শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিধি বিধান পালনের উদ্যোগ নেই

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৫০ এএম

দক্ষিণাঞ্চলের দুটি সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও ৬টি জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল এবং ৩৬টি উপজেলা হাসপাতাল সহ বেসরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাত করণের নুন্যতম কোন ব্যাবস্থা এখনো অনুপস্থিত। অথচ সরকার এ লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালের ‘পরিবশে সংরক্ষন আইন’র ক্ষমতা বলে ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর ‘চিকিৎসা-বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা,২০০৮ প্রনয়ন করে গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষন আইন এবং ২০০৮ সালের বিধিমালা অনুুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলে সরকারী হাসপাতাল গুলোতেই চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ফলে এসব চিকিৎসা বর্জ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্রমশ বিপর্যয় ডেকে আনলেও তা নয়ে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সহ পরিবশ অধিদপ্তরও অনেকটাই উদাশীন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অথচ ২০০৮ সালের ঐ বিধিমালার উদ্দেশ্য পুরনের লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগে একটি কতৃপক্ষও রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালককে সভাপতি করে গঠিত ঐ কমিটিতে বিভাগীয় কমিশনারের মনোনীত একজন কর্মকর্তা ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরেরও একজন প্রতিনিধি রয়েছেন।
তবে দূর্ভাগ্যজনকভাবে দক্ষিনাঞ্চলের সব সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো আজ পর্যন্ত সরকারী বিধিবিধান অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে এখনো অনেক দুরে। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর সহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল মহলও স্বীকার করেছেন। এ লক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রনালয় থেকে সারা দেশের হাসপাতাল সমুহের জন্য প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহল মহল। তবে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকের কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য ব্যাবস্থার লক্ষ্যে খুব শিঘ্রই একটি ‘ইনসাইনেরেটর’ স্থাপন করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক জানিয়েছেন।
এমনকি বরিশাল মহানগরীর ছোট ও মাঝারী প্রায় ৫০টি বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালের অবস্থা আরো করুন। কয়েকটি এনজিও পরিবশে অধিদপ্তরের অনুমতি ও নিবন্ধন নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা বর্জ্য যেনতেন ভাবে অপসারন করলেও অতি সম্প্রতি সিটি করপোরেশন এ দায়িত্ব গ্রহনের কথা জানিয়েছে। ফলে পরিবশে অধিদপ্তর ঐসব এনিজিও’র নিবন্ধন নবায়নও করেনি। তবে নভেম্বর মাস থেকেই মহানগরীর সব বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল সমুহের চিকিৎসা বর্জ্য সিটি করপোরেশন অপসারনের কথা থাকলেও তা এখনো সম্ভব না হয়নি। এমনকি সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর থেকে নগর ভবন এ কাজটি শুরু করার কথা জানালেও ৭ডিসেম্বর পর্যন্ত নগর ভবন এ কাজ শুরু করতে পরেনি। সিটি করপোরেশনের কনর্জার্ভেন্সী বিভাগের প্রধান ডাঃ রবিউল বুধবার দুপুরে জানান, এ লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুতি চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধেই এ কার্যক্রম শুরুর কথাও জনান তিনি।
তবে দক্ষিনাঞ্চলের অন্যসব জেলা উপজেলা সদরগুলোর অবস্থা আরো করুন। ঐসব জেলাÑউপজেলার ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসা বর্জ্যরে বেশীরভাগই রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকেই পৌরসভাগুলোর পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তা অনিয়িমিতভাবে সংগ্রহ করে থাকেন।
এমনকি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা নিয়ে সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল সমুহ সহ নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরও কোন প্রশিক্ষন নেই। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাওই চিকিৎসা বর্জ্য সরকারী বিধি বিধান অনুযায়ী সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, প্যাকটজাতকরণ, বিনষ্টকরণ, ভষ্মীভুতকরণ, পরিশোধন, বিশোধন সহ অপসারন হচ্ছে না। এমনকি সংক্রমিত ও অসংক্রমিত তরল বর্জ্য প্রেসারাইজড বর্জ্য, অসংক্রমিত ও ক্ষতিকর নয় সাধারন বর্জ্য, এনাটমিক্যাল বর্জ্য, প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য, রাসায়নিক বর্জ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল বর্জ্য, জীবানুযক্ত বর্জ, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, ধারাল বর্জ্য সমুহ সংগ্রহ, অপসারন ও বিনষ্টকরণে নুন্যতম কোন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত ব্যবস্থা গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই অনুপস্থিত।
বরিশাল মহানগরীতে এনজিও সমুহ এখনো যে চিকিৎসা বর্জ্যসমুহ সংগ্রহ করছে, তাও খুব একটা পরিবেশ সম্মতভাবে অপসারন বা বিনষ্ট করছে না। সে ধরনের কোন ব্যবস্থাও তাদের নেই বলে জানা গেছে। শুধুমাত্র বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক, হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাব থেকে বর্র্জ্যসমুহ সংগ্রহ করে তারা সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগারেই তা ফেলে আসছে। চলতি মাস থেকে নগর ভবনের পক্ষ থেকে এসব ব্যার্জ্য সংগ্রহ করা হলেও পরিস্থিতির খুব পরিবের্র্তনের নাও হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগন। তবে ‘যথা সম্ভব সতর্কতা ও জনস্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখেই কাজটি করা হবে’ বলে জানিয়েছেন নগর ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যাবস্থাপনায় দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বিষয়টি নিয়ে তাগিদ দিয়ে আসছি। সরকারী প্রতিষ্ঠান বিধায় চাইলেও স্থানীয় কতৃপক্ষ সব কিছু করতে পারেন না। তবে আমারা চলমান চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি নজর রাখে সরকারী বিধি বিধান অনুযায়ী পরিবেশ সম্মতভাবে তা করারও তাগিদ দিচ্ছি ।
এ ব্যপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষের সভাপতি ডাঃ হুমায়ুন শাহিন খানের সাথে আলাপ করা হলে তিনিও বিষয়টি নিয়ে সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান সহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দূূর্বলতার কথা স্বীকার করেন। তবে খুব শিঘ্রই বরিশাল শের এ বাংলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং জীবানুযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষে একটি ‘ইনসাইনেরটর’ স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের সব সরকারী হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা বর্জ্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থাপনার লক্ষে একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহনে সুপারিশ করবেন বলেও জানান পরিচালক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন