শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

যানজটের অপূরণীয় ক্ষতি রুখতে হবে

যানজটের অপূরণীয় ক্ষতি রুখতে হবে | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

শুধুমাত্র ঢাকা শহরের যানজটের আর্থিক ক্ষতির যে হিসাব পাওয়া যায়, তা বছরে এক লাখ কোটি টাকার বেশি যা মোট জিডিপির ৩ শতাংশের কাছাকাছি। তবে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের কারণে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যানজট বেড়ে চলেছে। শুধুমাত্র ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন ৮০ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। খুব সাধারণ হিসেবে এর আর্থিক মূল্য প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা বলে ধরা হলেও কোটি কোটি মানুষের উপর এর স্বাস্থ্যগত, মনস্তাত্ত্বিক ও পরিবেশগত ক্ষতির পরিমান টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা প্রায় অসম্ভব। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ঢাকার যানজটের বহুমাত্রিক ক্ষতির খাত তুলে ধরা হয়েছে। একটি মামলায় হাজিরা দিতে উত্তরা থেকে পুরনো ঢাকার জজকোর্টে আসতে এবং ফিরে যেতে তাহের উদ্দীনের সারাদিন লেগে যায়। কোর্টে হাজিরার কাজ ১০ মিনিটে শেষ হয়ে গেলেও আসা-যাওয়ার পথে দিনের বাকিটা সময় খরচ হয়ে যাওয়ায় সেদিন তার পক্ষে আর জীবিকার জন্য কাজে যোগ দেয়া সম্ভব হয়না। এরকম অসংখ্য নজির নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন দিনমজুর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সরকারী চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী-কুটনীতিক শ্রেণী ভেদে যানজটের কর্মঘন্টা ও ব্যক্তিগত ক্ষতির হিসাব ভিন্ন হলেও এর সামগ্রিক ক্ষতি দেশ ও জাতির অগ্রগতির পথে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। ঢাকায় যান চলাচলের গতি পায়ে হাঁটার গতির প্রায় সমান। গত বছর ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩১৭ দিনই ঢাকার বাতাসের মান ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত, বিষাক্ত। বিশ্বের দেশগুলোতে বায়ুর মান পর্যবেক্ষক সংস্থা সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স একিইআই)-এর হিসাবে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বা ক্ষতিকর পর্দাথের উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৫ গুণ বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, রাস্তার ধুলোবালি, হাজার হাজার ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি, মাটি ও খাদ্য দূষণের কারণে লাখ লাখ মানুষ কিডনি, গলব্লাডার, ফুসফুসের রোগ ও বধিরতাসহ নানা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দূষণ, যানজট ও শব্দ দূষণে বিশেষত শিশু, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও মনোজাগতিক সমস্যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরণের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। কোটি কোটি মানুষের অসুস্থতা এবং আগামী প্রজন্মের মেধা ও কর্মক্ষমতা বিনষ্টের জন্য দায়ী যানজট ও দূষণের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে এ ক্ষতি হয়তো আর কখনোই পুরণ করা সম্ভব হবে না। বিশ্বায়নের যুগে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সম্ভাবনাময় ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে অপচয় এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতাসমুহ দূর করতে হবে। আমরা যখন স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি, তখন আমাদের রাজধানী শহরে যান চলাচলের গড় গতি ঘন্টায় ৭ কিলোমিটারের কম। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারি এ দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ বোধ করছে না।

যানজট, নিরাপত্তা, বায়ুদূষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মত বিষয়গুলো কোনো শহরে বসবাসের মূল পরিমাপক হিসেবে গ্রাহ্য হয়ে থাকে। সেই সাথে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসায় বান্ধব নীতিমালা, দুর্নীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ , ইন্টারনেটের স্পীড এবং সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ বড় ফ্যাক্টর হিসেবে ধরা হয়। বলাবাহুল্য, সবক্ষেত্রেই আমাদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। যানজটে যে অর্থনৈতিক ও মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে, তা অপূরণীয়। যানজটের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে অনেক কথা ও লেখালেখি হয়েছে। তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। সমস্যা চিহ্নিত হয়ে আছে, প্রতিকারের উদ্যোগ নেই। বরং দিন দিন যানজট শোচনীয় পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। যানজটের বহুমুখী ক্ষতির মধ্যে যে ক্ষতি সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে আগামী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, যানজট ভবিষ্যত প্রজন্মকে অসুস্থ করে দিচ্ছে এবং যার বোঝা রাষ্ট্রের ওপরই বর্তাবে। বাস্তবতার নিরিখে, রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণ ও নিরসনে অনতিবিলম্বে সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাজধানীর যেসব কর্তৃপক্ষ রয়েছে তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। যানজট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণসহ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন