বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নাসিক নির্বাচন : একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ভোটের দিন পর্যন্ত নিরাপত্তা ও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পর্কে জনমনে এক ধরনের শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা ছিল। এমনকি প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও তাদের মত করে আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের দিনের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে কাউকে কোন অভিযোগ করতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে এটি একটি ব্যতিক্রমী ও ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। এই নির্বাচনে নাসিক মেয়র হিসেবে বিপুল ভোটে পুনঃনির্বাচিত হয়ে এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভি। প্রথমে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হলে তার প্রথম নির্বাচনে ২০১২ সালে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আইভি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এক নতুন স্তম্ভ হয়ে ওঠেন। এবারের নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রার্থী মনোনয়নে আইভিকে বাদ দিয়ে তালিকা পাঠানো হলেও আইভির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার বিষয়টিকে মাথায় রেখে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাকে নৌকা প্রতীকে নাসিক নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই মনোনয়ন যে যথার্থ ছিল প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে আইভি তার প্রমাণ দিয়েছেন। প্রথমবার আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে, দ্বিতীয়বার বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র হয়ে আইভি তার দলনিরপেক্ষ জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নাসিক মেয়র হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় ডা.সেলিনা হায়াত আইভিকে আমাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
দেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচনী সংস্কৃতি যখন নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, বিশেষত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে একপাক্ষিক, ভোটারবিহীন ও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা যখন সরকারীদলের নির্বাচনী সংস্কৃতির নতুন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছিল, নাসিক নির্বাচনের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত সে ধারা থেকে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে প্রত্যাবর্তনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এই নিবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে, নাসিক নির্বাচনের শুরু থেকেই নানা ধরনের শঙ্কা থাকলেও ভোটগ্রহণ ও ফলপ্রকাশের শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মত তেমন কোন ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। বিএনপি প্রার্থী প্রাথমিকভাবে সূক্ষ্ম কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করলেও তিনি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেননি। উপরন্তু নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি নির্বাচনের পরের দিন অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন খানের বাসায় গিয়ে তাকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন এবং শাখাওয়াত হোসেন খানও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনে তার পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে গতকাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়। সেই সাথে আগের মতই দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন সেলিনা হায়াত আইভি। উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে ১২জন বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। এদের অনেকেই পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। সার্বিক বিচারেই নাসিক নির্বাচনের প্রতিটি ধাপ দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হতে পারে। তবে আগামীতে আরো স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করার স্বার্থেই কথিত সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগকেও আমলে নিয়ে তা’ খতিয়ে দেখতে হবে।
একটি স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন হলেও দেশের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নাসিক নির্বাচন একটি জাতীয় নির্বাচনের আবহ লাভ করেছিল। কাউন্সিলর পদে আওয়ামীলীগের চাইতে বিএনপি’র প্রার্থীরা বেশী নির্বাচিত হলেও এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা না থাকা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়গুলো এই নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মত দিচ্ছেন। তা’ ছাড়া বিগত সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত মেয়রদের বিরুদ্ধে মামলাসহ হয়রানি, বরখাস্তকরণ এবং প্রত্যাশিত উন্নয়নে সরকারী সহায়তা না পাওয়ার দৃষ্টান্ত সামনে রেখে মেয়র হিসেবে শহরের উন্নয়নে আইভির দলনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ভোটাররা। এভাবেই দলীয় পরিচয় ও দৃষ্টিভঙ্গি ছাপিয়ে সেলিনা হায়াত আইভি একজন জনপ্রিয় স্থানীয় নেত্রী হিসেবে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের সকল স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নাসিক নির্বাচন এবং ডা.সেলিনা হায়াত আইভি’র কাছে শিক্ষণীয় আছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রমাণ করেছে, নির্বাচন কমিশন, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও তাদের দল এবং সরকারের সদিচ্ছা থাকলে যে কোন স্থানে দৃশ্যত সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। তবে বর্তমান অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে কোনো জাতীয় নির্বাচনে অনুরূপ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশা অবান্তর বলে মনে করা হলেও একটি হাই প্রোফাইল স্থানীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকার দৃষ্টান্ত জাতির সামনে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করছে। নাসিক নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও পরিশীলিত নির্বাচনী সংস্কৃতির চর্চা করার জন্য অংশগ্রহণকারী সকল মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতি আমরা অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও ধন্যবাদার্হ। এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এই প্রত্যাশা দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের।  

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nannu chowhan ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৭:১৮ এএম says : 0
This editorial what you have mention that is true.Also our observation is,Two main candidate have shown the real democratic norm.It should be example for the all candidates all over the country.what we see if the administrative party wish they can go on election free fair. Actually the administration can only stop terrorism in the polling centre, congratulation winer also all participated candidate & the people of the city.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন