শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নতুন ঠিকানা হতে পারে বেলুচিস্তান

ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ইরাক ও সিরিয়া থেকে বিতাড়িত হচ্ছে আইএস

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দলে ভিড়ে যেতে পারে ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী : বিশ্লেষকদের আশঙ্কা
ইনকিলাব ডেস্ক : আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে বেলুচিস্তানের সীমান্ত থাকায় ভৌগোলিকভাবেই প্রদেশটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক ও সিরিয়া সরকারের হাতে ক্রমেই ভূমির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরো পূর্বে ঘাঁটি গড়ার জন্য আগে থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে আইএস। পাকিস্তানে বেলুচিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আনাও বেশ কঠিন। আর ওই পাহাড়ি এলাকার দখল নিতে পারলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানÑ দুই দেশেই আইএস হামলা চালাতে সক্ষম হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আফগানিস্তানে তালিবানের উগ্রতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের ফলে ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী এখন বেলুচিস্তানে অবস্থান করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, হতে পারে এসব শরণার্থীকেও দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে আইএস। আবার অনেকে বলছেন, বেলুচিস্তানে আইএস শক্ত ঘাঁটি তৈরি করতে পারলে ইরানের সঙ্গেও টক্কর দেয়ার একটা সুযোগ পাবে গোষ্ঠীটি। কারণ, ইরাক ও সিরিয়া সরকারকে আইএস দমনে প্রধানত সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান।
সম্প্রতি পাকিস্তানে বিদেশি দূতাবাস ও বিমানবন্দরে আইএস হামলার হুমকি দিলে বিষয়টি স্বীকার করেন দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল অসিম বাজওয়া। অবশ্য এর আগে দেশটির সদ্য বিদায়ী সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ ব্রিটেন সফরকালে বলেছিলেন, পাকিস্তানে আইএসের ছায়া পর্যন্ত নেই। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আগে থেকেই বেশ সক্রিয়। তবে স্বাধীনতাকামী বালুচদের রুখতে পাকিস্তান সরকার স্থানীয় মাদ্রাসাগুলোর সহায়তা নিয়ে আসছিল। কিন্তু এবার সেই মাদ্রাসাগুলোতেই আস্তানা গড়ে তুলতে পারে আইএসÑ এমনই পূর্বাভাস দিচ্ছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, গত ৮ আগস্ট বেলুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট বিলাল আনোয়ার কাসিকে হত্যা করে আইএস। বিলালের লাশ যখন কোয়েটা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন সেখানে জড়ো হয়েছিল শত শত আইনজীবী। কিন্তু সেখানে শোকে বিহ্বল ওই মানুষগুলোর ওপরও ভয়াবহ বোমা হামলা চালানো হয়। ওই বোমা বিস্ফোরণে ৬৩ জন আইনজীবী নিহত হন। সেদিন নিহত হয়েছিল মোট ৯৩ জন। আর আহত হয় বহু মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই হত্যাকা-ের উদ্দেশ্যই ছিল বেলুচিস্তানে আইএসের উপস্থিতির জানান দেয়া। এরপর আর বেলুচিস্তান শান্ত থাকেনি। ২৪ অক্টোবর কোয়েটার পুলিশ ট্রেইনিং অ্যাকাডেমিতে হামলায় নিহত হয় ৬১ জন পুলিশ ক্যাডেট। এতে আহত হয় আরো ১৬৫ জন। ১২ নভেম্বর বেলুচিস্তানের শাহ নুরানি নামের একটি সুফি মাজারে আবারো হামলা চালায় আইএস। এতে নিহত হয় ৫৫ জন। সব মিলিয়ে গত চার মাসে প্রদেশটিতে তিনটি বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে আইএস। এতে অন্তত ২৫০ মানুষ নিহত এবং তিন শতাধিক লোক আহত হয়েছে। বেলুচিস্তানে আইএসের উপস্থিতি সম্পর্কে প্রদেশটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আখতার মেঙ্গাল বলেন, তালেবান, লস্কর-ই-তৈয়্যবার মতো স্থানীয় জঙ্গিদের জন্য যদি পাকিস্তান অভয়ারণ্য হতে পারে, তবে আইএসের জন্য কেন নয়? আমার মনে হয়, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। আখতার আরো দাবি করেন, বেশিরভাগ জঙ্গিগোষ্ঠী পাঞ্জাব প্রদেশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও সন্ত্রাসী হামলার প্রধান লক্ষ্যস্থল কিন্তু বেলুচিস্তানই। সরকার ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে চায়।
পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ মালিক সিরাজ আকবর বলেন, বেলুচিস্তানে আইএস বাহিনীর নেতৃত্বে আছেন কোয়েটায় লুকিয়ে থাকা সাবেক তালিবান নেতারাই। আর স্থানীয় জঙ্গিরাও দ্রুত সাফল্য দেখতে চায়। তারা মনে করে, আইএস বেলুচিস্তানে প্রবেশ করলে পুরো এলাকায় তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। আকবর আরো জানান, আইএস যে মতাদর্শে বিশ্বাসী, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অনেকেই সেই একই মনোভাব পোষণ করে। তাই দেশ দুটিতে আইএস ঢুকে পড়া কোনো বিচিত্র বিষয় নয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষক আমির রানার মতে, আইএস এখন এক বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। সব দেশের জঙ্গিবাদের আদর্শে বিশ্বাসী মানুষকেই তারা আকৃষ্ট করছে। পাকিস্তানও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় পাকিস্তান সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবেÑ এমন সমাধানের কথাই বলেছেন বিশ্লেষকরা। দ্য ডিপ্লোম্যাট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন