শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হিরো আলমের কাছেও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পায় সরকার

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুল ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সব ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

এ যেন হেমিলনের বাঁশিওয়ালার মতো অবস্থা। বিএনপি যে কর্মসূচিই দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ সেখানে এসে হাজির হচ্ছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ সে চিত্রই দেখা গেল। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সব ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এটি যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি। এতে বিএনপির সমমনা দলগুলোও অংশ নেবে। তিনি জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করে পর্যায়ক্রমে উপজেলা-জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি হবে। তারপরে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ঢাকা মহানগরেও এ পদযাত্রা কর্মসূচি হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর পাশাপাশি দেশের ১০ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করেছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। সকাল ১০টা থেকে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ইউনিটের ছোট ছোট মিছিল নয়াপল্টনে আসতে থাকে। নয়াপল্টনে জড়ো হয়ে তারা বিদ্যুতের দাম কমানোসহ বিভিন্ন সেøাগান দেন।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার হিরো আলমের কাছেও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পায়। তারা (আওয়ামী লীগ) হিরো আলমকে ঠেকাতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে। হিরো আলম প্রমাণ করেছেন আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু চাপার জোরে টিকে আছে। বারবার মিথ্যা কথা বলে মানুষকে তারা প্রতারিত করতে চায়। বিএনপির আন্দোলন জাতির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন দাবি করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে, সেটি হচ্ছে গণতন্ত্র এবং গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ। এই ভোটাধিকার হরণকারীদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, তা ২ ফেব্রুয়ারির উপ-নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চাল, ডাল, গ্যাসের দাম বেড়েছে, সে দাম কত? গরিব মানুষের অবস্থা আরও খারাপ। মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এই মুহূর্তে মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়। এই সরকার গরিব সাধারণ মানুষের দিকে তাকায় না। তার উল্টো দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে উঠছে।

সরকারের উন্নয়ন ইস্যুর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক ঋণ লাগে ঠিক আছে। কিন্তু তারা উন্নয়নের নামে ঋণ নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করছে, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করে পর্যায়ক্রমে উপজেলা-জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি হবে। তারপরে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ঢাকা মহানগরেও এ পদযাত্রা কর্মসূচি হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন প্রমুখ।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র, মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতার জন্য নয় জনগণের ভোটের ভাতের অধিকার ফিরিয়ে আনা, খুন, গুম, দুর্নীতি, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করছে। বিএনপির আন্দোলনের গতি দেখে লুটেরা অবৈধ সরকার ভয় পেয়েছে। তারা উল্টা-পাল্টা কথা বলছে। তারা দিনের ভোট রাতে করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে জনগনকে বলেছিল আমরা দশ টাকা সের চাল খাওয়াবো। ঘরে ঘরে চাকুরী দেব। এটা কি তারা করেছে। তবে চাকুরী হয়েছে লাখ খানেক আওয়ামী ক্যাডারের। আপনারা জানেন মাছের মাথায় পচন ধরলে পুরো মাছ পচে যায়, দূর্গন্ধ ছড়ায়। আওয়ামী লীগের মাথায় পচন ধরেছে। চারিদিকে লুটপাট, দুনীতি, ডলারশূন্য হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ বোঝাই মাল পড়ে আছে। ডলারের অভাবে খালাস করতে পারছেনা। ডলার থাকবে কি করে সবিতো নানা কায়দায় পাচার হয়েছে। দেশ চলে গেছে খাদের কিনারে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায়না। যতদ্রুত সম্ভব এ ব্যার্থ স্বৈরাচারী সরকারকে সরানো যায় ততই মঙ্গল। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজশাহীর সোনাদিঘী মোড়ে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার এক সময় তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য জামায়াতকে সঙ্গী করে আন্দোলন করেছে। হরতাল করেছে। বোমাবাজি করেছে। বেগম জিয়া বিধি মোতাবেক সংসদে তত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করেছেন। আর আওয়ামীলীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে তা পাকাপোক্ত করতে অন্যায়ভাবে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এখন সাংবিধানের দোহায় দেয়। ওদের লজ্জা নেই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পায়ের তলায় মাটি নেই। বিএনপির কর্মসূচি দেখলে তাদের পদকম্পন শুরু হয়। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন দিলে সারাদেশে বিপুল ভোটে জিতবে বিএনপি। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করেছেন। আর আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়েছিলেন। এখন তাকে ও তার পরিবার নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশে আবারও নেতৃত্ব দেবে আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এ মুহুর্তে তাদের বড্ড প্রয়োজন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের আজকের আন্দোলন হচ্ছে জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য। বিদ্যুৎ তেলসহ সব কিছুর লাগামহীন মূল্য মানুষকে কাহিল করে ফেলেছে। একটু খেয়ে পরে বেঁচে থাকার উপায় নেই। ওরা মানুষের কষ্ট বোঝেনা। জনগণের কথা ভাবেনা। কারণ তারা ভাবে জনগণের ভোটের দরকার নেই। ফলে যারা তাদের প্রতিবাদ করছে তাদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালাচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে এদের হঠাতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র, এমপি মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহীর মাটি বিএনপির দূর্জয় ঘাটি ছিল আছে। রাজশাহীর উন্নয়নে বিএনপি সরকার কাজ শুরু করে।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, রাজশাহী জেলা বিএনপি আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নগর সম্পাদক অ্যাড: শফিকুল হক মিলন, বগুড়ার সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা প্রমুখ।

ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনা ভোট চোর, এটাই মূল কথা। দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছে। তাদেরকে মিথ্যা, গায়েবী মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে। ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার জন্য অবৈধভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় বহু অপকর্ম তারা করছে। আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা রাজনৈতিকভাবে পরাজিত। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চুরি করে না। তারা পুকুর চুরি করছে, ব্যাংক, শেয়ার বাজার, মেঘা প্রজেক্ট, ছোট প্রজেক্ট সব চুরি করে দেশকে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ময়মনসিংহ নগরীর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, টাকা ছাপিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে অবৈধ শেখ হাসিনার সরকার। গত দুই মাসে তারা পঞ্চাশ হাজার কোটি নতুন টাকা ছাপিয়েছে। এটা অব্যাহতভাবে চলতে পারে না। দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধংস্ব করে দিয়েছে তারা। গত কয়েক বছরে দশ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে আওয়ামী লীগ। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে রাস্তায় আন্দোলন করে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে।

এ সময় প্রশাসনের উদ্দেশ্যে এই বিএনপি নেতা বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন না। টিকে থাকতে পারবেন না। স্বৈরাচার টিকতে পারেনি। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আমাদেরকে হামলা, মামলা, হত্যা করেও থামাতে পারেনি। আমরা মরতে শিখেছি। কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।

এ সময় নতুন কর্মসূছি ঘোষনা করে তিনি বলেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। আর এভাবেই ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সরকার পতনের শেষ সংগ্রামে জনগনকে সম্পৃক্ত করে শেখ হাসিনাকে বিদায় করা হবে। এর মধ্য দিয়েই মানুষ দেশের মালিকানা ফিরে পাবে, বলেও যোগ করেন তিনি।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে ভয় পান না। তিনি ভয় পায় নির্বাচনকে। আর এ কারণেই তিনি নির্বাচন নিয়ে উপহাস করছেন। অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব সেক্টরকে সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন এক দফার আন্দোলনে এই সরকারকে বিদায় করে দেশকে ধংস্বের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য সবাই প্রস্তুতি নিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ বলেন, উপ-নির্বাচনে হিরো আলম সরকারকে উলঙ্গ করে দিয়েছে। এই সরকার জালিম ও মুনাফেক সরকার। ওয়ান ইলিভেনের পর তারা ক্ষমতায় এসে তাদের সব মামলা প্রত্যাহার করে আমাদের মামলা সব চালু রেখেছে। গত ২৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা রাজশাহীতে সরকারি গাড়ি রিকুজিশন করে, লোক ভাড়া করে সমাবেশ করেছে। তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন দেশে অটো পাশ চলছে। নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের বই দিতে পারছে না। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী বলছেন-আমরা নাকি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছি। অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করুন, না হলে দেশের মানুষ জুতা মারবে।

এতে সভাপতি ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। সমাবেশে যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
বরিশাল বুরো জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আজ আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তারা কোনদিন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হতে পারে না। আজ আওয়ামী লীগকে জবাবদিহি করতে হবে, কেন তারা সংসদে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো, কেন তারা বাকশাল করে বাকস্বাধীনতা হরণ করেছিলো, কেন দিনের ভোট রাতে হয়; একথা আমরা বলছিনা, বিদেশি পর্যবেক্ষরা বলেছে। এতে তাদের গাত্রদাহ হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্র চাই। গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল জেলা স্কুল প্রাঙ্গনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

ড. মঈন বলেন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব বিহীন সরকারকে বিদায় নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তৃণমূল মানুষের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে, দুর্নীতি করে সেই সকল মানুষকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। এই অত্যাচারী সরকারকে বিদায় দিতে হব দাবি করে তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, জোর করে ক্ষমতায় থাকা যায় কিন্তু মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়না।

তিনি আরো বলেন, আজ যারা মাঠে এসেছেন আপনাদের কাউকে ভাড়া করে আনা হয়নি, সবাই স্বতস্ফুর্তভাবে এসেছেন। এরকম ১০টি সমাবেশে আমরা ১ কোটি লোক সম্পৃক্ত করেছি, আওয়ামী লীগের মতো লোক ভাড়া করে আনিনি। তিনি বলেন, দেশ থেকে অন্যায়, দুর্নীতি, অত্যাচার, সন্ত্রাস ও জুলুমকে দূর করতে হবে বলেই মানুষ আমাদের সভায় স্বতস্ফুতভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ক্ষমতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়না।

ড. মঈন আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতার মোহে অন্ধ নয়। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষেই কথা বলছি। সরকার যদি দেশকে ভালোবাসে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মানুষকে ভালোবাসে তাহলে এই জুলুম অত্যাচারের পথ পরিহার করে জনগণের কাতারে এসে দাঁড়াক। আমরা তো জনগণের কাতারে আছি। তারপর দেশের ১২ কোটি ভোটার যাকে ভোট দিয়ে বানাবে সে দেশ পরিচালনা করবে। তিনি প্রশ্ন করেন, এতে আওয়ামী লীগের ভয় কিসের ?

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিএনপির ঝড়ের গতি বেড়ে গেছে, আর একটু ঝড় হলে গাছের মতো পরে যাবেন। বাংলাদেশে আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আর বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল এমন একটি দল, যারা আপনাদের অধীনে নির্বাচনে যাবেনা। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে নির্বাচনও হবে না।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর-বীর উত্তম, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবর রহমান সারোয়ার।

খুলনা ব্যুরো জানায়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশের বিশিষ্টজন নিয়ে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। গতকাল শনিবার খুলনা নগরীর কেসিসি মার্কেটের সামনে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সবার অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেদী আহমেদ রুমী, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সোহরাব উদ্দিন প্রমুখ।

সিলেট ব্যুরো জানায়, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোন মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি, ভোট কেন্দ্রে কুকুর শুয়েছিল। আর ২০১৮ সালে দিনের ভোট আগের রাতেই শেষ হয়ে যায়। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা দখল, লুণ্ঠন, দুর্নীতিতে বিশ্বাসী। তাই দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এই সরকাররের পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।

আগামী ১১ই ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর কথা বলে এখন ৮০ টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে। মধ্যবৃত্তরা নিম্নবৃত্ত হয়ে যাচ্ছে আর নিম্নবৃত্তরা অতিদরিদ্র সীমার নিচে যাচ্ছে। তারা ক্ষমতায় এসে এ পর্যন্ত ১৫ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। একদিকে জনগণ গরীব হচ্ছে অন্য দিকে তারা দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। তাই এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই।

সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকির সভাপতিত্বে, সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী ও সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদের যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন প্রমুখ।

সমাবেশের সিলেট জেলার সকল উপজেলা-পৌরসভা এবং সিলেট মহানগরের সকল ওয়ার্ড থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগদান করেন। এছাড়াও সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, বিগত ১৪ বছরে এই আওয়ামী সরকারের আমলে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা এই দেশ থেকে পাচার হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাস এবং সরকারের দমন নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি এবং বিদ্যুৎ গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কামানোসহ ১০ দফা দাবিতে ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বুলু। গতকাল শনিবার ফরিদপুর শহরের কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, বাংলাদেশের মানুষের একটাই দাবি, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। এই দাবিতে বাংলাদেশে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন সংগ্রাম। সেই আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের ১৭ জন ভাইকে হারিয়েছি। এই ১৭ জন বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন। আজকে আমরা যদি শেখ হাসিনার পতন না ঘটাতে পারি, তাহলে ১৭ জন ভাইয়ের রক্ত বৃথা যাবে, তাদের রক্তের ঋণ আমরা পরিশোধ করতে পারব না।

তিনি আরো বলেন বাংলাদেশকে একটি বিদেশি তাবেদার নাস্তিকবাদ সরকার নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রথমেই এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করবো একটি মাত্র কারণেই, আজকে এদেশের আলেম-ওলামা আছেন, পীর মাশায়েকরা আছেন, এদেশে ৯৫ ভাগ মুসলমান বসবাস করেন। আর এদেশের পাঠ্যপুস্তকে ডারউইনের থিউরি নিয়ে এসেছেন, আমরা নাকি বানর থেকে বিবর্তন হয়ে মানুষ হয়েছি। তাহলে কোরআনের যে ঐশী বাণী, আমরা বিবি আদম হাওয়া থেকে মানুষের সৃষ্টি, তাহলে কোরআন মিথ্যা হয়ে যাবে। তাহলে এই সরকারের, শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করা এদেশের মানুষের সবার নৈতিক দ্বায়িত্ব। এই নাস্তিকতাকে পাঠ্যপুস্তকে নিয়ে এসেছে আমাদের কোমলমতি বাচ্চারা আগামীদিনে এদেশে নাস্তিক হয়ে বড় হবে, তারা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে, তাদের মুসমানিত্ব থাকবে না ঈমান থাকবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উদেষ্টা জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে গেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। এখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে ১০ দফা বাস্তবায়ন করে দেশে গণতন্ত্র কায়েম করবো। হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশে কোন নির্বাচন হবে না। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সমস্য সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর। সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি এফ এম কাইয়ুম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Imran Hossain ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৩৮ এএম says : 0
মিজা ফখরুল সাহেব একজন সাবলীল ব্যবহারের মানুষ, তার রাজনীতির জীবনে কখনো তার মুখে অশ্লীল কোন কথা শুনিনি, রাজনীতি ছাড়াই এই মানুষটিকে ভালোবাসি।
Total Reply(0)
MN Afsar ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪২ এএম says : 0
নিরপেক্ষ নির্বাচন দিলে ওবায়দুল কাদের সাহেব স্বয়ং নিজেও হিরো আলমের কাছে পাত্তা পাবেনা, বর্তমান আওয়ামী লীগের অবস্থা এ-ই রকম
Total Reply(0)
MN Afsar ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪২ এএম says : 0
নিরপেক্ষ নির্বাচন দিলে ওবায়দুল কাদের সাহেব স্বয়ং নিজেও হিরো আলমের কাছে পাত্তা পাবেনা, বর্তমান আওয়ামী লীগের অবস্থা এ-ই রকম
Total Reply(0)
Jewel Mahmud ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪০ এএম says : 0
হিরো আলম কত জন প্রিয়,,,, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও হিরো আলমের উদাহরণ দেয়, জাতীয়বাদীতা দল বিএনপি তারাও হিরো আলমের উদাহরণ দেয়,,,,।
Total Reply(0)
Md Babu ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪১ এএম says : 0
Ensure every man's right to vote. Introduce people's democracy.
Total Reply(0)
Reza Latif ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:৫৯ এএম says : 0
ভাবতে অবাক লাগে নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রতিযোগী এখন হিরো আলম এবং তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন