ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটে জয়ী হওয়ার পর ইলেক্টর বা নির্বাচকদের কাছ থেকেও সবুজসংকেত পেয়ে শেষ হাসি ট্রাম্পই হাসলেন। তাকে রুখে দেয়ার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। ইলেক্টরাল কলেজ ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট পদ নিশ্চিত করলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে তার কাছে হেরে যান হিলারি ক্লিনটন। এরপর নির্বাচনে রাশিয়ার হ্যাকিং নিয়ে তৈরি হয় নতুন বিতর্ক। তা ছাড়া, হিলারি জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ২৫ লাখ জনপ্রিয় ভোট বেশি পেয়েছেন। এ দুটি বিষয় ট্রাম্পকে আটকে দেয়ার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে। ইলেক্টরদের কাছে অসংখ্য আবেদন আসতে থাকে, তারা যেন ট্রাম্পকে ভোট না দেন। যদি ৩৮ জন ইলেক্টর ট্রাম্পকে ভোট না দিতেন, তাহলে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি। টেক্সাসের দুজন রিপাবলিকান ইলেক্টর অবশ্য ট্রাম্পের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তারা ট্রাম্পকে ভোট দেননি। দু’জন ইলেক্টর ট্রাম্পকে ভোট না দিলেও চারজন ডেমোক্রেটিক ইলেক্টর হিলারিকে ভোট দেননি। সব মিলে দুই দলের ছয়জন ইলেক্টর তাদের নির্ধারিত প্রার্থীকে ভোট দেননি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টরাল কলেজ ভোট ৫৩৮টি। এর মধ্যে ২৭০টি পেলেই তিনি হন প্রেসিডেন্ট। ৮ নভেম্বর নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী ট্রাম্পের ঝুলিতে ৩০৬টি এবং হিলারির ২৩২টি ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে। তবে ইলেক্টরাল কলেজ ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হয় কংগ্রেসের ঘোষণা অনুযায়ী। ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে এই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ট্রাম্পের বিজয় রুখতে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন ভোট পুনর্গণনা করান। তাতেও কোনো লাভ হয়নি, বরং উইসকনসিন রাজ্যে মোটের ওপর ১৩২টি ভোট বেশি পান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন ট্রাম্প। একই দিন ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিদায় নেবেন ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। শুরু হবে ট্রাম্প প্রশাসনের শাসন। এরই মধ্যে ট্রাম্প তার মন্ত্রিসভা প্রায় গুছিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য সোমবার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন ৫৩৮ জন ইলেকটর দেশজুড়ে কংগ্রেস ভবনগুলোয় ভোট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। পূর্বের ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকম-লীর ভোট নিছক একটা আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হলেও ৮ নভেম্বরের ভোটে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বিজয় এ পদ্ধতিকে আবারও আলোচনায় নিয়ে আসে।
উল্লেখ্য, ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হিলারি ক্লিনটন বেশ এগিয়ে থাকলেও অধিকাংশ ইলেকটোরাল ভোট জিতে নেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে জিতে যান। সেই নির্বাচকরা ঠিকমতো নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিলে ট্রাম্প পাবেন ৩০৬ ভোট, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে প্রয়োজনীয় ২৭০-এর চেয়ে অনেক বেশি। তবে ট্রাম্পের জন্য শঙ্কার বিষয় হলো, তার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নির্বাচক বিদ্রোহ করে বসলে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।
ইসলামি জিহাদের মধ্যদিয়ে খ্রিস্টানদের হত্যাই জঙ্গিবাদ : ট্রাম্প
ইনকিলাব ডেস্ক
জার্মানি তুরস্ক ও সুইজারল্যান্ডে একই দিনে তিনটি হামলা ঘটনার সমালোচনা করতে গিয়ে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতাকে ইসলামী জিহাদী কর্তৃক খ্রিস্টানদের ওপর পরিচালিত হামলা বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, একইসঙ্গে ‘জঙ্গি’দের নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
জার্মানি-তুরস্ক-সুইজারল্যান্ড। গত সোমবার একই দিনে সন্ত্রাসী হামলায় কেঁপে ওঠে ইউরোপের এই তিন দেশ। গত সোমবার এতে অনেকেই আতঙ্কিত। অনেকে প্রকাশ করেছেন বিস্ময়ও। এদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জার্মানিতে বার্লিনের এক মার্কেটে চালানো হামলায় ১২ জন নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়। আর্ট গ্যালারি পরিদর্শন করতে গিয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে প্রাণ হারান তুরস্কে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভ। সুইজারল্যান্ডের জুরিখের একটি মসজিদে এক বন্দুকধারীর হামলায় তিন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এই তিন হামলার ঘটনায় ইউরোপজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আভাস মিলেছে।
এদিকে, তিনস্থানে হামলার ঘটনার সমালোচনা করে ভবিষ্যৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সন্ত্রাসী’দের নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আইসিসসহ অন্যান্য ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো জিহাদের অংশ হিসেবে তাদের সমাজে বসবাসরত খ্রিস্টানদের নিয়মিতভাবে হত্যা করছে’।
একইদিনে তিন হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপজুড়ে। সামাজিক মাধ্যম টুইটারে সেই আতঙ্কের আভাস মিলেছে। স্টেফানি হামিল লিখেছেন, ‘একই দিনে তিন তিনটি হামলার ঘটনা। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। হামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা এবং নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি’। আরেক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যে তোমাকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই মানুষদের কীভাবে তুমি হত্যা করো? এটা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকতা’। ফিলিপ মরিস নামের একজন জার্মান টুইটারে লিখেছেন, ‘ভবিষ্যত নিয়ে এতটা ভীত আমি কখনো হইনি’। হারশিমরাত কওর বার্লিন হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ট্রাক চালক সম্ভাব্য মুসলিম শরণার্থী হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে পল যোসেফ ওয়াটসন নামের একজন লিখেছেন, ‘ম্যার্কেলের নীতি এখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।’ এজন্য তিনি ম্যার্কেলকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। -সূত্র : ডি ডব্লিউ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন