রংপুরসহ গোটা উত্তর জনপদে জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র ঘন কুয়াশা আর সে সাথে প্রচন্ড হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের সব বয়সী মানুষ। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে চলতি মাসেই শিশু ও নারীসহ ২১ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদেও মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন এবং অবশিষ্টরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধাসহ ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন শিশু ও বৃদ্ধসহ আরও ১৫ জন।
সোমবার সকালে রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা থাকবে আরও ৩/৪ দিন।
গত ৩/৪ দিন ধরে এ অঞ্চলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টার পর থেকে রাতভর ঘন কুয়াশা ঝরছে। রাত যতই গভীর হয়, কুয়াশার মাত্রাও ততই বাড়তে থাকে। বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরতে থাকায় রাস্তায় যান বাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে মারাত্মক ভাবে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সাথে প্রচন্ড হিমেল বাতাসে মানুষের হাত-পা শিষ লেগে যাচ্ছে। এতে করে মানুষ সাধারণ কাজকর্ম করতে পারছে না। নগরীতেও রিক্সা-ভ্যান চালকরা একটু পর পর হোটেল কিংবা চায়ের দোকানে চুলার কাছে গিয়ে হাত শেকে নিচ্ছেন। শিশু-বৃদ্ধরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দিনভর ঘরের মধ্যে গায়ে কাঁথা-কম্বল জড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
অন্যান্য বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকে এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়লেও এবছর এ অঞ্চলে শীত নেমেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত তা চলমান রয়েছে। বিশেষ করে গত দু’দিন ধরে প্রচন্ড হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা এ অঞ্চলের মানুষকে কাহিল করে দিয়েছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ। খড়কুটো জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। শীতে গবাদি পশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে। শীতের কারনে বিভিন্ন রোগব্যধির প্রদুর্ভাবও চরমভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, হাপানী, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে রমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে প্রতিটি শয্যায় একাধিক শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। শয্যা না পেয়ে অনেক শিশুকে মেঝেতে রাখা হয়েছে। এছাড়া মেডিসিন ওয়ার্ডে মাঝ বয়সী ও বৃদ্ধদের সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেছে। তাদের সবাই শীত জনিত রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের চিকিজৎসকগন জানিয়েছেন, প্রচন্ড শীতে শিশু ও বয়স্করা কাবু হচ্ছেন বেশি। তবে চলতি সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের রয়েছে। তারপরও প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এবার কোল্ড ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন