নওগাঁর সুস্বাদু কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। শীত মৌসুমে এই বড়ির চাহিদা বেশি থাকায় এখন এই বড়ি তৈরির পল্লীতে বড়ি তৈরি নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। অর্ধেক রাত থেকে শুরু হয় এই বিখ্যাত বড়ি তৈরির কাজ। নিজ জেলার প্রয়োজন মিটিয়ে চালান হচ্ছে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলার রাণীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর রাণীনগরসহ তার আশেপাশের কয়েকটি গ্রামেই বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি করা হয় এই কুমড়া বড়ি।
সূত্রে জানা গেছে, জেলার নিজস্ব একটি ঐতিহ্যপূর্ণ খাবার হলো এই মাসকালাইয়ের কুমড়া বড়ি। এটি শীত মৌসুমের একটি বিশেষ খাবার। শীতের ৬মাসই মূলত এই বড়িটি তৈরি করা হয়ে থাকে। দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। রয়েছে অধিক মানের পুষ্টিগুন। বড়ি তৈরির সব উপকরণই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার পণ্য। তাই এই বড়িতে ভেজাল বলে কিছুই নেই। শীত মৌসুমে যে কোন তরকারিতে এই কুমড়া বড়ি যোগ করে আলাদা একটি স্বাদ। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র রাণীনগর উপজেলার সদর ও কাশিমপুর ইউনিয়নের হাতে গোনা কয়েকটি গ্রামে শত বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ এই কুমড়া বড়ি তৈরি হয়ে আসছে। দেশের উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই কুমড়া বড়ি চালান হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি বড়ি তৈরির প্রধান উপকরন মাসকালাইসহ নানা উপকরনের দাম বেড়ে যাওয়া এবং স্বল্প সুদের ঋণ না পাওয়াসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই শিল্পটি থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। যদি সরকারি ভাবে এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের সহযোগিতা প্রদান করা হয় তাহলে আগামীতে এই কুমড়া বড়ি দেশের সকল স্থানে চালান করা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
খট্টেশ্বর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন খট্টেশ্বরগ্রামকে বলা হয় কুমড়া বড়ির গ্রাম। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে এখানে-সেখানে চাটাইয়ের উপড়ে রোদ দিয়ে শুকানো হচ্ছে সাদা রঙ্গের মাসকালাইয়ের কুমড়া বড়ি। বড়ি মূলত মাসকালাই, চাল কুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মোহরী দিয়ে তৈরি করা হয়। সরকারি সহযোগিতা পেলে এই শিল্পটিকে দেশের গোন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
খট্টেশ্বর গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর নরেন দেবনাথ বলেন আমরা খুবই অবহেলিত। সরকারের কাছ সকল সুবিধা সকল মানুষরা পাচ্ছে কিন্তু আমাদের দিকে কোন নজর নেই। দিন যাচ্ছে অনেকেই এই পেশা বদলে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিটি উপকরনের দাম যে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে এই ব্যবসা ধরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। যদি সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণের সুবিধা দেওয়া হতো তাহলে আমরা এই শিল্পটাকে আরো অনেক দূর নিয়ে যেতে পারতাম।
আরেক কারিগর কৃষ্ণ কুমার বলেন আমরা প্রকার ভেদে প্রতি কেজি বড়ি ১৫০-৪০০টাকায় খুচরা-পাইকারি বিক্রয় করি। দ্রুত এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য সরকারি সহায়তা প্রদান করে এই শিল্পটিকে আধুনিকায়ন করা হলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অনেক অর্থ রাজস্ব হিসেবেও আয় করতে পারেন। পাশাপাশি সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই কুমড়া বড়িটি বিদেশেও চালান করা সম্ভব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন জেলার একমাত্র এই গ্রামটিতেই বাণিজ্যিক ভাবে পুষ্টিগুন সম্পন্ন এই সুস্বাদু মাসকালাইয়ের কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। এই পেশার সঙ্গে জড়িতরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের সরকারি ভাবে সহযোগিতা প্রদান করার চেস্টা করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন