স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে কুমিল্লার মুরাদনগরে গণপরিবহনে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে দুই চেয়ারম্যান যারা সড়ক মহাসড়কে গণপরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ সরকার দলের প্রভাবে কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় বসে চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রন করছেন নবীপুর পুর্ব ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের এবং তার সহযোগী নবীপুর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেন। প্রশ্ন এসেছে দুই চেয়ারম্যানের নেপথ্যে কারা? চাঁদাবাজীর এসব চিত্র কি পুলিশ কিংবা প্রশাসনের চোখে পড়ে না? কি কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? এ নিয়ে এলাকায় বেশ তোলপাড় চলছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা সংকটের মাঝে পরিবহনে চাঁদা বৃদ্ধি নিয়ে মালিক এবং শ্রমিকদের মাঝে ব্যপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড এলাকার নিয়ন্ত্রন নিয়ে সকল গণপরিবহনে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করছে সরকার দলের দুই ইউপি। মালিক শ্রমিকদেরকে জিম্মি করে নিজস্ব বাহিনী দ্বারা এসব চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ওই বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১০১২টি সার্ভিসের গণপরিবহন প্রতিদিনই ঢাকা, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে। আর প্রতি ট্রিপে ট্রিপে শত শত পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করছে চেয়ারম্যানদের নিযুক্ত সিন্ডিকেট সদস্যরা। একটা সময় এসব গণ পরিবহন সাধারণ মালিকগণ নিয়ন্ত্রণ করলেও গত ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ স্ট্যান্ডের সকল গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রন নিজ হাতে তুলে নেন কাজী আবুল খায়ের চেয়ারম্যান। এতে সহযোগী হিসেবে রয়েছেন জাকির চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা জহির খান। স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রনে নিয়েই সকল পরিবহনে চাঁদার হার বাড়িয়ে এ দুই চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট। এ সময় মালিক এবং শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলেও তাদের হুমকি ধমকির কাছে টিকতে পারেনি। তাছাড়া থানা পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনসরকার দলের সমথর্ীত এ দুই চেয়ারম্যানের হাতেই। দুই চেয়ারম্যান সিন্ডিকেটের চাঁদা আদায় নিয়ে মালিক শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে তাদেরকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে এ দুই চেয়ারম্যানের ফোনে যেকোন সময় মুরাদনগর থানা পুলিশ স্ট্যান্ডে হাজির হয়ে যায়। যার ফলে সহজেই সব কিছু নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন তারা। ওই স্ট্যান্ড থেকে মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ সাধারন মালিকদের। সুত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী তিশা গোল্ডেনের প্রতি গাড়ি থেকে প্রতি ট্রিপে জিপির বাহিরে অতিরিক্ত ২শত টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে হানিফ সুপার থেকে ২শ, হানিফ ক্লাসিক থেকে ২শ,শাপলা থেকে ২শ, প্রান্তিক থেকে ২শত, কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট থেকে ২শ, টিপু ফ্যাশন থেকে ২শ, নিউ জনতা থেকে ১৩০ টাকা, ফারজানা থেকে ৭০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অবিলম্বে প্রশাসন এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মালিক এবং শ্রমিকদের। নিউ জনতা পরিবহনের মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, কাজী আবুল খায়ের এবং জাকির চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ে আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, সাধারণ মালিকগনকে জিম্মি করে ৫৮টি নিউ জনতা বাস থেকে মাসে কমপক্ষে ৩-৪ লাখ টাকা চাঁদা তুলে নিচ্ছে। আমরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই তাদের এ চাঁদা পরিশোধ করতে হয়।
তিশা পরিবহনের পরিচালক আবুল খায়ের মিয়া বলেন, কাজী আবুল খায়ের চেয়ারম্যান এবং জাকির চেয়ারম্যান বিগত ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়েই আমাদের তিশা পরিবহন কাউন্টার দখলে নেয়। এখন আমি নিজেই প্রতি ট্রিপে প্রতি গাড়ী থেকে দুইশত টাকা করে চাঁদা আদায় করে তাদেরকে দিচ্ছি, প্রতিদিন তাদেরকে গড়ে আমাদের পরিবহন থেকে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। তারা সরকার দলের লোক তাই বাধ্য হয়েই চাঁদা দিচ্ছি।
ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের বলেন, জনতা পরিবহনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা আছে, অন্য কোন গণপরিবহনে চাঁদাবাজীর সাথে আমি জড়িত নই। ভিপি জাকির হোসেন বলেন, আমি যানজট কমিটির সভাপতি হিসেবে স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রন এবং যানজট নিরসন করতে হয়, কিন্তু কোন প্রকার চাঁদাবাজীর সাথে আমি জড়িত নই।এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মুরাদনগর সার্কেল) পিযুস চন্দ্র দাস বলেন, কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় গণপরিবহনে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই, যেহেতু আজকে আপনাদের কাছ থেকে জেনেছি, অবশ্যই তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তাছাড়া পুলিশের কোন সদস্যও যদি সম্পৃক্ত থাকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন