বর্তমান সময়ের অধিকাংশ মানুষই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন। যদিও পুরানো চুল পড়ে গিয়ে নতুন চুল গজাবে এটিই স্বাভাবিক, কিন্তু যখন কারো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়তে শুরু হয় এবং সে তুলনায় নতুন চুল গজায় না, তখন তা উদ্বেগজনকই বটে। এমন পরিস্থিতিতে শীঘ্রই একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ। চুল পড়া বা চুল পাতলা হওয়ার কারণ যত তাড়াতাড়ি সনাক্ত করা যাবে, তত জলদি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
প্রাভা হেলথ-এর চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিনা হক চুল পড়া নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, আমার কাছে বিভিন্ন রোগী আসে যাদের চুল পড়া, খুশকির আক্রমণ, চুলে ঘনত্ব কমে যাওয়া, রুক্ষ হয়ে পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, চুলের যত্নে অনেকেই বিভিন্ন হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন এবং এটি অনেক সময় চুলের যত্নের চেয়ে ক্ষতি বেশি করে। ঘন ঘন চুল রঙ করা, স্ট্রেইট করতে গিয়ে অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ করা, অতিরিক্ত বা নিম্নমানের স্প্রে ব্যবহার করা ইত্যাদি চুলের অনেক ক্ষতি করে। বিশেষ করে যারা মিডিয়ার সাথে জড়িত তাদের কাজের সুবাদে এসব করতেই হয়। তাই আমার সকল রোগীদের আমি প্রথমে সমস্যা নির্ণয় এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেই।
শুধু ডা. শারমিনা নন, সকল বিশেষজ্ঞই রোগীদের দুশ্চিন্তা ও অবহেলা না করে এমনটি করার পরামর্শই দেন। চুলের বিভিন্ন সমস্যার জন্য বিভিন্ন চিকিত্সা রয়েছে। তাদের মধ্যে প্লাজমা-সমৃদ্ধ প্রোটিন (পিআরপি) এবং মেসোথেরাপি হলো চুল পড়া প্রতিরোধ এবং নতুন চুল গজানোর জন্য বিশ্বব্যাপি ব্যবহৃত দুটি সর্বাধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি। প্রাভা হেলথসহ দেশের কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী এই সেবা দুটি নিতে পারবেন।
চুল বৃদ্ধির আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসায় পিআরপি একটি যুগান্তকারী সাফল্য। এই চিকিৎসায় রোগীর শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে মেশিনের মাধ্যমে কিছু উপাদান আলাদা করা হয়। অতঃপর প্লাজমাসমৃদ্ধ রক্ত একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে চুলের ফলিকলে ইনজেক্ট করা হয়। এই থেরাপি নতুন চুল গজাতে, ঘন করতে এবং চুল পড়া বন্ধে সাহায্য করে। থেরাপিকালীন চুলের ফলিকলগুলো বাড়ন্ত অবস্থায় থাকে, ফলে চুল ঘন, মজবুত ও লম্বা হয়। পিআরপি সাধারণত মাসে একবার করে ছয় মাস পর্যন্ত দিতে হয়। পরে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর চিকিৎসা চলতে থাকে। চুল বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকরা নির্ধারণ করেন যে চিকিৎসা কতদিন স্থায়ী হবে। এটি শতভাগ নিরাপদ এবং কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে যাদের চুলের ফলিকল ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্য পিআরপি ব্যবহার করা যাবে না।
অপরদিকে, মেসোথেরাপি বিশেষ এক থেরাপি। এই হেয়ার ইন্টেনসিভ থেরাপি অকালে চুল পড়া রোধে বিশেষ কার্যকরী। এটি ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, পেপটাইড (ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, দস্তা, সেলেনিয়াম, আয়রন ও পটাসিয়াম), ত্বকের কেরাটিন স্তরের উপাদান এবং অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা তৈরি একটি সিরাম। মেসোথেরাপি অসংখ্য ইঞ্জেকশন দ্বারা পরিচালিত একটি পদ্ধতি, যা মধ্যবয়স্কদের জন্য বিশেষ উপকারি। জেনেটিক্স, স্ট্রেস, ডায়েট বা দীর্ঘকালীন অসুস্থতার কারণে চুল পড়লে তা নিরাময়ের জন্য এই থেরাপি ব্যবহার করা হয়। এটি চুলের বিকাশের জন্য স্বাস্থ্যকর ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি শুষে নিতে মাথার ত্বককে সাহায্য করে। আধুনিক ট্রাইকোলজিতে চুলের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় সবচেয়ে জনপ্রিয় পন্থাগুলোর মেসোথেরাপি অন্যতম, যার মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় বাল্বগুলো সতেজ করে চুলের ফলিকলে পুষ্টি সরবরাহ ও খুশকি দূর করা হয়।
চুল পড়া প্রতিরোধে বাজারে বিভিন্ন পণ্য এবং বিভিন্ন থেরাপির ব্যবস্থা করেছে। তবে রোগীদের জন্য উপযুক্ত থেরাপিটি বেছে নেওয়াই শ্রেয়। পাশাপাশি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। সচেতনতাই পারে সেরা সমাধান প্রদান করতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন