শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

মানবতা খুঁজবো কোথায়

প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

কাজী খোরশেদ আলম : পৃথিবীতে মানবাধিকার সংগঠনের অভাব নেই। কিন্তু তারা কোন মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে, তা বোধগম্য হচ্ছে না। মানবাধিকার বলতেই তো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মানুষের অধিকারকে বোঝায়; কিন্তু এখন দেখছি কোনো বিশেষ বিশেষ ধর্মের ও জাতির জন্য মানবাধিকার শব্দটি উচ্চারিত হয়। আর যদি কোনো মুসলিম সম্প্রদায় নির্যাতিত হয় তাদের ক্ষেত্রে মানবাধিকার শব্দটি ব্যবহৃত হয় না, ক্ষেত্রবিশেষে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ শব্দগুলো সহজে যুক্ত হয়ে যায় এদের নামের পাশে। অন্য কোনো সম্প্রদায় বা ধর্মের লোকেরা হাজার অপরাধ করলেও তাদের ক্ষেত্রে কখনো সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ শব্দগুলো যুক্ত হয় না। অপরাধের ক্ষেত্রে সকল ধর্মের ও সম্প্রদায়ের লোকেরা সমান অপরাধী বিবেচিত হওয়া উচিত, কিন্তু একটি সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে ঠুনকো অজুহাতেই চলা অভিযানের নামে হামলা হয়ে যায়; দিন-রাত বোমা হামলাসহ নৌ-পথে, আকাশ পথে ও স্থলপথে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো জোট বেঁধে আক্রমণ করে। তার নজির ইরাক, আফগানসহ অনেক দেশেই দেখতে পেয়েছি। ইসরাইল অবাধে ফিলিস্তিনের মানুষদের হত্যা করছে- এখানে বিশ্ব বিবেক ও মানবতা নীরব রয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে টু শব্দটুকু করেনি; বরং মদদ যুগিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর।
মুসলিম হত্যায় আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হলেও বিশ্ব বিবেকে কখনো সাড়া জাগে না। অপর দিকে একটি হিন্দু, বৌদ্ধ অথবা খ্রিস্টানরা যদি কোনো কারণে হত্যা হয় বা তাদের উপর হামলা হয় তখন শুরু হয়ে যায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ। দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। প্রত্যেক হামলা ও হত্যা অবশ্যই অপরাধ। এই অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠাকে সাধুবাদ জানাই, কিন্তু মুসলিম নির্যাতনের ক্ষেত্রে যখন প্রতিবাদের প্রতিধ্বনী মুখ থুবরে পড়ে থাকে তখনই-বিবেককে কি বলে সান্ত¦না দেই। তাই বলতে হয়- নির্যাতিত-নিপীড়িত হত দরিদ্র মুসলিমদের জন্য মানবতা নেই; তারা বিশ্বের জন্য বোঝাস্বরূপ। নিষ্ঠুর প্রকৃতির মাঝে বসবাস করা তাদের অপরাধ। তাই তো যখন যেখানে যারা পারছে তারা কচু গাছের মতো তাদের ইচ্ছে মতো মুসলিম কতল করছে। তাদের অপরাধ একটি তারা মুসলিম।
পৃথিবীতে যত ধর্মের-ই আবির্ভাব হয়েছে, তার মধ্যে কোনো ধর্মই মানুষ হত্যাকে স্বীকৃতি দেয়নি। প্রত্যেক ধর্ম-ই মানুষ ও মানবতার জয়গান গেয়েছে; অনেকে মানব সেবার মাঝেই ঈশ্বরের সন্ধান খুঁজে পেয়েছে। তবে সত্যিকারের মানবতা কোথায় লুকিয়ে আছে তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার। বিশ্ব বিবেক ও বিশ্ব মানবতা কাদের জন্য নিহিত তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মুসলিম ছাড়া যদি একটি বন্য পশুকেও হত্যা করা হয় তখনই মানবাধিকার সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের ঘুম ভেঙে যায়। যার নজির আমরা দেখতে পেয়েছি বন্যার জলে ভেসে আসা ভারতীয় এক বন্য হাতির ক্ষেত্রে। বন্যার জলে ভেসে আসা ‘বঙ্গ বাহাদুর’কে নিয়ে কত-ই না হইচই হয়েছে। কিন্তু মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য তেমন কোনো সাড়া শব্দ নেই। কোথাও তাদের স্থান নেই, ঠাঁই নেই। অথৈই পাথারে কত জন যে ভেসে ভেসে অচিনপুরে গিয়েছে বা সলিল সমাধি হয়েছে তার খোঁজ বা রাখে কে। নাফ নদীর এক পাশে মৃত্যুপুরী অপর পাড়ে রয়েছে বেড়ি। এভাবে চলছে রোহিঙ্গাদের জীবন তরী। নির্যাতনের মাত্রা দেখে মনে হয়, মৃত্যু তাদের কাছে পরাজিত হয়েছে; নির্র্যাতিতদের কান্নার শব্দ মৃত্যুও শুনে না-তাই তারা বিভিন্ন কৌশলে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইউটিউবের মাধ্যমে কয়েকটি চিত্র দেখে তা-ই মনে হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানরা পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নির্যাতিত ও নিপীড়িত একটি জাতি। যাদের জন্য কথা বলার মতো কেউ নেই। প্রথম চিত্রে যা দেখলাম তা হলো- একজন যুবককে উলঙ্গ করে হাত-পা একটি গাছে সাথে বেঁধে রেখে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বাঁশ দিয়ে তৈরি সুঁচালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করছে। আরেকটি চিত্র দেখতে পেলাম- চারজন যুবকের পা এক সাথে বেঁধে শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এবং চারদিকে দাঁড়িয়ে অসভ্য বৌদ্ধরা তামাসা দেখছে ও কেউ কেউ তাদেরকে লাথি মেরে শিয়াল, কুকুরের মতো হত্যা করছে। অপর একটি চিত্রে দেখতে পেলাম একজন যুবকের দুই হাতে ধরে বুকের উপর ক্রমান্বয়ে লাথি মেরে অজ্ঞান করে তার উপর একজন নারী নৃত্যের স্টাইলে লাফিয়ে লাফিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করছে। অপর একটি চিত্রে দেখতে পেলাম- একটি যুবতী মেয়েকে ধর্ষণ করে তার শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ কেটে টুকরো টুকরো করে জঙ্গলে ফেলে হচ্ছে। এভাবে অসংখ্য চিত্র রয়েছে যেখানে নির্যাতনের মাত্রা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সারা বিশ্ব এই নির্যাতনের চিত্র দেখতে পাওয়ার পরেও মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। জাতিসংঘ নামে একটি সংগঠন থাকলেও তারা শুধু নামেই রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেও রোহিঙ্গা হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা নেওয়া হয়নি। আর মানবাধিকার সংগঠনগুলো তো মুখে খিল লাগিয়ে বসে আছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া, তুরষ্ক, ইন্দোনেশিয়া জোরালো প্রতিবাদ জানালেও অন্য মুসলিম দেশগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন গুরুত্বারোপ করেনি।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হলেও মানবতাবোধ জাগ্রত হয়নি। জাগ্রত হয়নি বিশ্ব বিবেক ও ক্ষমতাধর নেতা-নেত্রীদের মানসিকতা। তাদের একটি-ই অপরাধ তারা মুসলিম। তাই মানবতা শব্দটি তাদের জন্য প্রযোজ্য নহে। তারা মরবে, নির্যাতিত হবে, নদীর বুকে ভেসে বেড়াবে, গুলি খেয়ে মরবে, সাগরে ভেসে মরবে, বৌদ্ধদের খেলনার পাত্র হয়ে মরবে, নারীরা অবলীলায় ইজ্জত বির্সজন দিবে, ধর্ষিত হয়ে মরবে, যুবতীদেরকে অবলীলায় বৌদ্ধ যুবকরা ধর্ষণ করবে, তাতে কার কি আসে যায়। আমরা তো দিব্যি ভালো আছি। ভালোভাবে চলছি। হায়-রে মানবতা, হায়-রে মানবাধিকার, তোমায় কোথায় খুঁজবো বল!
ষ লেখক : বার্তা সম্পাদক, সাপ্তাহিক একুশে বাংলা, কুমিল্লা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ফারদিন মোনায়েম ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:৫৬ পিএম says : 0
আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন