শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

রসুনে লোকসান, আগ্রহ গম চাষে

মো. আশিকুর রহমান টুটুল, লালপুর (নাটোর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

পদ্মানদী বিধৌত নাটোরের লালপুর উপজেলার অনুকুল আবহাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে বিনাহালে চাষকৃত রসুনের বাম্পার ফলন হয়ে আসছে। কিন্তু গত দুই বছর উৎপাদিত রসুনের বাজারে কাঙ্খিত দাম পায়নি এখানকার কৃষকরা। রসুন চাষ করে লাগাতার লোকসান হওয়ায় চলতি মৌসুমে রসুন চাষে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের। এদিকে রসুন চাষে আগ্রহ কমলেও আগ্রহ বেড়েছে গম চাষে। গম চাষে কৃষকদের উদ্বুগ্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলার প্রায় ২ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে উন্নতমানের গমের বীজ ও সার দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, রসুন চাষের উপযোগী আবহাওয়া হওয়ায় গত কয়েক বছর যাবত এই অঞ্চলের কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে রসুনের চাষ করে আসছে। কিন্তু চাষকৃত রসুনের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে কাঙ্খিত দাম না পাওয়া লাগাতার লোকসান গুনতে হয়েছে রসুন চাষিদের। এখানকার বেশির ভাগ কৃষকই বর্গাচাষি। তাদের অনেকে এনিজও থেকে ঋণ নিয়ে রসুন চাষ করে দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এবছর এ অঞ্চলের কৃষকরা রসুন চাষ ছেড়ে গম চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে উপজেলার ১৩শ ১০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত চাষ হয়েছে মাত্র ৬শ হেক্টর জমিতে। রসুন চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে শেষ পর্যন্ত তা পূরন না হলে গত তিন বছরের মধ্যে এবছরই সর্বনি¤œ রসুনের চাষ হবে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, উপজেলায় গত ১৯-২০ মৌসুমে রসুনের চাষ হয়েছিলো ১২শ ৫০ হেক্টর, ২০-২১ মৌসুমে চাষ হয়েছিলো ১৫শ ১০ হেক্টর, ২১-২২ মৌসুমে রসুনের চাষ হয়েছিলো ১২শ ৩৫ হেক্টর জমিতে।
অপরদিকে ১৯-২০ মৌসুমে এই উপজেলায় গমের চাষ হয়েছিলো ৭হাজার ৫০ হেক্টর, ২০-২১ মৌসুমে চাষ হয়েছিলো ৭ হাজার ৩১০ হেক্টর, ২১-২২ মৌসুমে চাষ হয়েছিলো ৭ হাজার ৬৮০ হেক্টর আর চলতি মৌসুমে ৭ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর। এখনও ১০দিন চলবে গম রোপন কার্যক্রম। তবে কৃষি বিভাগ বলছে গম চাষের জন্য নির্ধারিত যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা ছাড়িয়ে যাবে এবছর।
স্থানীয় রসুন চাষি রনি আলী, ঝুমুর আলী, আকমল হোসেন বলছে, লাভের আশায় তারা জমি লিজ নিয়ে কৃষি বিভাগেরে পরামর্শে বিনাহালে রসুনের চাষ করেছিলো। অনুকুল আবহাওয়ায় রসুনের বাম্পার ফলনও হয়েছিলো। কিন্তু উৎপাদিত রসুন বাজারে বিক্রয় করে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে খরচের টাকাও উঠেনি। এভাবে টানা দুইবার রসুন চাষ করে বাজারে রসুনের দাম না পেয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে। এই অঞ্চলের রসুন চাষিদের হতে হয়েছে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বাজারে গমের দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় এবার তারা রসুন চাষ ছেড়ে গম চাষ করছেন।’
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, গত কয়েক বছর থেকে লালপুর উপজেলায় বিনাহালে চাষকৃত রসুনের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে সঠিক দাম না পাওয়ায় রসুন চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। এছাড়ও এই উপজেলার আবহাওয়া ও মাটি গম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাজারে গমের চাহিদাও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা গম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষকদের গম চাষে উদ্বুগ্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ২ হজারের বেশি কৃষককে বিনামূল্যে গমের বীজও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়ও কৃষকদের গম চাষে সহযোগিতা করতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন