শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বন্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৭ এএম

দেশে এক ধরনের অর্থনৈতিক সংকট চলছে। মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যখন দুর্বিষহ তখন পথে-ঘাটে-বাড়িতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে সারাদেশে এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিনিয়োগে খরা ও স্থানীয় কর্মসংস্থানে এক ধরনের বন্ধ্যাত্বের কারণে কর্মহীন মানুষ ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। এতে শহরে ভাসমান মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পেশাদার অপরাধী, চোর, ছিনতাইকারী, প্রতারক, অজ্ঞানপার্টির তৎপরতাও বেড়ে যাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়িয়ে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ফল না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও মানুষ পুলিশের স্মরণাপন্ন হতে চায় না। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধের সঠিক চিত্রও পাওয়া যায় না। যেসব ঘটনায় থানায় মামলা বা জিডি হয়, পত্র-পত্রিকায় খবর ছাপা হয়, সে ঘটনাগুলোই শুধু অপরাধের জরিপ রিপোর্টে উঠে আসে। অতএব, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, দেশে আইনশৃঙ্খলা অবনতির যে চিত্র গণমাধ্যমে উঠে আসছে, প্রকৃত অবস্থা তার চেয়েও খারাপ।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঢাকায় ছিনতাই, প্রতারণা ও অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার পেছেনে যে তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে; তা হচ্ছে, ভুক্তভোগী মানুষের অসচেতনতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঝিমিয়ে পড়া বা দায়িত্বহীনতা এবং এসব অপরাধের বিচারে লঘুদ- এবং সহজেই জামিনে ছাড়া পাওয়ার ব্যবস্থা। এ কারণে এসব অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে একই অপরাধের লিপ্ত হতে ভয় পায় না। বাসস্ট্যান্ডে ডাবের পানিতে, চা-কফির সাথে উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে, ক্লোরোফর্ম মেশানো রুমাল নাকে ধরে অজ্ঞান করে অথবা প্রতারণার ফাঁদ পেতে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা অহরহ ঘটলেও এসব চিহ্নিত স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়িয়ে অথবা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধী শনাক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় অপরাধ বেড়ে চলেছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রচারিত এক বার্তায় শহরের বাসস্ট্যান্ড ও ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলোতে গভীর রাতে চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। বিশেষত দূরপাল্লার যাত্রীরা মধ্যরাতে বাসস্ট্যান্ডে নেমে বাসায় বা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা না করে সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের সতর্কতার পাশাপাশি অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি টহল ও নজরদারি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। তবে দেশের চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সাথে সাথে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে শুধুমাত্র পুলিশ দিয়ে ক্রমবর্ধমান অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষ যেমন অজ্ঞানপার্টি, ছিনতাই ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, সেই সাথে শহরের শিক্ষিত পেশাজীবী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অ্যাডভোকেট পর্যন্ত তাদের হাতে সর্বস্ব খুইয়ে হাসপাতালে যেতে বাধ্য হওয়ার খবরও প্রকাশিত হচ্ছে। করোনার সময় পুরনো ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে কেরানিগঞ্জের বাসায় ফেরার সময় যাত্রীবেশী অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে ফিজিওথেরাপিস্ট সুশান্ত মজুমদার সর্বস্ব হারিয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছিলেন। ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার রাজধানীর পল্টনে ভিক্টর পরিবহনে প্রকৌশলী রেজাউল করিমের কাছ থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় অজ্ঞান পার্টির প্রতারকরা। তাঁকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে গ্রিলকাটা চোরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরা ফুটেজসহ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, এসব চোর চক্রের সাথে পুলিশের এক শ্রেণীর স্থানীয় ইনফর্মারের যোগসাজশ থাকে। তারা পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব অপকর্ম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। এ ধরনের অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলকে যথাযথ তদারকি ও নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশের মূল কাজ জনগণের জানমালের হেফাজত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। মূল দায়িত্ব পালন না করে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহারের ফলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পেশাদার চোর, ছিনতাইকারীরা যেন এক শ্রেণির পুলিশের খামখেয়ালি ও আইনের ফাঁক-ফোকড় গলিয়ে জামিনে বের হয়ে আবারো একই অপরাধে লিপ্ত হতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের সামাজিক উদ্যোগ এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদেরও এ ক্ষেত্রে নজরদারি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:৫৪ পিএম says : 0
কোরআন দিয়ে দেশ শাসন করা হলে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই কখনোই আমাদের দেশে হতো না দরজা খুলে মানুষ ঘুমাতো দেশ চালায় চোর-ডাকাতরা সেজন্যই আজকে এই অবস্থা দেশের
Total Reply(0)
Abdul Quaium Sheikh ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:৫৬ পিএম says : 0
সুন্দর বলেছেন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন