ইস্পাহান শহরের কেন্দ্রস্থলে অন্তত একটি প্রতিরক্ষা কারখানায় ড্রোন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের কর্মকর্তারা নিউজউইককে বলেছেন যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত যেকোন সামরিক পদক্ষেপ আঞ্চলিক বিপর্যয়ের সাথে সর্বাত্মক সংঘর্ষের কারণ হবে।
স্থানীয় সময় শনিবার গভীর রাতে সঙ্ঘটিত এ হামলায় মার্কিন সামরিক বাহিনী কোনো ভ‚মিকা অস্বীকার করলেও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো বড় আউটলেটে উদ্ধৃত মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরাইল, মার্কিন মিত্র এবং ইরানের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। শীর্ষ শত্রæ, যারা স্বীকার বা অস্বীকার করেনি। অন্য কোনো সত্তা দায়িত্ব দাবি করেনি।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে অংশগ্রহণ পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা বন্ধ করার সাথে সাথে, সেক্রেটারি অফ স্টেট এন্টনি বিøঙ্কেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারেনি তা নিশ্চিত করার জন্য ‘প্রতিটি বিকল্প টেবিলে রয়েছে’।
ইরানের কর্মকর্তারা, যারা ক্রমাগতভাবে এ ধরনের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অনুসরণকে অস্বীকার করেছে, তারা সতর্ক করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ দুই শক্তির মধ্যে আরো বৃহত্তর উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন নিউজউইককে বলেছেন, ‘ইরানের দৃষ্টিভঙ্গিতে, যেকোনো স্তরে সামরিক বিকল্পের ব্যবহার মানে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ’।
‘আপাতত’ মিশন উল্লেখ করেছে, ‘ইরান এ ধরনের সম্ভাবনাকে দুর্বল বলে মনে করে’। কিন্তু মিশন আরো বলেছে যে, ‘যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভুল গণনা করে এবং একটি যুদ্ধ শুরু করে’ যে, ‘অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য এ ধরনের সঙ্ঘাতের পরিণতি’ ওয়াশিংটন ‘পর্যন্ত’ হবে। এ ধরনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে, মিশন জোর দিয়ে বলেছে যে, ‘ইরানের নিরাপত্তা এবং স্বার্থ রক্ষার ক্ষমতা আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই’।
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘটনাটিকে মন্ত্রণালয়ের একটি ‘ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স’ এর বিরুদ্ধে তিনটি ছোট ড্রোন পরিচালিত একটি ‘ব্যর্থ হামলা’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। ড্রোনগুলোর মধ্যে একটিকে সুবিধার বিমান প্রতিরক্ষা দ্বারা ভ‚পাতিত করা হয়েছিল বলে জানা গেছে, অন্য দুটি অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থায় ধরা পড়ার পর বিস্ফোরিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে, ‘সৌভাগ্যবশত, এ অসফল আক্রমণে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং শুধুমাত্র কর্মশালার ছাদের সামান্য ক্ষতি হয়েছিল, যা আল্লাহর রহমতে কমপ্লেক্সের সরঞ্জাম এবং কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটায়নি’। মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছে যে, ‘শক্তি, কর্তৃত্ব এবং সুরক্ষা উৎপাদনের জন্য আমাদের কেন্দ্রগুলোর ক্রিয়াকলাপ দ্রæত এবং গুরুত্বসহকারে অব্যাহত থাকবে এবং এ অন্ধ কর্মগুলো দেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় প্রভাব ফেলবে না’।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে হামলার নিন্দা করেছেন। আমির-আব্দুল্লাহিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সা¤প্রতিক মাসগুলোতে ইরানকে নিরাপত্তাহীন করার লক্ষ্যে ইরানের জাতির শত্রæদের প্রচেষ্টার পর আজ এই কাপুরুষোচিত কাজটি করা হয়েছে’। ‘আমাদের দেশের নিরাপত্তা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতার সাথে কাজ করবে এবং এ ধরনের পদক্ষেপগুলো শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞদের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে প্রভাবিত করবে না’।
মন্তব্যের জন্য পৌঁছানো, পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র নিউজউইককে বলেছেন যে, ‘আমরা প্রেস রিপোর্ট দেখেছি, তবে নিশ্চিত করতে পারি যে, কোনো মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের অভ্যন্তরে হামলা বা অভিযান পরিচালনা করেনি’। মুখপাত্র যোগ করেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিরীক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আর কিছু দেওয়ার নেই’।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র সেনা মেজর জন মুরও এ ঘটনায় পেন্টাগনের কোনো ভ‚মিকা অস্বীকার করেছেন। তিনি নিউজউইককে বলেছেন যে, ‘ইরানে এ সপ্তাহান্তের হামলায় মার্কিন সামরিক বাহিনী জড়িত ছিল না’। ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য নিউজউইকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আইডিএফ নিয়মিতভাবে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি, প্রায়শই সিরিয়ার মতো তৃতীয় দেশে, যেখানে সোমবার আরেকটি হামলার খবর পাওয়া গেছে, যার ফলস্বরূপ যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক, বিরোধী নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ার কমান্ডার এবং তার দুই সঙ্গীর মৃত্যু। ইরাকের সীমান্তবর্তী পূর্ব প্রদেশ দেইর এজোরে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এটি তৃতীয় হামলা।
নিউজউইক স¤প্রতি আইডিএফ-এর তথাকথিত ‘যুদ্ধের মধ্যে যুদ্ধ’ সম্পর্কে রিপোর্ট করেছে, যার মধ্যে সিরিয়ায় ইরানের অভিযানগুলোকে লক্ষ্য করার একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখানে তেহরান ইসরাইলের মতো শত্রæদের বিরুদ্ধে বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ইরানের মধ্যেই ইসরাইলি পদক্ষেপের রিপোর্ট কম সাধারণ ছিল, যদিও ইসরাইলকে ইরানের মাটিতে উচ্চ-প্রোফাইল হত্যাকাÐ এবং নাশকতার প্রচেষ্টার জন্য বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্ত করা হয়েছে, বেশিরভাগই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সাথে জড়িত ব্যক্তি এবং সাইটগুলোর বিরুদ্ধে। বিøঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণ করার সময় সর্বশেষ অস্থিরতা দেখা দেয়, যেখানে তিনি সোমবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমাদের নীতি এবং আমার নীতি হল, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন এবং সেগুলো সরবরাহ করার উপায়গুলো থেকে বিরত রাখতে ইসরাইলের ক্ষমতার মধ্যে সবকিছু করা এবং এটি তাই থাকবে’। ‘তবে স্পষ্টতই, আমরা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসাথে কাজ করছি এমন কিছু যা এ অভিন্ন লক্ষ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ’।
বিøঙ্কেন বলেছেন যে, বাইডেন প্রশাসন সম্মত হয়েছে ‘ইরানকে কখনই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়’ এবং যোগ করেছেন যে, তিনি এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ্রএ অঞ্চলে এবং এর বাইরে ইরানের অস্থিতিশীল কার্যকলাপের মোকাবিলা ও মোকাবেলা করার জন্য সহযোগিতা গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন’।
গত সপ্তাহে, দুই মিত্র ইসরাইলে তাদের সর্ববৃহৎ যৌথ লাইভ-ফায়ার অনুশীলন করেছে, যেখানে পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট এবং দূরপাল্লার বোমারু বিমান, ১২টি নৌযান এবং বেশ কয়েকটি আর্টিলারিসহ ১৪০টিরও বেশি বিমানসহ প্রায় ৮ হাজার সৈন্য জড়িত ছিল। সূত্র : নিউজউইক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন