শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গ্যাস সরবরাহ না বাড়ালে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সম্ভব নয় পিডিবি

প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : গ্যাস সরবরাহ না বাড়ালে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা বহাল রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আর পেট্রোবাংলা বলেছে, গ্যাসের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, তাতে করে চাহিদা মোতাবেক গ্যাস বিতরণ করাটা কঠিন হবে। এক্ষেত্রে সার-কারখানা, বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় গ্যাসের ঘাটতি রেখে চাহিদা মোতাবেক গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
চলতি সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা আসে। তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ সেচের স্বার্থে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা বহাল রাখতে উভয় প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে জ্বালানি সরবরাহে যাতে কোন ধরনের নাশকতা কিম্বা স্যাবোটাজের ঘটনা না ঘটেÑ এজন্য নিরাপত্তা চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি হতে সেচ মৌসুম শুরু হয়। যা মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত চলে। বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বৈঠকে জানা হয়, ২০১৫ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৭ হাজার ৫৭১ মেগাওয়াট। চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের এই চাহিদা ধরা হয়েছে ৮ হাজার মেগাওয়াট। এই চাহিদা পূরণ করতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বরোপ করা হয় বৈঠকে।
এদিকে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হয়েছে-২০১৫ সালের তুলনায় চলতি বছর নতুন সেচ সংযোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ হাজার ১০৮টি। গত সেচ মৌসুম মৌসুম পর্যন্ত সংযোগ সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৬টি। চলতি বছর তা দাঁড়াবে ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৭৪টিতে। এই হিসাবে সেচকাজে ব্যবহৃত মোট লোডের ডমোন ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৭১ মেগাওয়াট। এছাড়াও সেচ সংযোগের জন্য অপেক্ষামান আবেদনের সংখ্যা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ১৪৯টি। এই অপেক্ষামান আবেদনসমূহের লোডের চাহিদা ধরা হয়েছে ১১০ মেগাওয়াট। সেচ সংযোগের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি)। গত বছর বিআরইবি’র মোট সেচ সংযোগ সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ৫২৬টি। চলতি সেচ মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটির ১১ হাজার ১০২টি নতুন সেচ সংযোগ ধরে মোট সেচ সংযোগের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৬২৮টি। এজন্য বিআরইবি মোট লোড ধরেছে ১ হাজার ৮৭৭ মেগাওয়াট। বাকী সেচ সংযোগগুলো হচ্ছে- বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), ওজোপাডিকো, ডিপিডিসি ও ডেসকো’র।
বৈঠকে সেচ মৌসুমে গ্যাসের ব্যাপারে জানানো হয়, ২০১৫ সালে এই সময়ের জন্য গ্যাসের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৫০ এমএমসিএফডি এবং পাওয়া যায় ১ হাজার ৯৭ এমএমসিএফডি। ঘাটতি ছিল ১৫৩ এমএমসিএফডি। চলতি সেচ মৌসুমে গ্যাসের প্রয়োজন ১৪শ’ এমএমসিএফডি। এক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রয়োজন ১ হাজার ২৬০ এমএমসিএফডি। গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেসব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ নির্বিঘœভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম সেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
একইভাবে বিউবো, রেলপথ বিভাগ, সড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে- চলতি সেচ মৌসুমে জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড যোগাযোগ করে জ্বালানি পরিবহন নিশ্চিত করবে। একই ধরনের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানিতেও।
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়, সেচে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের লক্ষ্যে ওয়েট এন্ড ড্রাই পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এছাড়াও চলতি সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেল পরিবহনের নিরাপত্তা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়।
বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে গ্রীড উপকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন, উপকেন্দ্রসমূহ সংরক্ষণ ও মেরামত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়। ওভার লোডেড সাব-স্টেশনসমূহ ও সঞ্চালন লাইন আপগ্রেডেশনের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পিজিসিবিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সভায় পিক আওয়ারে পানির পাম্প, ওভেন মেশিন, হিটার, ইস্ত্রির দোকান, ওয়েল্ডিং মেশিন ইত্যাদি বন্ধ রাখার ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সেচ পাম্পগুলোতে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে পিক আওয়ারে অর্থাৎ বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো জন্যও বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন