রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব যাত্রা শুরু করেছে। সাইবার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণসহ ডিজিটাল তথ্য প্রমানাদি সংগ্রহ করে দ্রুত পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য এই ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক আনুষ্ঠানিকভাবে এ ল্যাবের উদ্বোধন করেন।যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাসিস্ট্যান্স (এটিএ), ইউএস অ্যাম্বাসি’র সহযোগিতায় ল্যাবটি আরএমপি’র নির্মাণাধীন সদরদপ্তর (সিএন্ডবি মোড়)-এ সাইবার ক্রাইম ইউনিট ভবনে স্থাপন করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, বর্তমান টেকনলজি নির্ভরযুগে সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিত্য নতুন অপরাধ সংগঠিত করছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল থানাগুলোতে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি তদন্তে আরএমপি, সাইবার ক্রাইম ইউনিট নিয়মিতভাবে সহযোগিতা করছে। আরএমপি ডিজিটাল ডিভাইস ও সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ ও অপরাধীদের শনাক্তকরণসহ আলামতের সত্যতা নিরুপণের জন্য সিআইডি ও পিবিআই এর ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের সহায়তা নিতো। যুক্তরাষ্ট্রের এন্টি টেরোরিজম এসিসট্যান্সের (এটিএ) সহযোগিতায় আরএমপিতে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও ফরেনসিক সফটওয়্যার সম্বলিত অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এখন থেকে আরএমপিতেই এই কাজগুলো করা হবে। এর ফলে অপরাধ সনাক্তকরণ সহজ হবে এবং কম সময়ে অধিক মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই ল্যাব স্থাপনের সহায়তা করায় তিনি ইউএস অ্যাম্বাসি-এবং এটিএ এর প্রশিক্ষকদের ধন্যাবাদ জানান। সাইবার ক্রাইমের ইউনিটের সহকারি পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী, পিপিএম, বলেন, এই ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের মাধ্যমে কম্পিউটার ও ডিজিটাল স্টোরেজ মিডিয়া থেকে গোপনীয় ডেটা উদ্ধার ও বিশ্লেষন করা যাবে। থাম্ব ড্রাইভ, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ এবং অন্য পদ্ধতিগুলোর মতো বৈদ্যুতিক ডিভাইস দিয়ে তথ্য এবং অন্যান্য মূল্যবান ডেটা সংরক্ষণ বা স্থানান্তর করা যাবে। অপরাধ ঢাকতে বা আলামত গায়েব করতে মুছে ফেলা তথ্য, সোআপ ফাইল, মেমোরি ডাম্প, হার্ড ড্রাইভে ফাঁকা ফোল্ডার, প্রিন্ট স্পুলার ফাইলের ফরেনসিক পরীক্ষা করবে আরএমপি’র ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব। মোবাইল ফরেনসিকের মধ্যে রয়েছে অপরাধ কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও যে কোনো ডিভাইস। ফরেনসিকের মাধ্যমে মোবাইল ফোন, ট্যাব, জিপিএস, ডিভাইস, ড্রোন ইত্যাদি থেকে ডেটা উদ্ধার ও বিশ্লেষণ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব ডেটা উদ্ধার ও বিশ্লেষণ করবে তার মধ্যে রয়েছে-এসএমএস এবং এমএমএস বা এ-জাতীয় মুছে ফেলা ডেটা, কল লগ ও যোগাযোগের তালিকা, ফোন আইএমইআই ও ইএসএন সম্পর্কিত তথ্য, ওয়েব ব্রাউজিং, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেটিংস, জিওলোকেশন তথ্য, ই-মেইল এবং ইন্টারনেট মিডিয়া ও ফর্ম, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং পরিষেবা, পোস্টসহ বিভিন্ন ডার্ক ও ডিপ ওয়েব সাইটের হোয়াইট কলার ক্রিমিনালদের অপরাধের আলামতসমূহ। এই ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের মাধ্যমে অ্যাপ ডেটা, মেসেঞ্জার ডেটা ও ক্লাউড ড্রাইভে সংরক্ষিত ডেটাসমূহ এ্যানালাইসিস করে সকল অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য প্রমানাদি সংগ্রহ করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাক, বিপিএম, পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক অ্যান্ড ডিবি) সামসুন নাহার, বিপিএম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. সাইফউদ্দীন শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাসিস্ট্যান্স (এটিএ) এর প্রশিক্ষকবৃন্দ-সহ আরএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন