শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অবিলম্বে পদত্যাগ করুন অন্যথায় ভারাক্রান্তভাবে যেতে হবে

বিএনপির ব্যতিক্রমী কর্মসূচি নীরব পদযাত্রা সরকারকে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করার আহŸান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবার ক্ষমতা দিন। অন্যথায় আপনাদেরকে অত্যন্ত ভারাক্রান্তভাবে চলে যেতে হবে, আপনারা পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাড্ডায় সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে ব্যতিক্রমী পদযাত্রা কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন বেলা আড়াইটায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে রাজধানীর বাড্ডা থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত সোয়া চার কিলোমিটার পথ ‘নিরব পথযাত্রা’ করেছে বিএনপি। বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনের সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বিকাল ৪টার দিকে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে এসে শেষ হয়। নেতা-কর্মীদের হাতে ছিলো সরকার পদত্যাগ, দ্রব্যের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির লেখা সম্বলিত বিভিন্ন প্লাকার্ড এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা। নেতা-কর্মীদের মুখে ছিলো না কোনো শ্লোগান। পদযাত্রা শুরুর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে আমরা এক নতুন আন্দোলন শুরু করলাম। এই সংগ্রামের মধ্যে ঢাকা শহরে এই নিরব যাত্রার মধ্য দিয়ে, এই নিরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব। আসুন, এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে এই সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই- আর কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।

দেশের অবস্থা তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, চাল, ডাল, ডিম, তেল, লবণের দাম বেড়ে গেছে। এই যে রিকশা শ্রমিক, কারাখানার শ্রমিক ভাইয়েরা তারা এখন জীবন-যাপন করতে পারছে না। তারা চাল-ডাল-তেল লবণ কিনতে পারছে না। বাচ্চাদের ডিম দিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, আজকে কথা বলতে গেলে গ্রেফতার করা হয়, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা হয়, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা দিয়ে সমস্ত বিরোধী দলকে আটক করে রাখা হচ্ছে। সমগ্র দেশকে এরা (সরকার) একটা কারাগারে পরিণত করেছে। আমরা কী এটা মেনে নেবো?

বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের ভোটের অধিকার কি আছে? আমাদের ভোটের অধিকার নেই। আমাদের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি এদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন-লড়াই করেছেন, এখনো যিনি গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তাকে মুক্তি করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি মিথ্যা মামলায় সুদূরে নির্বাসিত হয়ে আছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা তাকে প্রত্যাহার করতে হবে, যারা কারাগারে আছেন তাদেরকে মুক্ত করতে হবে। সেজন্য আমরা বলেছি, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে, শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

পথযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মহানগর উত্তরের আহŸায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন। পরে মহাসচিব নেতাদের নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন।

পথযাত্রায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, বাবুল আহমেদ, আবদুল আলিম নকি, এজিএম শামসুল হক, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, মাহবুবুল হাসান ভূইয়া পিংকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজিব আহসান, জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মোঃ মোস্তফা জামান, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ নেতারা অংশ নেন।

মহানগর বিএনপি রাজধানীতে যে চারটি স্থানে পদযাত্রার কর্মসূচির ঘোষণা করেছে এটি তার প্রথমটি। আগামীকাল সোমবার হবে যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর, মঙ্গলবার গাবতলী টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এবং বুধবার মুগদার থেকে মালিবাগ। সবগুলো কর্মসূচি শুরু বেলা ২টায়।

মহানগর উত্তর বিএনপি, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘নিরব’ পদযাত্রার এক কর্মসূচিতে অংশ নেয়। পদযাত্রাটি বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, চৌধুরী পাড়া প্রভৃতি স্থান অতিক্রম করে বিকাল ৪টায় মালিবাগ আবুল হোটেলের কাছে এসে শেষ হয়।

এদিকে বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আয়োজিত ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, শুধুমাত্র সভা করে, কথা বলে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে রাস্তায় নেমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে। সরকারের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অনেক হয়েছে এবার বিদায় হও। জনগণের রক্ত শোষণ করে খেয়েছো এবার বিদায় হও। পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে সংসদকে বিলুপ্ত করুন, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যেই তত্ত¡াবধায়ক সরকার নতুন কমিশন গঠন করবে, সেই নির্বাচনের জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের জনগণের সমস্ত অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিকত্ব থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ‘পদযাত্রা নয়, মরণযাত্রা শুরু হয়েছে বিএনপির’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, অদ্ভুত, এ ধরনের কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এগুলো জনগণের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।

ওবায়দুল কাদের এর উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের অধিকার আপনারা কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের দুইবার ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। আমার জনগণের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছেন। মানুষের পকেট কেটে আপনারা বড়লোক হচ্ছেন আর সেই টাকা বিদেশে পাচার করছেন।

এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারার চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারি, সাম্যবাদি দলের চেয়ারম্যান কমরেড নুরুল ইসলাম, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, মাইনরিটি পার্টির চেয়ারম্যান সুকৃতি মন্ডল, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী, এনপিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য বেলাল হোসেন, নবী চৌধুরী, মো. ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
aman ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২৫ এএম says : 0
বর্তমানে এমন কিছু জিনিস নাই যে দাম কম। এ পর্যায়ে সাধারণ জনতা েএ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না। কারণ মানুষ এখন বেতনের টাকা দিয়ে চলতে পারে না
Total Reply(0)
Tutul ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২৬ এএম says : 0
আ.লীগ যদি জানে তারা অনেক উন্নয়ন করেছে তাহলে তারা ত্ত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিক।
Total Reply(0)
মর্মভেদী ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২৯ এএম says : 0
এ দেশের মানুষ দুইবার ভোট দিতে পারে নাই। কাজেই আমরা চাই নিজের ভোট নিজে যাকে খুশি তাকে দিতে। এ সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে আবার আগের মতো দেখানো নির্বাচন হবে। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়তো জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন