একজন মুমিনের প্রকৃত সফলতা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাত লাভ করা। যে তা অর্জন করতে পারবে সে-ই সফল। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এবং তোমাদের সকলকে কিয়ামতের দিন (তোমাদের কর্মের) পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তখন যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়। [-সূরা আলে ইমরান: ১৮৫] সফলতার চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা অর্জন করা আল্লাহ তায়ালা অনেক সহজ করে দিয়েছেন। হাদীস শরীফে অনেক ছোট ও সহজ আমলের কথা বর্ণিত রয়েছে যার মাধ্যমে এই ব্যক্তি সহজেই জান্নাত লাভ করতে পারে। নিম্নে কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো।
এক. প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ: আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনের প্রসিদ্ধতম একটি আয়াত। হাদিস শরিফে এই আয়াতকে কুরআনে শ্রেষ্ঠ আয়াত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। [মুসলিম-১৩৯৬] এছাড়ও এই আয়াতের অনেক ফজীলত রয়েছে। হযরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে তাকে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু জান্নাতে যেতে বাঁধা দিতে পারবে না। (তাবরানি : ৭৫৩২)।
দুই. দৈনিক বার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায়: দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের আগে-পরে বার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা রয়েছে। এগুলো আদায় না করার উপর যেমন তিরস্কার রয়েছে তেমনি গুরুত্বসহ আদায়কারীদের জন্য বিশেষ ফজীলত রয়েছে। হযরত উম্মু হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রাত-দিনের বার রাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হবেঃ যোহরের পূর্বে চার রাকআত, এরপর দু’রাকআত, মাগরিবের পর দু’রাকআত, এশার পর দু’রাকআত, ভোরের সালাত ফজরের পূর্বে দু’রাকআত। [তিরমিযি-৪২৫,মুসলিম-৭২৮]
চলাচলের পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করা: ঈমানের সাতাত্তরটি শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বনিম্ন শাখা হলো, রাস্তা-ঘাট ও মানুষের চলাচলের পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানো। হাদীসে এর অনেক ফজীলত বর্নিত হয়েছে। হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি গাছ মুসলিমদের (পথ গমন করার সময়) কষ্ট দিত। এক ব্যক্তি এসে সে গাছটি কেটে ফেললো, এরপর সে জান্নাতে প্রবেশ করলো। [মুসলিম-১৯১৪]
সকাল-সন্ধা সাইয়্যেদুল ইস্তিতগফার পাঠ করা: আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো, সায়্যিদুল ইস্তিগফার। শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু’আ পড়া- উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শাররি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফিরলী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা”।
’’হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি’য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু’আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। [বুখারী-৬৩২৩]
অযুর পর শাহাদাহ পাঠ: উকবা বিন আমির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে- ্রআশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহুগ্ধ। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। [মুসলিম-২৩৪]
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া: আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় কোন অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফিরিশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেনঃ কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলাও। তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে। [তিরমিযি-২০০৮]
রাগ না করা: হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাগ করো না। তাহলে তোমার জন্য জান্নাত নির্ধারিত। [মুসনাদে আবু ইয়ালা-১৫৯৩]
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন