শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

গুজরাটে সঙ্ঘটিত মুসলিম হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ ধামাচাপা ভারতে মোদির বিরুদ্ধে বিবিসির তথ্যচিত্রে নিষেধাজ্ঞা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিষয়ে প্রচারিত বিবিসির একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও প্রচারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে দেশটিতে। গুজরাটে সঙ্ঘটিত মুসলিম হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ ধামাচাপা দিতে মোদি সরকার প্রতিবেদনটিকে নিষিদ্ধ করে এর সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে, যেটি ২০০২ সালে তার রাজ্য গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গার সময় তার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সেই সহিংসতার সময় মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন যেখানে ২ হাজারেও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিল মুসলিম। মোদি সরকার সামাজিক মাধ্যমেও বিবিসির প্রতিবেদনটির কোনো অংশ প্রচার নিষিদ্ধ করেছে। তথ্যটিত্রটি মঙ্গলবার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে প্রদর্শিত হওয়ার কথা রয়েছে, যা বর্তমানে বিজেপির বিরোধী কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা শাসিত। ফলে, শনিবার ভারতের বিতর্কিত তথ্য প্রযুক্তি আইনের অধীনে জরুরী ক্ষমতা ব্যবহার করে তথ্যটিত্রটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা থেকে আটকে দেয়া হয়।
ইতোমধ্যে ভারতের একটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাত্র ইউনিয়নকে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বলে সতর্ক করেছে। বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, এটি ক্যাম্পাসে শান্তি ও সম্প্রীতিকে ব্যাহত করতে পারে। সম্প্রতি নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর ছাত্র ইউনিয়ন টুইটারে জানায় যে, তারা মঙ্গলবার রাত ৯টায় (১৫:৩০ জিএমটি) তাদের কার্যারয়ে ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ শীর্ষক বিবিসির প্রতিবেনটি প্রদর্শন করবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ওয়েবসাইটে বলে যে, তারা তথ্যচিত্রটি দেখানোর অনুমতি দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের অননুমোদিত কর্মকাÐ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শান্তি ও সম্প্রীতিকে বিঘিœত করতে পারে তা জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী/ব্যক্তিদের অবিলম্বে প্রস্তাবিত কর্মসূচি বাতিল করার জন্য দৃঢ়ভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যা ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।’
বিবিসি গত সপ্তাহে বলেছে যে, তথ্যটিত্রটি কঠোরভাবে গবেষণা করে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লোকেদের প্রতিক্রিয়াসহ বিভিন্ন কণ্ঠ ও মতামত জড়িত রয়েছে। দুই ভাগে বিভক্ত বিবিসি তথ্যচিত্রটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বে গোপনকৃত একটি নথির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে, মোদি সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং মুসলিমদের ওপর হামলায় হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দেন। তথ্যচিত্রটিতে আরো বলা হয়েছে, সহিংসতাটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং এর লক্ষ্য ছিল হিন্দু এলাকা থেকে মুসলিমদের বিতাড়ন করা। রাজ্য সরকারের মদদ ছাড়া দাঙ্গাটি অসম্ভব ছিল। এটি উপসংহারে বলেছে, ‘নরেন্দ্র মোদি সরাসরি দায়ী।’ ২০০২ সালের ফেব্রæয়ারির শেষের দিকে গুজরাটে সহিংসতা শুরু হয় যখন অনেক হিন্দু তীর্থযাত্রী বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন ধরে যায়, এতে ৫৯ জন নিহত হয়। পরে, বিজেপির উস্কানিতে বিক্ষুব্ধ জনতা গুজরাট জুড়ে মুসলিম এলাকায় তাÐব চালায়, কয়েক ডজন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করে, যা ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম ধর্মীয় গণহত্যার মধ্যে একটি।
মোদি বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে, তিনি দাঙ্গা বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট কাজ করেননি এবং ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত¡াবধানে একটি তদন্তের পর তাকে এ সংক্রান্ত মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার অব্যাহতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা একটি পিটিশন গত বছর খারিজ হয়ে যায়। মোদি ২০০১ থেকে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত গুজরাট রাজ্য পরিচালনা করেন এবং দাঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হন। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে বাক-স্বাধীনতা কর্মী এবং বিরোধী নেতাদের ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা কমিটির বেহ লিহ ই সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ আদেশ গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি দেশের বিবৃত প্রতিশ্রæতির স্পষ্ট বিরোধিতা করে’। সূত্র : আলজাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন