টেসলা সংশ্লিষ্ট ২০১৮ সালের এক ‘বিতর্কিত’ টুইট থেকে ইলন মাস্ককে দায়মুক্তি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিচারকরা। সে সময়, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটিকে শেয়ার বাজার থেকে তুলে নেয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর, ২০১৮ সালের এক টুইটে মাস্ক জানিয়েছিলেন, তিনি টেসলাকে ব্যক্তিগত করে নেবেন এবং অবাধ্য বিনিয়োগকারীদের শায়েস্তা করবেন। সেই টুইটে বিনিয়োগকারীদের উসকে দিয়ে শেয়ারে দাম বাড়িয়ে শেয়ারপ্রতি ৪২০ ডলার করে নিয়ে কোম্পানির মূলধন সুরক্ষিত করছিলেন মাস্ক। এমনটাই অভিযোগ সংক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের।
পরে আতঙ্কিত-রাগান্বিত বিনিয়োগকারীরা মাস্ককে আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, মাস্কের সেই টুইটের কারণে তাদের লাখো ডলার ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই তারা এই বিষয়ে মাস্কের কাছ থেকে জবাব আশা করছেন। মামলায় প্রধান অভিযোগকারী গ্লেন লিটেলটন ১৮ জানুয়ারি আদালতে বলেছেন, মাস্কের ভুয়া টুইটের কারণে তার বিনিয়োগ অন্তত ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
স্যান ফ্রান্সিসকোর এক ফেডারেল আদালতে মাস্কের বিরুদ্ধে টেসলা’র শেয়ার মালিকদের ‘ক্লাস অ্যাকশন’ মামলার বিপরীতে বিচারকরা মাস্ককে দায়মুক্তি দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইনডিপেন্ডেন্ট। তাদের অভিযোগ ছিল, ওই টুইটের কারণে তাদের কোটি কোটি ডলার খোয়াতে হয়েছে।
‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। ‘টেসলা ৪২০ টেক প্রাইভেট’ মামলায় বিচারকরা সর্বসম্মতভাবে নির্দোষ ঘোষণা দেয়ায় আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ,’ রায়ের পরপরই টুইট করেন মাস্ক। ২০১৮ সালের টুইট সম্পর্কে মাস্ক বিচারককে বলেন, প্রতি শেয়ার চারশ ২০ ডলারে বিক্রির বিষয়টি ‘মোটেও হাস্যরস ছিল না’ ও এর সঙ্গে গাঁজারও কোনো সম্পর্ক নেই। গাঁজার বেলায় প্রচলিত একটি স্ল্যাং হলো ‘৪২০’।
মাস্ক আদালতে সাক্ষ্য দেন, তিনি যখন টেসলাকে প্রাইভেট কোম্পানি করার বিষয়ে টুইট করেন, সে সময় সউদী আরবের ‘ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’ বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, তার তহবিল সুরক্ষিত রয়েছে। ২০১৮ সালে তার প্রথম দিকের টুইটগুলোতেই ‘তহবিল সুরক্ষিত’ বাক্যাংশটি ব্যবহার করেন মাস্ক। কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম চারশ ২০ করে ধরলে, পুরো কোম্পানি বিক্রি করতে খরচ পড়তো সাত হাজার দুইশ কোটি ডলার। পরবর্তিতে তিনি টুইট করেন, চুক্তিটি আসন্ন।
বিচারকদের মাস্ক বলেন, এই সংখ্যার ব্যবহার পুরোপুরি ‘কাকতালীয়’ ছিল। আর এতে ২০১৮ সালের অগাস্টে টেসলার প্রিমিয়াম শেয়ারের ২০ শতাংশ দেখানো হয়েছে। চুক্তিটি কখনও আলোর মুখ না দেখলেও চার কোটি ডলারে ‘সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের’ সঙ্গে সমঝোতা করতে রাজী হয়েছে মাস্ক ও তার কোম্পানি টেসলা। ফলে, মাস্ক কোম্পানির সিইও হিসেবে বহাল থাকলেও তিন বছরের জন্য কোম্পানির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন তিনি।
‘ওই টানটান মুহূর্তে তিনি ওই টুইটের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে পারেননি যে এর ভিন্ন অর্থ কী দাঁড়াতে পারে এবং তার কাছেই বা এর অর্থ কী,’ শুক্রবার বিচারককে বলেন মাস্কের আইনজীবী অ্যালেক্স স্পিরো, ‘আপনাকে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দেখতে হবে – তিনি এই কোম্পানিকে ব্যক্তিগতকৃত পর্যায়ে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেনন। সমস্যা হলো, এই পরিকল্পনা আদৌ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে কি না। কোনো জালিয়াতি কার্যক্রমই বিবেচনার ভিত্তিতে ঘটে না।’ সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন