দক্ষিণ কোরিয়ায় বহুদিন ধরে ব্যবহৃত ‘কোরিয়ান বয়স গণনা’ পদ্ধতিকে বাতিল করে দিচ্ছে দেশটির পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি বিল। এর ফলে দেশটিতে জন্ম নেওয়ার পরপরই শিশুর বয়স ১ বছর ধরার নিয়মের ইতি ঘটবে আর এতে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বয়সও এক বছর কমে যাবে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিলটি দেশটিতে বহুদিন ধরে ব্যবহৃত ‘কোরিয়ান বয়স গণনা’ পদ্ধতিকে বাতিল করে দেবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
‘কোরিয়ান বয়স গণনা’ পদ্ধতিতে কারও কারও বয়স আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতির বয়সের তুলনায় ১ বা ২ বছর বেশি হতো।
আন্তর্জাতিকভাবে সদ্যজাত শিশুর বয়স শূন্য থেকে গণনা শুরু হয়, ওই শিশুর পরবর্তী জন্মদিনে তার বয়স হয় ১ বছর, তার পরবর্তী জন্মদিনে ২ বছর, এভাবে বাড়তে থাকে।
চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ইয়ুন সুক ইয়ল বয়স গণনা পদ্ধতি সংশোধনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। দেশটিতে আগামী জুন থেকে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে বয়স গণনার এ পদক্ষেপটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।
ইয়ুনের সরকার বলছে, কোরিয়ান বয়স গণনা পদ্ধতি বাতিল হলে তা প্রশাসনিক ও চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত কর্মকাÐে বিভ্রান্তি ঘোচাবে।
‘সংশোধনীটি পাস হওয়ায় দেশের সব নাগরিকের বয়স আগামী জুন থেকে ১ বা ২ বছর কমে যাবে,’ বলেছে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
নতুন এ পদক্ষেপ বয়স সংক্রান্ত নানান আইনি জটিলতা দূর করবে; দেশে এক বয়স, বাইরে আরেক বয়স বলা দক্ষিণ কোরিয়া নাগরিকদেরও স্বস্তি দেবে।
‘কোরিয়ান বয়স গণনা’ পদ্ধতিটি কোরিয়ার একার নয়; চীন, জাপানসহ ওই অঞ্চলের অনেক দেশেই এক সময় এভাবে বয়স গণনার রীতি চালু ছিল।
এতে কোনো একটি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জন্ম নেওয়া সব শিশুর বয়সই ১ বছর ধরা হয়, ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন বছরের জানুয়ারি এলেই বয়স হয়ে যেত ২।
এ প্রক্রিয়ায় ৩১ ডিসেম্বর কোনো শিশুর জন্ম হলে সেদিনই তার বয়স ধরা হতো ১ বছর, পরদিন নতুন বছর হওয়ায় যুক্ত হত আরও ১ বছর। এর ফলে কোরিয়ান বয়স গণনায় জন্মের মাত্র ২দিনের মাথাতেই শিশুটিকে ২ বছর বয়সী হিসেবে গণ্য করতে হতো।
উত্তর কোরিয়া ১৯৮০-র দিকেই এই পুরনো পদ্ধতি থেকে আন্তর্জাতিক বয়স গণনা পদ্ধতিতে চলে গেলেও দক্ষিণে এতদিন আগের পদ্ধতিই বহাল ছিল।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বয়স গণনা পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদেরও সায় আছে। সেপ্টেম্বরে দেশটির সরকারি এক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশই ‘কোরিয়ান বয়স গণনা’ পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছিলেন।
‘এই ধরনের চর্চার উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু শ্রেণিভিত্তিক সমাজের কারণে কেবল দক্ষিণ কোরিয়াই এ পদ্ধতি এতদিন ধরে বহাল রেখেছিল,’ বলেছেন সরকারি আইন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লি গি-জাং।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন