শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পলোগ্রাউন্ডে জনসভা দু’পক্ষই উজ্জীবিত কী বার্তা পেল জনগণ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের পর জনসভা করল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রোববার সেখানে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিশাল সেই সঙ্গে বর্ণিল মহাসমাবেশে ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

১২ অক্টোবর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়াই পলোগ্রাউন্ডে মহাসমাবেশ করে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের ওই কর্মসূচির সূচনা হয় চট্টগ্রাম থেকেই। বিএনপির ওই সমাবেশ সফলে নানা বাধা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়। পুলিশ অনুমতি দিলেও সমাবেশের প্রচার চালাতে বাধা দেয়ার এবং নেতা কর্মীদের বাসায় পুলিশের তল্লাশির অভিযোগ করেন বিএনপির নেতারা। সমাবেশে আসার পথে হামলায় আহত হয়েছেন অনেকে। কোথাও পুলিশ কোথাও সরকারি দলের লোকজন গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে নেতা কর্মীদের ফিরিয়ে দিয়েছে। এত কিছুর পরেও বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিনত হয়। বিএনপির নেতাদের মতে ওই সমাবেশ ছিল স্মরণ কালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ। সে সমাবেশ থেকে বিএনপির নেতারা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিতে রাজপথে লড়াই জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তাতে দেশবাসীকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। বিএনপির নেতারা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাটের অভিযোগ করেন সরকারের বিরুদ্ধে।

এদিকে আওয়ামী লীগের জনসভাকে ঘিরে চিত্র ছিল পুরো উল্টো। প্রায় একমাস আগে থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। তাতে সরকারি সেবা সংস্থাগুলোও সমন্বয় করে। বিরামহীন প্রচারে শরিক হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে যায় মহানগরী থেকে পুরো চট্টগ্রাম। ব্যাপক প্রস্তুতি শেষে হয় জনসভা। দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর পর পলোগ্রাউন্ডে ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন ওই জনসভা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিশালতায় সেটি বিএনপির সমাবেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাতে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আবেগ আপ্লুত হয়েছেন।

আন্দোলন সংগ্রামের নগরী বীর চট্টলায় বড়সড় দুটি শোডাউন সফল করতে পারায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই খুশি। উভয় দলের নেতা কর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে দুই পক্ষের এই দুটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বড় কর্মসূচি সমাপ্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করে।

অপরদিকে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী বার্তা দিলেন তা নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা। গতকাল সোমবার সরকারি দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও রাজনৈতিক সচেতন মহলে জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে চলে নানামুখী আলোচনা, বিশ্লেষন। জনসভায় শেখ হাসিনা তার প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তিনি ভোট চেয়েছেন। সমবেত জনতার কাছ থেকে আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা আদায় করেছেন। তিনি বলেছেন বিগত ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আর তার দল আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলে লুটপাট, দুর্নীতি হয়, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। তিনি বিএনপি-জামায়াতকে খুনিদের দল উল্লেখ করে তারা যাতে আর কখনো ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি দেশ বাঁচাতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় জনসমাবেশ নিয়েও তার মনোভাব ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন তারা পাকিস্তানীদের পদলেহী বলেই ১০ ডিসেম্বর কর্মসূচির জন্য নির্ধারণ করেছে। কারণ আত্মসমর্পণের আগে ওই তারিখ থেকে পাকিস্তানীরা বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে। ওইদিন বিএনপি ঢাকা দখল করতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী যেকোনো নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বিগত ২০১৪ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে অগ্নি সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেন। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে আগামী দিনে রাজপথে তার প্রধান প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় আরো কঠোর হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন। আর যশোরের পর চট্টগ্রামের জনসভায় নৌকায় ভোট চাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি আগেভাগেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিলেন।

গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে জনসভা পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতারা শেখ হাসিনার জনসভাকে সর্বাত্মক সফল দাবি করেন। জনসভা সফল করায় তারা চট্টগ্রামের গণমানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। জনসভার মঞ্চ থেকে আমরা মাঠের চিত্র দেখেছি। পরে আমরা বাইরের অবস্থা দেখেছি। অনেকের বক্তব্য হলো, ইতিপূর্বে যতগুলো জনসভা হয়েছে এতবড় আর হয়নি। আরেকটি বিষয় হলো চট্টগ্রামের বাইরের কেউ কিন্তু এই জনসভায় আসেনি। দায়িত্ব নিয়ে বলছি একজনও আসেনি। সবাই চট্টগ্রাম জেলার মানুষ। প্রধানমন্ত্রী একাধিকার এমনকি সভাস্থল ত্যাগের পূর্বে ১০ মিনিটের বেশি আমাদের সাথে কথা বলেছেন। এত বেশি খুশি তিনি হয়েছেন। এটা আমাদের চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর এবং দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন আমরা যাতে কর্মীমুখী হই। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ দলমত নির্বিশেষে কল্যাণে ভূমিকা যেন সবসময় রাখি এটা স্মরণ করিয়ে দেন। কালকেও বলেছেন সামনে নির্বাচন। নির্বাচনে আমরা যেন সব আসনগুলো পাই। এটাই ছিল নির্দেশনা। চট্টগ্রামের বিগত ও এখনের নেতৃবৃন্দের প্রতি আলাদা একটা আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। সাংগঠনিক অবস্থা কিভাবে আছে এটা তো কালকের জনসভায় উনি নিজেই দেখেছেন। এরপর আর উনার আলাদাভাবে কিছু নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। প্রশ্নের জবাবে আ জ ম নাছির বলেন, বিএনপির পাল্টা জনসভা আমরা করিনি। এটা কো-ইনসিডেন্স হতে পারে। আর বিএনপির পাল্টা করতে হবে বলেও মনে করি না। বিএনপিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে আমরা কর্মসূচি নেব না। বিএনপি বলেছে তাদের জনসভায় ৩ লাখ লোক সমাগম হয়েছে আপনাদের জনসভায় কত এমন প্রশ্নের উত্তরে নাছির বলেন, একজন সাংবাদিক বলেছেন ১০ লাখ। আমি তো বলি যে ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মাইক অনেক দূর দূরান্ত পর্যন্ত দিয়েছি। জনসভার কারণে নগরবাসী কষ্ট পেয়ে থাকলে দুঃখ প্রকাশ করছি। নগরে কাজ কর্মে যদি প্রতিবন্ধকতা হয়ে থাকে সেজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

এ সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আতাউর রহমান, মফিজুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, নোমান আল মাহমুদ, দেবাশীষ পালিত, সফর আলী, হাসান মাহমুদ হাসনী, গিয়াস উদ্দিন। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Rezaul ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:০০ পিএম says : 0
আ.লীগ তো জনসভা করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তাদেরকে জোড়পূর্বক সমাবেশে আনতে বাধ্য করা। তাহলে তারা কিভাবে সফল হলো?
Total Reply(0)
Karim ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:০১ পিএম says : 0
নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আ.লীগ ১০টি সিটও পাবে না। তা না হলে তারা ত্ত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না কেনো?
Total Reply(0)
kamruzzaman somru ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:১৮ পিএম says : 0
BNP সফল
Total Reply(0)
Kma Hoque ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:১৩ পিএম says : 0
আ.লীগ কোনোভাবেই সফল না। কারণ তারা সমাবেশে টাকা বিনিময়ে লোক এনেছে। আর বিএনপি টাকার বিনিময়ে লোক সমাবেশে আনে না
Total Reply(0)
শরিফুল ইসলাম রাসেল ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৩ এএম says : 0
গনতন্ত্রের নতুন রুপ রুপকার আগামীর রাষ্ট্র নায়ক জনাব তারেক রহমান৷
Total Reply(0)
Zia Ul Hoq ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৩ এএম says : 0
একপক্ষ বিনা পয়সায় লোক এনে উজ্জীবিত, আরেক পক্ষ চারশো কোটি টাকা খরচ করে লোক এনে উজ্জীবিত, দুইটার মধ্যে তফাত আছে আকাশ পাতাল
Total Reply(0)
aman ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:১৪ পিএম says : 0
আ.লীগ চায় জোড় করে ক্ষমতায় থাকতে। যার ফলে তারা সমাবেশে টাকার ও ভয়ভীতি দেখিয়ে লোক এনেছে
Total Reply(0)
Md Shabbir ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৪ এএম says : 0
সকল সুবিধা নিয়ে ভারা করা, আর স্বপ্রনোদিত হয়ে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সমবেত হওয়া এক জিনিস নয় । বিএনপির জনসভা এখন ইজতেমার মত । মানুষ এটাকে গণতন্ত্র ফেরাতে এবাদতের মত মনে করছে
Total Reply(0)
Asif Osman ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৫ এএম says : 0
এক পক্ষ শত বাঁধা বিগ্ন পেরিয়ে সফল।আরেক পক্ষ জোর করে,জনগনের সম্পদ নষ্ট করে সফল।এটাই পার্থক্য।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন