ই-কমার্স কোম্পানি ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার সাবেক পরিদর্শক সোহেল রানা ভারতে জামিন পেয়ে পালিয়েছেন বলে খবর এলেও ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ এখনও কিছু জানে না বাংলাদেশের পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মনজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে যে সোহেল পালিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে কলকাতা প্রতিনিধির বরাত দিয়ে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে। এরপর বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছে। তবে অফিসিয়াল চ্যানেলে কোনো তথ্য আদান-প্রদান হয়নি। গতকাল রোবাবার ঢাকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে বলা হয়, থানায় নিয়মতি হাজিরা দেওয়াসহ দুই শর্তে গত ৮ ডিসেম্বর সোহেল রানাকে জামিন দেয় ভারতের একটি আদালত। তবে জামিনের পর থেকেই তিনি পলাতক।
সোহেলের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও কোনো তথ্য বাংলাদেশ পুলিশের কাছে নেই জানিয়ে এআইজি মনজুর বলেন, ভারত থেকে কীভাবে পালিয়ে গেল সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ভারত থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে পুলিশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তিনি যেহেতু ভারতে আছেন, তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার যে কার্যক্রম সেটা আমরা করছি। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে তাদের (ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে) চিঠি দেয়া হয়েছিল। তারও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। মানে তার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেপ্টেম্বরেই শেষ যোগাযোগ হয়েছে।
অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গত বছরের ২৩ ফেব্রæয়ারি কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ সাজা ঘোষণা করা হয় সোহেল রানার। এরপর থেকে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে ছিলেন। কিন্তু জেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে জামিনের আবেদন করেন সোহেল। পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থানায় প্রতি সপ্তাহে হাজিরা এবং থানা এলাকার বাইরে যাওয়া না যাওয়ার শর্তে গত ৮ ডিসেম্বর তার জামিন মঞ্জুর করে ভারতের আদালত। জামিন পেয়েই সোহেল রানা লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলে কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে দেশের যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি ই-অরেঞ্জ। ৮৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকার প্রতারণার অভিযোগ এনে ২০২১ সালে ২ সেপ্টেম্বর ১৭ জনের পক্ষে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি করেন মো. রাসেল নামের এক গ্রাহক। এরপর ৭৬ লাখ ৪১ হাজার টাকার প্রতারণার অভিযোগে ৭ সেপ্টেম্বর ১০ জনের পক্ষে দ্বিতীয় মামলাটি করেন ইসতিয়াক হোসেন টিটু।
দুই মামলাতেই ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানাসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর সোহেল রানা ভারত-নেপাল সীমান্তে বিএসএফের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর আসে ভারতের সংবাদমাধ্যমে। পরে দেশটির পুলিশও তা নিশ্চিত করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সেদেশে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর সোহেল রানার ভারতের কারাগারে আটক থাকার খবর আসে। সোহেল রানা ২০০৩ সালে পুলিশে এসআই হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই আরও ২১ জনের সঙ্গে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে চাকরি ফিরে পান।এরপর ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সোহেল রানার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ আসে বাহিনী থেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন