৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ঢাকা সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির আলোকে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবিতে আলিম-উলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ ও মাদরাসা প্রধানদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মূল বক্তব্য,
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা’দ
সম্মানিত আলিম-উলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, মাদরাসা প্রধান, সাংবাদিক ও সুধীম-লী,
জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে আজ আমরা আপনাদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছি। আমরা লক্ষ্য করছি, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এক সুদূরপ্রসারী ষঢ়যন্ত্র চলছে। মাদরাসা শিক্ষাকে গলা টিপে হত্যার পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষাকে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষায় পরিণত করার অপপ্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে যেসকল যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে সেগুলোর সকল অর্জনকে ম্লান করে দিতে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এমনি মুহূর্তে স্বকীয়তা রক্ষার স্বার্থে মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মানুষের বিশ^াস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির আলোকে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জন করা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারী সার্কুলার অনুযায়ী ২০২৩ সাল থেকে সারাদেশে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেণিতে স্কুল ও মাদরাসায় অভিন্ন পাঠ্যপুস্তক আসছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরে পঠিতব্য দশটি বিষয় হলো, বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, শিল্প ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও ধর্মশিক্ষা। এ বিষয়গুলো যেমন স্কুলে পাঠদান করা হবে তেমনি সমানভাবে মাদরাসায়ও পাঠদান করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৬২টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং কার্যক্রমের জন্য ৬ষ্ট শ্রেণিতে যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান করা হয়েছে এগুলোর বিভিন্ন বিষয় এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের বিশ^াস, আদর্শ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে বিশেষত মাদরাসা শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক। সচেতন আলিম-উলামা ও মাদরাসার শিক্ষকম-লী এসকল পাঠ্যপুস্তক দেখে হতবাক। শুধু মাদরাসা সংশ্লিষ্টরাই কেন, এ সকল পাঠ্যপুস্তক পড়লে সচেতন যে কোনো মুসলমানই হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হবেন। এগুলো মাদরাসা তো দূরে, এ দেশের স্কুলেও পাঠদান করার উপযোগী নয়।
কী আছে পাঠ্যপুস্তকে?
পাইলটিং এর জন্য নির্ধারিত ১০টি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে ৯টি পাঠ্যপুস্তকে অত্যন্ত সুকৌশলে ইসলামী আদর্শ ও সংস্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে ভিনদেশী কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরা হয়েছে। পুরো বইয়ের কোথাও কুরআন-হাদীসের কোনো আলোচনা, নাম, বাণী, শিক্ষা কোনো কিছুই নেই। কোনো আলোচনা বা ছবিতে নেই বিশেষ কোনো ইসলামী নিদর্শন, অথচ আছে বহু মন্দিরের কল্পিত ছবি ও বর্ণনা। এতে পুরানের কাহিনী, গ্রীক, বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্মের বিভিন্ন বিশ^াসসহ দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন অসংখ্য ছবি আছে। বিজ্ঞানের নামে নগ্ন অশ্লীল নানা ছবি, অপ্রয়োজনীয়ভাবে মানুষের সাথে কুকুরের ছবি ও হিজাববিহীন মেয়েদের ছবি আছে বইগুলোর প্রায় প্রতিটি পাতায়। আছে হারমোনিয়াম, তবলা, গিটারসহ গান-বাজনার শিক্ষা। সর্বোপরি বানর বা এ জাতীয় অন্য প্রাণী থেকে নাকি মানুষের সৃষ্টি কল্পিত এই মিথ্যা বিবর্তনবাদ রয়েছে পাঠ্যবইয়ে, যা সরাসরি কুরআনবিরোধী। শুধু মাদরাসা শিক্ষিত নয় বরং কোনো মুসলমান এ ধরনের পাঠ্যপুস্তক এ দেশে প্রত্যাশা করতে পারে না।
‘বিবর্তনবাদ’ এর মিথ্যা ও বিতর্কিত তত্ত্ব রয়েছে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে। এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে বানর বা এইপজাতীয় অন্য প্রাণী থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ বর্ণনার পাশাপাশি ছবি দ্বারা এ বিবর্তনকে স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে। তাছাড়া ‘লুসি’ নামক কথিত কঙ্কালকে মানুষের পূর্বসূরী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই লুসির ছবিও দেওয়া হয়েছে বইটিতে। তাছাড়া বইটির অনুসন্ধানী পাঠে পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণনায় এমন সব মনগড়া বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে, যা কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলামানদের আকীদা বিশ্বাসের পরিপন্থি। প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বর্ণনায় প্রাচীন মানুষ ও দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবির পাশাপাশি গ্রীক, বৌদ্ধ ও হিন্দুদের বিভিন্ন দেব দেবীর বর্ণনা ও ভাস্কর্য এবং দেব দেবী সম্পর্কিত নানা অলীক বিশ^াস তুলে ধরে পৌত্তলিকতা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ বিহার, হিন্দু মন্দির এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রতিমার বহু ছবি দেওয়া হয়েছে। বৌদ্ধস্তূপে ভক্ত ও উপাসনাকারীদের ছবিও রয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো মসজিদ কিংবা মুসলিম নিদর্শনের ছবি ও বর্ণনা নেই। বাস্তব কিংবা কল্পিত ছবি ও ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবিই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। বিভিন্ন পাঠে প্রকৃতি, অনুসন্ধান, সুরেশ, দীপা, দীপঙ্কর, তিথি, টুকটুক এ ধরনের নামের আধিক্য রয়েছে, যা এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। এমনকি একটি লেখায় আনোয়ারা ও আশরাফুন্নেসা’র মতো দুটি সুন্দর মুসলিম নামকে গল্পচ্ছলে হেয় করে উপস্থাপনপূর্বক ‘বেমানান’ বলা হয়েছে। এটি ইসলামবিরোধী সূক্ষ্ম ষঢ়যন্ত্রেরই অংশ।
‘বিজ্ঞান’ বইয়ে পৌরাণিক কাহিনীর আলোকে কালপুরুষের ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ কুরআনের বৈজ্ঞানিক নিদর্শনের কোনো উল্লেখ পুরো বইতে নেই। উপরন্তু মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে। বইটিতে ১১ জন উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি দিয়ে তাদের লজ্জাস্থানের পরিচয় দেয়া হয়েছে এবং ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নির্লজ্জ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘ইংরেজি’ বইয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিভিন্ন পৃষ্ঠায় মানুষের সাথে কুকুরের ছবি এবং নেকড়ে বাঘের ছবি দেওয়া হয়েছে, যা ইউরোপীয় সংস্কৃতিরই অংশবিশেষ। তাছাড়া একটি গল্পে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান এ চার ধর্মের চারজন বন্ধু’র পরস্পর ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খুবই আনন্দের সাথে অংশগ্রহণ এবং হিন্দুদের দুর্গা পূজায় অংশগ্রহণ করে অন্য ধর্মাবলম্বীরা পূর্বে দেখেননি এমন সুন্দর দৃশ্য অবলোকনের উল্লেখসহ সর্বশেষ সকলে একত্রে নাচের মাধ্যমে আনন্দ উদযাপনের বর্ণনা রয়েছে। এতে হিন্দুদের পুজায় অংশগ্রহণের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। যা মুসলমান ও হিন্দু উভয়েরই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও বিশ^াস থেকে আপত্তিকর।
‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বইয়ে ছেলে মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন সম্পর্কে নির্লজ্জ বর্ণনা রয়েছে, যা ষষ্ঠ শ্রেণিতে অত্যন্ত বেমানান এবং ছাত্র-ছাত্রীদের যৌথ ক্লাসে বেহায়াপনা শিক্ষাদানের শামিল। তাছাড়া ছেলে মেয়েদের পারস্পরিক আগ্রহ, সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় সংযমের শিক্ষা ব্যতীত উল্লেখ করে ফ্র্রি-মিক্সিং ও অবাধ যৌনতার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে, যা সমাজ ও দেশে নৈতিক অধঃপতন ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে। উক্ত বইয়ে ‘বয়ঃসন্ধিকালে মনের যতœ’ অনুচ্ছেদে রাগ নিয়ন্ত্রণে ইসলাম নির্দেশিত সুন্দর পদ্ধতি পরিকল্পিতভাবে পাশ কাটিয়ে ৫০ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টো গণনার মতো অবৈজ্ঞানিক কল্পিত পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।
‘বাংলা’ বইয়ে কাল্পনিক ও অবাস্তব ছড়া, হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া শেখানোর মতো কল্পনানির্ভর শিক্ষাহীন গল্পের পাশাপাশি কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে গান শোনা, গান শেখা, বাদ্যযন্ত্র যেমন, হারমোনিয়াম, বাঁশি, তবলা, ঢোল ইত্যাদি ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্রিকেট খেলা ও টেলিভিশনের সামনে বসার আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির আগের বাংলা বইতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে একটি কবিতা থাকলেও নতুন বইতে তা রাখা হয়নি কিংবা তাঁর সম্পর্কিত নতুন কোনো প্রবন্ধ, কবিতা কিংবা ছড়া অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।
‘গণিত’ বইয়ে মেয়েদের ৭৭টি ছবি উপস্থাপিত হয়েছে, যার একটিতেও হিজাব নেই। বইটিতে বেশিরভাগ অমুসলিম নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের জীবনাচার অনুপস্থিত। প্রতিদিনের কাজে মুসলিম জীবনাচারের উল্লেখ নেই, খাবারের আদব কায়দায় নেই ইসলামী শিষ্টাচার। গান শোনা, নাচ, বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার ইত্যাদি যন্ত্র ব্যবহার করে ভিনদেশী সংস্কৃতির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া সুদভিত্তিক ব্যাংকিং, নাটক, মেয়েদের ফুটবল খেলা, টিভি দেখা ও অনলাইনে কার্টুন দেখার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বইয়ে দূর্গাপূজার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ভ্রমণের জন্য দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে যেতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ে মুসলিম কৃষ্টি-কালচার সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। পুরো বইটির মূল উপজীব্য বিষয় সংগীত, নৃত্য, অভিনয় এবং এর তাল, লয়, রস, মুদ্রা ইত্যাদি। এগুলোর বহু বিষয় ইসলামী শিক্ষার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। বইটির প্রচ্ছদও ঢোল, তবলা ও মূর্তির ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বইটিতে যাত্রাপালা, সার্কাস, বাউল গান, লোকনাটক, পুতুলনাচ ও গানের অনুষ্ঠানকে আমাদের ‘সংস্কৃতির অমূল্য অংশ’ এবং ‘জাতীয় সংস্কৃতির শিকড়’ বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, যাত্রাপালা, সার্কাস, বাদ্যযন্ত্রসহ গান ইত্যাদি ইসলামী আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। উল্লেখিত অনেক বিষয় মুসলিম সংস্কৃতির অংশই নয়। যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ট নাগরিক মুসলমানদের সংস্কৃতির অংশই নয় তা দেশের ‘সংস্কৃতির অমূল্য অংশ’ ও ‘জাতীয় সংস্কৃতির শিকড়’ হিসেবে উপস্থাপন করা কতটুকু সমীচীন? এ বিষয় মাদরাসাতে মোটেই প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া স্কুলে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ট শিক্ষার্থী মুসলমান সেখানে কেন এটি স্কুলেও বাধ্যতামূলক করা হবে? কেন প্রত্যেক মুসলিম শিক্ষার্থীকে নাচ, গান, অভিনয় আবশ্যিকরূপে শিখতে হবে?
৬ষ্ট শ্রেণির সকল বইতে মেয়েদের ওড়না বা হিজাববিহীন ছবি, ছেলে মেয়েদের যৌথ ছবি এবং আপত্তিকর বহু ছবি রয়েছে। বিভিন্ন বইতে প্রকৃতি, অনুসন্ধান, সুরেশ, দীপা, দীপঙ্কর, তিথি, অনিকা, মিনা, লিটল র্যাড, প¬াবন, রতন, মেধা, দীপক, স্কট, রুপা, নন্দিনী, এন্তি, মিসেল, মিতা, রণ, শেলী, নিনা, জয়া, সুবর্ণা রায়, মনিকা চাকমা, রিনা গোমেজ, রাতুল, রমা, রবিন, শিশির, ডেবিড, প্রিয়াঙ্কা, অরবিন্দু চাকমা, মন্দিরা ইত্যাদি নামের আধিক্য রয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশের পাঠ্যপুস্তকে সকল ধর্মের মানুষের নাম থাকা স্বাভাবিক। তবে শতকরা ৯১ ভাগ মুসলমানদের দেশে মুসলিম নামের প্রাধান্য থাকাই বিবেক ও যুক্তির দাবি। অথচ বইগুলোতে এরূপ নেই। বরং সুকৌশলে মুসলিম নামকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ ধরণের পাঠ্যপুস্তক মাদরাসা ও স্কুলে পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত হলে তা মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে এবং সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের ঐতিহ্যবিরোধী বলে আখ্যায়িত করার সুযোগ তৈরি করবে। এমনকি এটি ধর্ম ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে বলে আমরা মনে করি। এমতাবস্থায় এ ধরণের পাঠ্যবই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের জন্য কল্যাণকর হবে না বরং আত্মঘাতীমূলক হবে বলে আমরা মনে করছি। ৭ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক এখনো জনসমক্ষে আসেনি। শিক্ষাক্রমের নীতি অনুযায়ী একই ক্রমধারার বই আসলে তাও আপত্তিকর ও ক্ষেত্রবিশেষে আরো ভয়ঙ্কর হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
আমাদের দাবি,
নতুন শিক্ষাক্রমের গতি-প্রকৃতি ও পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নতুন এ পাঠ্যপুস্তকসমূহে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের বিশ^াস, আদর্শ ও জীবনাচার প্রতিফিলিত হয়নি। এটি আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার পরিবর্তে অনৈতিকতা এবং সংযমের পরিবর্তে ব্যভিচার শিক্ষা দিবে। সর্বোপরি এর মাধ্যমে একটি পৌত্তলিক সমাজ গড়ে উঠবে, যা কোনো মুসলমান কখনো চিন্তাও করতে পারে না। এ পাঠ্যপুস্তক মাদরাসায় পাঠদানের তো প্রশ্নই আসে না, এমনকি স্কুলেও এ এটি পাঠযোগ্য নয়। তাই আমাদের দাবি হলো,
১. বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি ও বিশেষজ্ঞ আলিম-উলামার সমন্বয়ে মাদরাসার জন্য অবশ্যই স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে। অনতিবিলম্বে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করে এ কাজ শুরু করতে হবে।
২. প্রতিটি পুস্তক রচনায় মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞ আলিম-উলামাকে কমিটিতে রাখতে হবে এবং বিষয় নির্বাচন ও কন্টেন্ট তৈরিতে তাদের অভিমতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৩. স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনার পূর্ব পর্যন্ত বর্তমানে চলমান বই পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে।
৪. সাধারণ শিক্ষায় দশটি বিষয়ে ১০০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসা শিক্ষার জন্য মাদরাসার মূল বিষয়সমূহ ঠিক রেখে সাধারণ বিষয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করতে হবে।
৫. দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের বিশ^াস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জন করতে হবে। বিশেষজ্ঞ আলিম-উলামার সমন্বয়ে এ কাজ সম্পাদন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলামী বিশ^াস ও আদর্শবিরোধী এবং সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের জীবনাচারের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় স্কুলরে পাঠ্যপুস্তকেও যনে না থকে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
৬. এসএসসি’র বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে।
উপরোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা আন্তরিক বিবেচনায় নিয়ে এদেশের মাদরাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন