বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

রোগ নিরাময়ে কায়িক শ্রম

| প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা, ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, কবিরাজিসহ যত ওষুধ তৈরি হয় এর অধিকাংশ ওষুধ, শাকসবজি, ফল, ফুল, ভেষজ উদ্ভিদ, খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি হয়। প্রায় সকল ওষুধের পার্শ^-প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ ক্ষতিকর প্রভাব হয়। কিন্তু ফল, ফুল, শাকসবজি, ভেষজ উদ্ভিদের কোন পাশর্^-প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর প্রভাব নেই। ওষুধ না খেয়ে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে ফল, শাকসবজি, খাদ্যদ্রব্য খেয়ে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা যায় ও রোগ সারানো যায়। আমাদের দেশে অপুষ্টি ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ভারসাম্যহীন পুষ্টির ফলে স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বেড়েছে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। এসবের কারণ হিসেবে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারের পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ পরিস্থিতিই দায়ী।

কায়িক পরিশ্রম, মানসিক প্রশান্তি দেয়। কিন্তু মানুষ কায়িক পরিশ্রম থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। গ্রামগুলোতেও এখন শহরের ছোঁয়া। মানুষ হাঁটতে চায় না। সাধারণ কাজও করায় কাজের লোক দিয়ে। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী খাদ্যের বদলে অস্বাস্থ্যকর ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর মানুষ বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রধানতম অসংক্রামক রোগ উচ্চরক্তচাপ বিশ্বব্যাপী রোগের বোঝা বাড়িয়েছে। ২০০০ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে উচ্চরক্তচাপ ছিল। যে হারে রোগটিতে আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ছে তাতে ২০২৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৬০ শতাংশ বাড়বে। উচ্চরক্তচাপ হৃদরোগের আশঙ্কাও চার গুণ বাড়ায়।

ডায়াবেটিস মেলিটাস ও উচ্চরক্তচাপ এ দুটি রোগে আক্রান্তরা হৃদরোগ, স্ট্রোক হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কিডনি, চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও প্রজননক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, শরীরে অস্বাভাবিক বা অত্যধিক চর্বি জমে যাওয়া অর্থাৎ স্থূলতা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বডি মাস ইনডেক্স (একজন ব্যক্তির ওজন কেজিতে বা পাউন্ড ও উচ্চতা মিটার বা ফুট দ্বারা ভাগ করা হয়, যা শরীরের চর্বি নির্দেশ করে) ২৫-এর বেশি হলে তাকে অতিরিক্ত ওজন বিবেচনা করা হয়। আর ৩০-এর বেশি হলে তাকে বলা হয় স্থূলতা। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেড় দশকে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় নারীর সংখ্যা বেড়েছে। রংপুর বিভাগে ২০০৪ সালে নারীদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা শূন্য শতাংশ ছিল। ২০১৮ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। একইভাবে রাজশাহীতে ১৪ শতাংশ থেকে ৪৬, সিলেটে ১৫ শতাংশ থেকে ৩৫, ঢাকায় ২০ শতাংশ থেকে ৫৫, খুলনায় ১৯ শতাংশ থেকে ৫২, বরিশালে ১৪ শতাংশ থেকে ৪৮ এবং চট্টগ্রামে ১৮ থেকে ৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পুরুষদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার হার নারীদের চেয়ে কম। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে উল্লেখযোগ্য না হলেও ২০১৮ সালে এসে রংপুরে ১৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৮, ঢাকায় ৩৮, সিলেটে ২৫, খুলনায় ৩৬, বরিশালে ৩০ এবং চট্টগ্রামে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় পুরুষের হার ৪০ শতাংশে দাঁড়ায়। এ পরিসংখ্যানে ময়মনসিংহ বিভাগের তথ্য ঢাকা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।

স্থূলতা উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এসব রোগ অসংক্রামক হলেও স্থূলতার কারণে তা বৃদ্ধির পরিমাণ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দশকে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা বৃদ্ধির কারণ হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারের পরিবর্তন। ওজন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে শরীরে উচ্চরক্তচাপসহ নানা ধরনের রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, অস্থির প্রদাহ, পিত্তথলিতে পাথর, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, ঘুমে ব্যাঘাত, নানা ধরনের ত্বকের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

চর্বি রক্তনালিতে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে, যা থেকে নানা ধরনের সংকটের সৃষ্টি হয়। রোগ নিরাময়ের জন্য নাগরিকদের শারীরিক পরিশ্রম বা নিজের হাতে কাজ করার পরিমাণ বাড়াতে হবে। শহরগুলোর পরিধি বাড়াতে হবে পরিকল্পিতভাবে। পার্ক ও খেলার মাঠ রাখতে হবে। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে জনপ্রতিনিধি ও সরকারকে। তাই পরিমিত ও নিয়মিত আহার, শারীরিক ব্যায়াম, বিশ্রাম, নিদ্রা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন- নিজের যত্ন না নিলে নিজে-অন্যের ওপর ভরসা মিছে।

মো: লোকমান হেকিম
শিক্ষক-কলামিস্ট।
মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন