শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গৌরবময় বিজয়ের দিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির গৌরবময় বিজয়ের দিন। জাতির বহু কাক্সিক্ষত বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আবারও ফিরে এসেছে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বরে এসেছিল চুড়ান্ত বিজয়। এই বিজয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল গোটা বাঙালি জাতি।

আজ বাঙালি জাতি পালন করছে ৫২তম মহান বিজয় দিবস। ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবগাঁথা বিজয় অর্জন করেছিল। ঢাকায় দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এই দিনেই স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

৭১’র ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার স্পৃহায় জেগে ওঠে বাঙালি জাতি। আর এই স্বাধীনতার তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত জাতিকে স্তব্ধ করতেই ২৫ মার্চ কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরা মেতে উঠেছিল ইতিহাসের জঘণ্যতম গণহত্যাকাÐে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই নির্বিচারে চালানো হয়েছিলো হত্যাকাÐ। সেই গণহত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের ভাগ্যাকাশে নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা। তবে গণহত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে সেদিন দমিয়ে রাখতে পারেনি পাক হানাদার বাহিনী। বরং ওই হত্যাকাÐের শোককে তারা শক্তিতে পরিণত করে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে এদেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য।

’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে দেখা দেয় স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। অবশেষে ঘনিয়ে আসে বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়াদী উদ্যান) পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে আত্মসমর্পণ করে ৯১ হাজার ৫৪৯ হানাদার সেনা। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে গ্রæপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারের উপস্থিতিতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন পাকিস্তানের পক্ষে লে. জেনারেল নিয়াজি এবং মিত্রবাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। আর অবিস্মরণীয় সেই মুহূর্তেই বিশ্ববাসীকে অবাক করে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাঙালি জাতি পায় লাল-সবুজের একটি জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং মানচিত্র। রক্তাক্ত পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় অর্জন ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি।

মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক সংগ্রাম: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন করে স্থান লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তবে হঠাৎ করে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে গর্জে ওঠেনি তারা। এর পেছনে কাজ করেছে দীর্ঘদিনের অন্যায়, শোষণ, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা আর বৈষম্য। যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর। দেশ বিভাগের মাত্র এক বছর পরই প্রথম আঘাত আসে ভাষার প্রশ্নে। বাঙালি জাতির মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষাকে পরিবর্তন করে শাসক শ্রেণীর ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়। সেই থেকে বাঙালির সচেতনতার সূচনা। এরপর একে একে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯’র গণঅভূত্থ্যান, ৭০’র নির্বাচন এবং ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। যা বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলে। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সেই ভাষণ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম শিহরিত করে তোলে গোটা বাঙালি জাতিকে। বঙ্গবন্ধুর আহŸানে মূলত সেদিন থেকেই গোটা জাতির মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন দেশের স্বাধীনতা। ধানমÐির বাসভবন থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার ঘোষণায় শত্রæসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে দেশবাসীকে অনুরোধ ও নির্দেশ দেন। শুরু হয় হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার চূড়ান্ত প্রতিরোধ লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস ধরে চলা সেই মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটতরাজের কলঙ্কিত অধ্যায়ের বিপরীতে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের আরেকটি মহান অধ্যায়। সেই অধ্যায়ে ছিল মুক্তিকামী বাঙালির অসম সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথা। ১৭ এপ্রিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেসিডেন্ট করে গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী স্বাধীন বাংলা প্রবাসী সরকার। অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। জন্ম নেয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

আজ বিজয়ের দিন:
আজ সেই ঐতিহাসিক বিজয়ের দিনে কৃতজ্ঞ জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার ঘ­ানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে জনতার ঢল। শ্রদ্ধার সাথে তারা শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসের নানা আয়োজনে। কি শহর? কি গ্রাম? রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সর্বত্রই আজ চলবে বিজয় দিবসের উদযাপন। দিবসটির তাৎপর্য্য তুলে ধরে পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ সাময়িকী এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। আর দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে নানা অনুষ্ঠান। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয। এতে বলা হয়, কর্মসূচির মধ্য রয়েছে, সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬ টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সাড়ে ৭ টায় ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

আজ শুক্রবার সকাল ১১ টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন,কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার, মেরিনা জাহান এমপি, পারভীন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, মো. গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন এবং সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

এদিকে ১৭ ডিসেম্বর দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমন্ডি বত্রিশস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়াও ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য রাখবেন দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যথাযথ মর্যাদায় সারাদেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে দলের কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহŸান জানান।


১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতার ৫২তম বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।

এক বাণীতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, জাতীয় জীবনে ১৬ ডিসেম্বরের এ দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সমগ্র জাতির অবদানের কথা আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ও দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের যথাযথ প্রতিদানের জন্য দোয়া করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন