চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ভবনে হামলা চালিয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালককে মারধরের ঘটনায় চার ঠিকাদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে ১০ ঠিকাদারের নাম উল্লেখ করে খুলশী থানায় মামলা দায়েরের পর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। হামলা চালিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় কর্পোরেশনে তোলপাড় চলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল সোমবার এ হামলার প্রতিবাদে টাইগারপাসস্থ অস্থায়ী নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, কর্পোরেশনের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। ঘটনা তদন্তে মেয়রের পক্ষ থেকে কমিটি করা হয়েছে।
রোববার নগর ভবনে প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে হানা দিয়ে ভাঙচুর ও প্রকল্প কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়। সিটি কর্পোরেশনে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’। আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় গত বছরের ৪ জানুয়ারি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীকে গত বছরের ১৪ আগস্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৩৭টি ভাগে (লটে) ২২০ কোটি টাকার দরপত্র আহŸান করা হয়েছিল গত নভেম্বরে। প্রকল্পের আওতায় ওভারপাস, রাস্তা, পদচারী-সেতু, কালভার্ট নির্মাণ, গোলচত্বরসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজ হবে। এ প্রকল্পের কাজ না পেয়ে বিক্ষুব্ধ একদল ঠিকাদার রোববার তার দপ্তরে হানা দিয়ে ভাঙচুর ও তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় রাতেই খুলশী থানায় মামলা হয়। সিটি কর্পোরেশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় আসামি হিসেবে ১০ জন ঠিকাদারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৫ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলায় যেসব ঠিকাদারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- এসজে ট্রেডার্সের সাহাবুদ্দিন, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সঞ্জয় ভৌমিক ওরফে কঙ্কন, মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সুভাষ, মেসার্স খান করপোরেশনের হাবিব উল্ল্যাহ খান, মেসার্স নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের মো. নাজিম, মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজের মো. ফিরোজ, মো. ফরহাদ, ইফতেখার অ্যান্ড ব্রাদার্সের মো. ইউসুফ ও জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের আশীষ।
তাদের মধ্যে শাহ আমানত ট্রেডার্সের সঞ্জয় ভৌমিক কঙ্কন, মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সুভাষ ও জনৈক মাহমুদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম তিনজন মারধরের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন স‚ত্র জানায়, প্রকল্পের কাজ নিয়ে পরিচালকের ওপর আগে থেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন ঠিকাদারেরা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রকল্পের দরপত্র নিয়ম মেনেই করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিকাদারেরা চেয়েছিলেন ভাগাভাগি করে নিতে। এ জন্য করেছিলেন তদবিরও। কিন্তু তা মানেননি প্রকল্প পরিচালক। এতে প্রথম ধাপের ২২০ কোটি টাকার কাজেই নিয়মের কড়াকড়িতে বাদ পড়তে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। এটা জেনেই তার ওপর জোট বেঁধে হামলা করেন ঠিকাদারেরা। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থক।
সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বিএনপি সমর্থক ঠিকাদার। হামলায় অংশ নিয়েছেন অন্তত ১৫জন। তাদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ আওয়ামী লীগ সমর্থক ঠিকাদারও আছেন। হামলায় অংশ নেওয়া সঞ্জয় ভৌমিক কঙ্কন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক। আর ফেরদৌস, সুভাষ ও হাবিব আওয়ামী লীগ সমর্থক। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন