আগামী ১৬ জানুয়ারি তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মাসের শেষের দিকে ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আইএমএফ বোর্ড সভায় তোলা হবে। তার আগেই আইএমএফ’র এই কর্মকর্তার সফল গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আগামী বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করবেন আইএমএফ’র এই ডিএমডি।
বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার অংশ হিসেবে গত ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সফর করে গেছে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ঋণসংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পরবর্তী বোর্ড সভার সভাপতি হিসেবে আইএমএফ ডিএমডি অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এবং ঋণ দেওয়ার যৌক্তিকতা বোর্ড সদস্যদের কাছে ব্যাখ্যা করবেন। সে কারণে তার ঢাকা সফর গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র জানায়, আইএমএফের ডিএমডি ১৬ জানুয়ারি পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যেতে চেয়েছিলেন। তবে ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের দিন নির্ধারণ হয়েছে। এতে তার পদ্মা সেতু পরিদর্শনের সময় দুদিন পিছিয়ে ১৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু বিষয়ে আইএমএফ কর্মকর্তাকে অবহিত করার জন্য সেতু বিভাগে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারিতে বোর্ডের অনুমোদন পেলে পরের মাসেই প্রথম কিস্তিতে বাংলাদেশকে ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার ঋণ দেবে আইএমএফ। এরপর ঋণ প্রস্তাব অনুযায়ী সংস্কারমূলক পদক্ষেপের শর্তে ৬৫৯ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলারের ৬টি সমান কিস্তিতে বাকি অর্থ দেওয়া হবে। ৪২ মাসের এই ঋণ কর্মসূচিতে ৩০টি শর্ত রয়েছে যা ৩টি বিভাগের অধীনে পড়ে গুণগতমান উন্নয়ন সংক্রান্ত শর্ত (কিউপিসি), অবকাঠামোগত মান উন্নয়ন সংক্রান্ত শর্ত (এসপিসি) ও সাধারণ প্রতিশ্রুতি।
জানা গেছে, বাধ্যতামূলক শর্তগুলো কিউপিসির অধীনে পড়ে। সেই শর্তগুলো হলো- নেট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের একটি ন্যূনতম স্তর নির্ধারণ এবং সরকারের বাজেট ঘাটতির ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ। পরবর্তী কিস্তির ঋণ পাওয়ার আগে সরকারকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কিউপিসির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। কিউপিসির ৩টি লক্ষ্যমাত্রা প্রতিটি কিস্তির সঙ্গে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের আগে সরকারের কাছে শর্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার চেয়েছিল আইএমএফ। জানা গেছে, সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে এ ব্যাপারে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি সংস্থাটির বোর্ড সভায় বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাবটি তোলা হতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে ওই দিনই অনুমোদন হয়ে যেতে পারে। তবে তার আগে সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতির বিষয়েও নিশ্চিত হতে চাইবে প্রতিষ্ঠানটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন