরাসা এডুকেশন। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ হতে মাদরাসায় শিক্ষিত জনশক্তি বিশেষত মাদরাসা শিক্ষক ও বিদ্যালয়সমূহের ধর্মীয় শিক্ষকদের জন্য বিশেষায়িত প্রোগ্রাম ব্যাচেলর অব মাদরাসা এডুকেশন চালু করতে বাউবি কর্তৃপক্ষ ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বাউবি ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর মানুষের দোরগোড়ায় সহজে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার জন্য শিক্ষাবিস্তার কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশে তৃতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সপ্তম বৃহৎ বিশ^বিদ্যালয়। এসএসসি হতে পিএইচডি পর্যন্ত ৭৯টি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রোগ্রামে প্রায় দশ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। বহুমুখী শিক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমে অধিকতর গণমুখী ও জীবনঘনিষ্ট করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে একটি সুপ্রশিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল জাতি গড়ে তুলতে বাউবি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বর্তমানে সারাদেশে ৭৯৫৪টি এমপিওভুক্ত মাদরাসায় ১,৫০,৮০০ জনের অধিক শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়াও ১৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা রয়েছে। তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত মাদরাসা শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ খুবই সীমিত। এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই) নামক মাত্র একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি আলিয়া স্তরের মাদরাসাসমূহের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে মাদরাসাসমূহের শিক্ষক স্বল্পতা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছুটি দিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনীহা এবং প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের হোস্টেলে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক হওয়ায় খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন।

সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষাকে সরকার স্বীকৃতি দিয়ে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার ডিগ্রির সাথে সমমান ঘোষণা করেছে। কওমী মাদরাসাসমূহের সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে মাস্টার্স সমমান ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মাদরাসা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিকল্পে মাদরাসাসমূহকে ইসলামী আরবী বিশ^বিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। মাদরাসার দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিলকে যথাক্রমে এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও মাস্টার্স সমমান করা হয়েছে।

বাউবি কর্তৃপক্ষ মাদরাসা শিক্ষক ও স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষকদের পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করার প্রয়াসেই চালু করেছে ব্যাচেলর অব মাদরাসা এডুকেশন। সারাদেশের ১৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বর্তমান প্রোগ্রামটি পরিচালিত হবে। স্টাডিসেন্টারসমূহ হলো; বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গাজীপুর, সরকারি আলিয়া মাদরাসা ঢাকা, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া (কামিল) মাদরাসা চট্টগ্রাম, ইসলামিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা কুমিল্লা, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা, মোমেনশাহী ডিএস কামিল মাদরাসা ময়মনসিংহ, সরকারি মুস্তফাবিয়া আলিয়া মাদরাসা বগুড়া, ধাপ সাতগড় বায়তুল মুর্কারম মডেল কামিল মাদরাসা রংপুর, রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদরাসা, পাবনা কামিল মাদরাসা, যশোর আমিনীয়া কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা, সবজাননেছা মহিলা কামিল মাদরাসা ফরিদপুর, খুলনা আলিয়া মাদরাসা এবং সাগরদী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা বরিশাল। বাউবির ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের অধীনে সারাদেশে এ প্রোগ্রামটি পরিচালিত হবে। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মাদরাসা শিক্ষকগণ তাদের জন্য সুবিধাজনক স্টাডিসেন্টারে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। এতে মাদরাসা শিক্ষকগণের আক্ষেপ দূর হবে এবং নিজদের প্রশিক্ষিত করে অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করে আগের তুলনায় উন্নত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতে সফল হবেন বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় একটি স্বতন্ত্র প্রকৃতির পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে ঝরে পড়া এবং কর্মজীবী শিক্ষার্থীদের পুনরায় শিক্ষা ক্ষেত্রে ফিরিয়ে এনে জনশক্তিতে পরিণত করার নেপথ্যে বাউবির ভূমিকা অসাধারণ। বাউবি উন্মুক্ত ও দূর শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে থাকে তবে বর্তমানে ক্যাম্পাস ভিত্তিক কিছু প্রোগ্রামও পরিচালিত হচ্ছে। বাউবি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ নানাবিধ টেকনোলজি ব্যবহার করে উন্মুক্ত ও দূর শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৮০টি উপ আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের শহর ও গ্রাম গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সকল বয়সের সকল পেশার এবং সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দিচ্ছে।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহজে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনবল। তাই বাউবি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশীয় জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে সদা সচেষ্ট। বাউবি বিশ^াস করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ একটি কার্যকর পদক্ষেপ। এই বিনিয়োগের সুফল প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন পরিলক্ষিত না হলেও মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে সোশ্যাল ক্যাপিটাল, হিউমান ক্যাপিটাল ও ফিনানশিয়াল ক্যাপিটাল অর্জনে এটি একটি অত্যাবশ্যক উপাদান। তাই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ একদিকে যেমন ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করবে, অন্যদিকে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে তাঁর যোগ্যতার উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধন করবে। প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রায় প্রশিক্ষিত কর্মীর বিকল্প নাই। এজন্য বাউবির পদক্ষেপ সময়োপযোগী।

লেখক: আঞ্চলিক পরিচালক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন