বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

খাবারের মূল্য বৃদ্ধির সাথে জনবল সংকট সয়ংসম্পূর্ণ দক্ষিনাঞ্চলের প্রাণিসম্পদ খাতে বিপর্যয় ডেকে আনছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:২৪ এএম

দুধ, ডিম ও গোসতে সয়ংসম্পূর্ণ দক্ষিনাঞ্চলের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে অনুমোদিত জনবলের ঘাটতি লাঘবের পাশাপাশি তৃনমূল পর্যায়ে উদ্যোক্তা সহ খামারিদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে কারিগরি জ্ঞান হস্তান্তরে আন্তরিক হবার তাগিদ দিয়েছেন খামারিগন। বছরে প্রায় ৮লাখ টন দুধ, ১৪ কোটি ডিম, ৭লাখ টন গোসত উৎপাদনকারী দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোদিত জনবলের প্রায় অর্ধেক পদই এখনো শূণ্য। ফলে এ অঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলার প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যমান কার্যক্রমই বিপর্যয়ের কবলে। এমনকি গত ৫ বছর ধরে স্থানীয় গবাদি পশুর মাধ্যমেই দক্ষিণাঞ্চলে ঈদ উল আজহায় কোরবানী সম্পন্ন হলেও সে ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ব্যহত হচ্ছে।
এ অঞ্চলের ৪২টি উপজেলার ২১টিতেই কোন প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা নেই। এমনকি ভোলা ও ঝালকাঠীর ৬টি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোন ধরনের কর্মকর্তাই নেই। এ অঞ্চলের একমাত্র ডেপুটি চীফ ইপিডেমিওলজিষ্ট এবং উপ-পরিচালক (পাবলিক হেলথ)’এর পদ দুটিও শূণ্য। ৬টি জেলার ১টিতে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, ৪টি জেলার অতিরিক্ত প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, ৩টিতে কোন ট্রেনিং কর্মকর্তা নেই। এমনকি ৪২টি উপজেলার ২১টিতেই ভেটেরিনারি কর্মকর্তার পদও শূণ্য।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর অর্ধেকেরও কম জনবল নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৩২ লাখ ৮০ হাজার গরু, ২ লাখ ৪০ হাজার মহিষ, ১১ লাখ ৬৭ হাজার ছাগল, ১ লাখ ৪ হাজার ভেড়া ছাড়াও ২ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার মুরগি এবং প্রায় ৮৪ লাখ হাঁস ও প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার কবুতর, ১ লাখ ২৯ হাজারের মত অন্যান্য প্রাণির সেবা প্রদান (?) করছে ।
প্রাণি সম্পদ খাতে কর্মরত একাধিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সংশ্লিষ্টগন নাম প্রকাশ না করার শর্তে, দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল সম্ভবনার প্রাণি সম্পদ খাতকে আরো এগিয়ে নিতে অধিদপ্তরের পরিপূর্ণ জনবল নিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন। এমনকি খামারী থেকে গৃহস্থ্য পর্যায়ে গৃহপালিত পশু সহ লাভজনক ভাবে প্রাণি সম্পদ উন্নয়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাণি সম্পদ কর্মী নিয়োগ নিশ্চিত করারও দাবী জানান হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩শ বেসরকারী ডেইরী খামারে ৮ হাজার গরু, ৪০৩টি ছাগল খামারে সাড়ে ১০ হাজার ছাগল এবং ৫১টি খামারে প্রায় দেড় হাজার ভেড়া লালন পালন হচ্ছে। তবে গত কয়েক বছরে সব ধরনের খাবার ও চিকিৎসা খরচ কয়েকগুন বৃদ্ধির ফলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণি সম্পদ খাতের উন্নয়ন ব্যহত হবার সাথে বিদ্যমান খামারের অস্তিত্বও অনেকটা হুমকির মুখে বলে খামারীদের দাবী। বেসরকারী ডেইরী খামার, পোল্ট্র্রী খামার, ছাগল খামার ও ভেড়ার খামারেরও সম্প্রসারনও মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। প্রাণিজ খাবার এবং ওষুধ সহ চিকিৎসা সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি বেসরকারী খামার প্রতিষ্ঠার সাথে প্রাণি সম্পদ খাত উন্নয়নে ব্যাংক ঋন প্রদান সহজীকরনেরও দাবী জানিয়েছেন উদ্যোক্তাগন। পাশাপাশি একের পর এক প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণি সম্পদ খাতকে রক্ষায় পশু বীমা সহ ঘূর্ণিঝড় প্রবন উপক’লীয় চরাঞ্চলে মাটির কিল্লা সহ মজবুত অবকাঠামো নির্মানেরও তাগিদ দিয়েছেন বেসরকারী উদ্যোক্তাগন।
গত বছর নভেম্বরে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থারÑএফএও’র যৌথ আয়োজনে বরিশালে এক কর্মশালায় প্রাণি সম্পদ খাতে সংম্ভরতা অর্জিত হলেও এ খাতে দক্ষ জনবলের ব্যপক ঘাটতির কথা জানান হয়েছে। এমনকি মাংস এবং দুধ বাজারজাত প্রক্রিয়াও আধুনিক হয়নি বলে জানিয়ে এ সংকট উত্তোরনের ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পÑএলডিডিপি’ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এর আওতায় খামারীদের নিয়ে প্রডিউসার গ্রুপ গঠন করে প্রাণীসম্পদ খাতে দক্ষ জনশক্তি ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করার কথাও বলা হয়েছিল ঐ কর্মশালায়।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর এবং এফএও’র যৌথ আয়োজনে এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় খামারিদের নিয়ে প্রডিউসার গ্রুপ গঠন ও সংহতকরণ সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা জানান, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। প্রাণিসম্পদ খাতে সম্পৃক্ত জনশক্তি দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে সরকার এ খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানান তিনি। এমনকি প্রাণি সম্পদ খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে সরকার উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে বলে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেছিলেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রান্তিক মানুষদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। তৃণমূল মানুষদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে না পারলে জাতিকে সামনে এগিয়ে নেয়া যাবে না বলেও জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামীর লক্ষ্য তৃণমূল মানুষদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা’।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলে সহ দেশের ৬১টি জেলায় গাভীর ৩ হাজার ৩৩৪টি, গরু মোটাতাজা করণের ৬৬৬টি, ছাগল ও ভেড়ার ৫০০টি এবং দেশি মুরগির ১ হাজার সহ মোট সাড়ে ৫ হাজার প্রডিউসার গ্রুপ গঠন ও সংহতকরণের লক্ষ্য রয়েছে। প্রডিউসার গ্রুপ সমূহে ১ লাখ ৬৫ হাজার পরিবার সংযুক্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রাণীসম্পদ খাতের প্রান্তিক খামারিদের বিভিন্ন ভেল্যু চেইন ভিত্তিক প্রডিউসার গ্রুপে যুক্ত করে তাদের জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত, বাজারজাতকরণ, ঋণ ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। যার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলাকেও সংযুক্ত করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন