যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দুই দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। এদিন ৬.১৫ মিনিটে তার পৌঁছানোর কথা থাকলেও অবতরণে বিলম্ব হওয়ায় সাড়ে ৭টার দিকে অবতরণ করে ডোনাল্ড লুকে বহনকারী বিমান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকাস অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাইম উদ্দিন আহমদ ও মার্কিনরাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরো জোরদারই তার এ সফরের লক্ষ্য। বাংলাদেশ সফরের আগে তিনি গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারত সফর করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে সিনিয়র কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শ্রম ও মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে তাদের ভাবনা সম্পর্কে ধারণা নেয়া, অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো জোরদারে আলোচনা ওই বৈঠকগুলোর উদ্দেশ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু আজ রোববার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গেও তার আলোচনা হতে পারে। সফর শেষ আজ রাতেই তিনি ঢাকা ছাড়বেন।
এটি চলতি মাসে বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিনিধি দলের দ্বিতীয় সফর। চার দিনের সফর শেষ গত মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র পরিচালক এলেইন লবাখ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডোনাল্ড লু জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম, মানবাধিকারসহ অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করতে ভারত সফর করেছেন। তিনি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ফোরামে অংশ নেন। এ ছাড়া জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার খাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কিভাবে আরো সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।
গত ১২ জানুয়ারি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, মানবাধিকার, জ্বালানি, আইনের শাসন, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী, বিভিন্ন ব্যাক্তি, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। সবার কাছ থেকে বাংলাদেশের সার্বিক ধারণা নেবেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আকসার (অ্যাকুজিশান অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট) ও জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট) চুক্তি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। কারণ এর আগে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র পরিচালক এলেইন লবাখ ঢাকায় এ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে গেছেন।
এদিকে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে বৈঠকে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হবে। তিনি বলেন, র্যাব যখন তৈরি হয় তখন আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের পরামর্শেই তৈরি হয়। তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই দেশগুলো র্যাবের ধারণা দেয়। তারাই তৎকালীন সরকারকে এর জন্য ইকুইপমেন্ট দেয়। তাদের কারণেই প্রাথমিকভাবে র্যাব চালু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে র্যাব এখন অনেক পরিপক্ব হয়েছে। দেশের জনগণ তাদের পারফরম্যান্সের জন্য তাদের চায়। যুক্তরাষ্ট্র অন্যের বুদ্ধিতে তাদের ওপর প্রেশার দিয়েছে। আমাদের একটা অনুরোধ থাকবে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন