শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সামরিক সহায়তার আবেদন বেসামরিক সরকার প্রধানের

মিয়ানমারে ২ হাজার গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধা নিহত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:১৪ এএম

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়া জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিয়ানমারে কমপক্ষে ২ হাজার গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সমান্তরাল বেসামরিক সরকারের প্রধান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মিত্রদের কাছে সামরিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বেসামরিক সরকারের প্রধান এই মন্তব্য করেন এবং বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। গত বছরের ১ ফেব্রয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রক্তপাতহীন সেই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং। অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত অং সান সুচি ও তার দল এনএলডির বহু নেতাকর্মীকে গৃহবন্দি বা কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। পরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইয়ে গঠিত হয় ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। এটি মিয়ানমারের সামরিক সরকারবিরোধী ছায়া সরকার বলেও পরিচিত পরিচিত। মূলত এই ছায়া সরকারের অধীনেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থিরা। রয়টার্স বলছে, ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের প্রশাসনের অবশিষ্টাংশের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন ডুয়া লাশি লা। মিয়ানমারের একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে সম্প্রতি রয়টার্স নেক্সট-এ কথা বলেন তিনি। ডুয়া লাশি লা মিয়ানমারের সাবেক একজন শিক্ষক ও আইনজীবী। সামরিক অভ্যুত্থানের পর উত্তর মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে তিনি তার বাড়ি থেকে পরিবারের সাথে পালিয়ে যান। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা (মৃত্যুকে) মূল্য হিসাবে বিবেচনা করি যেটি আমাদের অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।’ অবশ্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাকে ও তার সহকর্মীদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং নাগরিকদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু লাশি লার এই সমান্তরাল বেসামরিক সরকারের মিয়ানমারে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। এছাড়া পিপলস ডিফেন্স ফোর্স নামে পরিচিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীও দেশজুড়ে তাদের মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ডুয়া লাশি লা বলেন, ‘আমি কখন আমার জীবন বিসর্জন দেব তা আমি জানি না। এটি ঈশ্বরের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আমি ইতোমধ্যেই আমার দেশের জন্য যে কোনও কিছু ত্যাগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি অশান্তির মধ্যে রয়েছে। প্রায় এক দশকব্যাপী চলে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কার্যত উল্টে দেওয়া হয়েছে এবং জান্তা সরকার দেশটিতে বিক্ষোভ দমন করতে মারাত্মক শক্তি ব্যবহার করেছে। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইয়ে ২ হাজার যোদ্ধা মারা যাওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের অন্যত্র আড়াই হাজারেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। প্রাণ হারানো এসব বেসামরিক মানুষের বেশিরভাগই বিক্ষোভে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা একটি মানবাধিকার গ্রুপ। গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধারা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে তার চেয়ে বেশি ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া, চীন এবং ভারতের মাধ্যমে সজ্জিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এমনকি বার্মিজ এই সেনাবাহিনী বোমা হামলা চালানোর জন্য যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করে। জাতিসংঘের মতে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এমনকি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো সামরিক হামলা যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। অবশ্য মিয়ানমারের জান্তা সরকার রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে তারা বলেছে, সেনাবাহিনীর চালানো এসব বিমান হামলায় বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয় না এবং তাদের সকল অপারেশনই ‘সন্ত্রাসবাদীদের’ আক্রমণের জবাবে চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে ডুয়া লাশি লা বলেন, বিরোধী যোদ্ধারা মিয়ানমারের প্রায় ২০ হাজার জান্তা সৈন্যকে হত্যা করেছে। যদিও স্বাধীনভাবে সংখ্যা এই নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ডুয়া লাশির ভাষায়, ‘আমাদের কাছে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র থাকলে বলা যায় যে- আমরা ছয় মাসের মধ্যে জিততে পারতাম। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ থেকে ইউক্রেন যেভাবে সহায়তা পাচ্ছে, সেই একই সহায়তা যদি আমরা পেতাম তবে যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে তাদের দুর্ভোগ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।’ অবশ্য গত মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সরকারপ্রধানরা মিয়ানমারকে শান্তি পরিকল্পনায় এগিয়ে যেতে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ‘সতর্কতা’ও জারি করেছেন। তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিরোধী বা সুশীল সমাজকে এই ধরনের পরিকল্পনায় অগ্রগতির জন্য সংশ্লিষ্ট করতে অস্বীকার করেছে। দুয়া লাশি লা বলেন, আলোচনার দরজা বন্ধ নয়, কিন্তু সামরিক বাহিনীকে বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে, রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর শপথ নিতে হবে এবং তাদের ক্ষমতার অধিকারী করা সংবিধান বাতিল করতে হবে। তিনি বলছেন, ‘তাহলে ... আমরা সম্ভবত সংলাপ করব।’ রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Rashed Sohel ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৫৯ এএম says : 0
এরকম অনেক দেশ আছে সরকার কর্তৃক নিপীড়িত দখলদারিত্বের নিপীড়িত এখন মিয়ানমার যোগ হল ফিলিস্তিন অনেক আগেই যোগ হয়েছে সিরিয়া যোগ হয়েছে বলতে গেলে আরো অনেক দেশ সঙ্গে এর জনগণ আজ নিপীড়িত
Total Reply(0)
Md Alfaz Hossen ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:০০ এএম says : 0
আহ
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন