শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

শীতে শিশুর যত্ন

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাজধানীসহ সারা দেশে তীব্র শীতের কারণে ঠা-াজনিত রোগ বাড়তে শুরু করেছে, বিশেষ করে শিশুরা ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে বর্তমানে যত রোগী ভর্তি হচ্ছে, এর বড় অংশ ঠা-াজনিত সমস্যা নিয়ে। প্রায় সব ওয়ার্ডে এখন ঠা-াজনিত রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। বিশেষায়িত এ হাসপাতালে এত রোগী আসছে যে, সবাইকে শয্যা দেয়া যাচ্ছে না। এটি শুধু রাজধানীর শিশু হাসপাতালের চিত্র নয়, সারা দেশেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ। সরকারিসহ সব হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হচ্ছে, এর বড় অংশ শিশু।

নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সাধারণ বছরের অন্য সময়ের চেয়ে শীতে শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ নিউমোনিয়ার মতো রোগ বেড়ে যায়। দিনে যত রোগী আসছে, এর বড় অংশই ঠা-াজনিত সমস্যা নিয়ে। হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে ঠা-াজনিত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। যেসব পরিবারের শিশুদের এসব হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, তাদের বড় অংশ দরিদ্র। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বেশির ভাগই গ্রাম থেকে আসা। এসব হতদরিদ্র পরিবারের সচেতনতার অভাব রয়েছে। শীত বেড়েছে আরো। তাপ বাড়েনি বলে তীব্র শীতে কাঁপছে সারা দেশ। দিনে কম ঠা-া অনুভব হলেও রাতে বেশ ঠা-া পড়ছে। ঠা-ার আমেজে রাতে কাঁথা কিংবা কম্বল গায়ে জড়িয়ে না দিয়ে ঘুমালে সকালে গলাটা যেন কেমন করে। খুসখুসে কাশি ও একটু ব্যথা অনুভব হয়। তাই শিশুদের আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঠা-া-কাশি, শীতকালীন ডায়রিয়া, চর্মরোগ ইত্যাদি দেখা দেয়। তারপর শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং সোনামণিদের ঠা-ায় একটু বাড়তি যতœ নিতে হবে।

গরমে শিশুদের পাতলা জামাকাপড় পড়ে মেঝেতে খোলামেলা পরিবেশে রেখেছেন। এখন ঠা-ায় একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রাতে সোনামণিদের খালি গায়ে রাখবেন না, জামা পড়িয়ে ঘুমাতে দিন। ঠা-ায় কম্বল বা লেপ ব্যবহার করবেন। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করবে। শরীরের চামড়া শুষ্ক ও হাত পা অমসৃন হবে। ঠোঁট শুকে ফেটে রক্ত বের হতে পারে। এরকম হলে শিশুদের হালকা করে অলিভঅয়েল মালিশ করতে পারেন। ঠোঁট ও পায়ের গোড়ালিতে ভ্যাসলিন লাগাবেন। শিশুদের ঠা-াজাতীয় যেমন- ফ্রিজের পানি ও আইক্রিম খাওয়াবেন না। প্রতিদিন গোসল না করিয়ে, একদিন পরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাবেন। ধূলাবালি থেকে দূরে রাখবেন। প্রয়োজন হলে মাস্ক ব্যবহার করবেন। এ সময় একটু অবহেলার কারণে ঠা-ায় হাঁচি-কাশি, জ্বর, শীতকালীন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

সোনামণি অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনার শিশুর চিকিৎসকের অথবা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। জ্বর হলে প্যারাসিটামল, হাঁচি-কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন শিশুর রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াবেন। ভিটামিনযুক্ত খাবার বিশেষ করে- ভিটামিন সি, ফল, শাক-সবজি দিতে হবে। শিশুদের ০-১ মাস বয়সী হলে ১ থেকে ২ ঘণ্টা পর পর ২ বার খাওয়াবেন। ৬ মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াবেন। ৫ থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুদের ৪ ঘণ্টা পর পর খাবার দিবেন। ৬ মাস পর সোনামণিদের শক্ত খাবার- খিচুড়ি, সুজি, মাছ, ডিম, মুরগির গোশত, শাক যে কোন প্রকার সবজি যেমন- পেঁপে, পটোল, গাজর ইত্যাদি নিতে হবে। প্রথম অবস্থায় খিচুড়ি ব্লেন্ডারে বা অন্য কোন উপায়ে নরম করে খাওয়াতে হবে। খিচুড়ির মধ্যে পোলাওয়ের চাল বা সেদ্ধ চাল, ডাল, কাঁচকলা, আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, লাল শাক বা পালং শাক, পিঁয়াজ, লবন, পরিমাণমতো দিতে হবে।

শীত মৌসুমে শিশুদের শরীরে চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে। সোনামণিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। চর্ম রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মলম ব্যবহার করবেন। এ সময় শিশুদের ঠা-া এলার্জির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে শিশুদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে হাসপাতালে বা শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন। মনে রাখবেন, একটু অবহেলার জন্য শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। সোনামণিদের যতœ নিন। অসুস্থ হলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ঠিকমতো ও সময়মতো সঠিক পরিমাণে ওষুধ খাওয়ান। তাই সঙ্গত কারণে ঠা-াজনিত রোগ থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হলে নাগরিকদের সচেতন হওয়ায় এখনকার বাস্তবতা।


মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন