চলতি শুস্ক মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মায় নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো, বলগেট ও বড় ট্রলার চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দূরদূরান্ত হতে আসা এসব পণ্যবাহী জাহাজ নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। ফলে নৌবন্দরের শুঙ্ক আদায়ও কমে গেছে। অন্যদিকে, এসব নৌযান হতে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে। সরেজমিনে গতকাল এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত সেপ্টেম্বরেই পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযানগুলো নাব্যতা সঙ্কটের কবলে পড়ে সিএন্ডবি ঘাটের বন্দরে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বর্তমানে এই দুরাবস্থা চরমে পৌঁছেছে। নাব্য সঙ্কট রক্ষায় কমপক্ষে ১০/১৫ স্থানে বিআইডব্লিউটি-এর ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন করা জরুরি হয়ে পড়ছে। তবে খনন কাজ পরিকল্পিতভাবে না হলে, অল্প দিনের মধ্যেই নৌচ্যানেলগুলো নতুন বালু এসে ভারাট হয়ে যাবে বলে ঘাটের ছোট ও মাঝারি নৌযান মালিকরা মনে করেন।
দক্ষিণবঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়ীক পণ্য আনা নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নৌবন্দরটি শত বছরের প্রাচীন। ২০১৭ সালে সরকার এটিকে তৃতীয় শ্রেণির নৌবন্দর হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে। সিলেট থেকে কয়লা চট্টগ্রাম থেকে সিমেন্ট, রাজশাহী হতে বালু, ভারতের গরু ও চালসহ চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মুন্সিগঞ্জ, কমলঘাট, মিরকাদিম থেকে এই নৌপথেই চাল আমদানি হয়। নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে প্রচুর সিমেন্টবাহী জাহাজ ও কার্গো এই বন্দরে এসে খালাস করা হয়। বর্তমানে নদীতে নাব্যতা না থাকায় এবং অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় এসব পণ্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছে না। যেগুলো মাল খালাস করেছে সেগুলো ঘাটে আটকা পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নৌবন্দরে নৌযান ভীড়তে না পেরে ঘাট থেকে অনেক দূরে ডিক্রীচর, ভূঁইয়াবাড়ি ঘাট, খুশির বাজার, পিয়াজখালী ঘাট, হাজিগঞ্জের চরহাজীগঞ্জের এলাকা, চরন্দ্রাসনের এমপিডাঙি ও গোপালপুরসহ বিভিন্নস্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো বলগেট ও বড় ট্রলার নদীর তীরে ভীড়ানো রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মেঘনাঘাট হতে আগত সিমেন্টবাহী জাহাজের মাস্টার মো. সাকিল সেখ বলেন, চড়ে এসে ঠেকে গেছি। আমার জাহাজে ১২ হাজার বস্তা সিমেন্ট ধারণ ক্ষমতা। কিন্তু পর্যাপ্ত গভীরতা নেই বলে ৮ হাজার বস্তা সিমেন্ট আনতে হয়েছে। ৪ হাজার বস্তা সিমেন্ট কম আনতে হয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার চরের অস্তিত্ব মিলছে। ৩ দিনের পথ আসতে ৫ দিন সময় লেগে গেছে। নানান বাঁধায় বাড়ছে স্টাফ খরচও।
এমবি ‘শতনীড়’ জাহাজের মাস্টার মো. কামাল বলেন, নাব্যতা না থাকায়, জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ডুবো চড়ে ঠেকে যায়। চুকান আটকে যায়। এতে চালু অবস্থায় জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, অন্তত গড়ে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু সেখানে কোথাও কোথাও দুই-তিন হাত পানি রয়েছে।
এখন জরুরি দরকার ড্রেজিংয করা। ড্রেজিংয়ের কাজে নিযুক্তরা বলেন, ড্রেজিংয়ের পরপরই আবার নতুন পলি ও বালু এসে ভরে যায়। পানিতে প্রচুর পলি থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ফরিদপুর নৌবন্দরের পন্য খালাসে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান টাইগার ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো. আ. হাকিম বলেন, প্রায় ৮ হাজার কুলি শ্রমিক এই নৌবন্দরে কাজ করতো। এর মধ্যে অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীও রয়েছেন। জাহাজ কার্গো না আসায় তারা বেকার হয়ে পড়ছেন।
পদ্মা ট্রান্সপোর্টের মালিক রহমান জানান, বছরের ৫ মাস এখানে পানি কম থাকে বলে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়। ফরিদপুরের সিএন্ডবিঘাট হতে শুল্ক আদায়কারী বিআইডব্লিউটি-এর কর্মচারী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বন্দরে জাহাজ, কার্গো বলগেট, ট্রলার ভিড়তে না পারায় তাদের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটি-এর সংশ্লিষ্ট পোর্টঅফিসার বলেন, নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌচ্যানেলে ড্রেজিং কাজ চলছে। তবে এ ঘাটটি এখনও বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই ঘাট পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করলে এই সঙ্কট কেটে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন