টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের দাবীতে ১১ টি সংগঠন যৌথ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় সাগর পাড়ের হোটেল মিশুকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে
টুয়াকের সভাপতি আনোয়ার কামাল তাদের লিখিত দাবী পড়ে শুনান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,
নাব্যতার সংকটের অযুহাত দেখিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটন পরিহনের জাহাজ চলাচল গত এক বছর বন্ধ আছে। পর্যটন ব্যাসার সাথে জড়িত ৫ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা অচল হয়ে পড়েছে।
প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে যত সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করে তার অধিকাংশ পর্যটকই সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন। যেহেতু সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যা মূল ভূখন্ড হতে ১৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত। সমুদ্র পথে যাতায়াত করা সহজসাধ্য নয় বিধায় প্রতিবছর নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকায় পর্যটকগণ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারে। আর এই পর্যটকদের ভ্রমণসেবা প্রদান করে ট্যুর অপারেটরদের পাশাপাশি ট্যুর গাইড, হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউজ, রেস্টহাউজ, ফ্ল্যাট ও কটেজ ব্যবসায়ী- কর্মচারী, বাস-মিনিবাস ব্যবসায়ী-কর্মচারী, রেস্টুরেন্ট ও ফুড প্রসেসিং ব্যবসায়ী-কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভ্যান- রিক্সা-টমটম চালক এবং বিভিন্ন প্রকারের কুটির শিল্প ব্যবসায়ীসহ প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে
থাকে।
তিনি অভিয়োগ করে বলেন, গত কয়েক বছর থেকে, সেন্টমার্টিন নিয়ে নানা প্রকারের অপপ্রচার করা হচ্ছে। পর্যটক ভ্রমণ করার ফলে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ নাকি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আসলে পরিবেশ হলো এমন একটি জিনিস যা আমাদের পারিপার্শ্বিকতা তৈরি করে এবং পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে ক্ষমতা প্রদান করে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা সব মিলিয়েই তৈরি হয় আমাদের পরিবেশ। অর্থাৎ আমাদের চারপাশের গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, মাটি, পানি, বায়ু, সূর্যের আলো, বন্ধুবান্ধব এসব কিছু মিলিয়েই তৈরি হয় পরিবেশ। মানুষকে বাদ দিয়ে পরিবেশ হতে পারে না। আবার মানুষরাই পরিবেশ ধংস করছে এটাও সত্য কথা। কিন্তু পর্যটন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজদের স্বার্থেই সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
ইতোমধ্যে টুয়াক পরিবেশ রক্ষায়
ইউএনডিপির সহায়তায় জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সেন্টমার্টিনকে প্লাষ্টিকমুক্ত করার জন্য বিশাল কর্মজজ্ঞ শুরু করেছে।
পর্যটন ব্যবসাকে টেকসই করার জন্য সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে পরিবেশ রক্ষার নামে একশ্রেনীর মানুষ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বলে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন।
তারা বছরে সুপার পিক যে দিন সেদিন সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে বলে মানুষের ভারে সেন্টমার্টিন ডুবে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ২০১৯ সালে নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত ১লাখ ৬০ হাজার ৫০০ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করছেন। অর্থাৎ ১৫১ দিন পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ১,০৬৩ জন মানুষ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এদিকে সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে আসছেন। সেখানে অতিরিক্ত মাত্র এক হাজার মানুষ বেশী গেলে কি সমস্যা হবে তা কারো বোধগম্য নয়।
চলতি পর্যটন মৌসুমের শুরু হতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটন পরিবহন জাহাজ বন্ধ আছে। কিন্তু বড় বড় জাহাজে মিয়ানমারের মালামাল পরিবহন অব্যাহত আছে। যদি নব্যতার সংকট থাকতো তাহলে মিয়ানমারের জাহাজ মালামাল নিয়ে কিভাবে বন্দরে আসে- এমন প্রশ্নও রাখেন নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,
বর্তমানে ০২টি জাহাজ টেকনাফের দমদমিরা ঘাটে অবস্থান করছে। যা গত ৩/৪ দিন পুর্বে সেন্টমার্টিন হতে এই রুটেই ভাটার মধ্যে দমদমিয়া জেটিতে এসেছে । নব্যতার সংকট থাকলে তা হতো না। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল না করার ফলে কক্সবাজার তথা সেন্টমার্টিন ভ্রমন সেবা প্রদান কারী ৫লক্ষ মানুষের জীবিকা এখন হুমকীর সম্মুখিন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জীবন জীবিকা ঠিক রাখার স্বার্থে এই নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল চালু করার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে মানবতার মা, পর্যটন প্রেমী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তারা আকুল আবেদন জানান।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও পর্যটন যাতায়াত কিন্তু বন্ধ নাই। মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে কাঠের বোটে বা স্পীড বোটে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ যাতায়াত করছে। এতে কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সমগ্র পর্যটন শিল্পের উপর একটা বিরাট আঘাত আসবে।
এই আর্থিক অনটনের মধ্যে অনেকে নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হতে পারে। যা এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবক্ষয় বয়ে আনবে। এহেন কর্মকান্ড হতে রক্ষা এবং জীবিকা নির্বাহ এবং পর্যটকদের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য অতিদ্রুত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চালু করার জন্য প্রশাসনের নিকট তারা আবেদন জানান।
জাহাজ চলাচলের অনুমোদন দেয়া না হয় তবে পর্যটনসেবি সকল সংগঠনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হবে বলে ও তারা হুশিয়ারী দেন।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েমন অব কক্সবাজার টুয়াক, সী-ক্রুজ অপারেটন অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, কলাতলী মেরিন প্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি, সেন্টমাটিন আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতি, সেন্টমাটিন বোট মালিক সমিতি,
ট্যুর গাইড এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার। হোটেল-মোটেল গেষ্টহাউজ মালিক সমিতি, বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি, কক্সবাজার জেলা কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ, সেন্টমার্টিন রোস্তোরা মালিক সমিতি সেন্টমার্টিন বাজার মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন