শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাওলানা এম এ মান্নানের আজ ১৭তম ইন্তেকালবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান (রহ:)। যিনি মাওলানা এম এ মান্নান নামে সর্বাধিক পরিচিত। উপমহাদেশের এই প্রখ্যাত আলেম ও রাজনীতিকের ১৭তম ইন্তেকাল বার্ষিকী আজ। ২০০৬ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ পেশায় রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মাদরাসা শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক ভ‚মিকা পালন করে তিনি দেশের আলেম, ওলামা-মাশায়েখ সমাজে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তারই প্রতিষ্ঠিত মসজিদে গাউসুল আজম মসজিদ কমপ্লেক্সে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:) বেশ কয়েক বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন কুমিল্লা-২৪ ও পরবর্তীতে চাঁদপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রী এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সউদী আরব, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বাদশা ও শাসকদের সঙ্গে ছিল তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তিনি ১৯৭৬ থেকে ২০০৬ সালে মৃত্যু পর্যন্ত টানা ৩০ বছর বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:) ১৯৩৫ সালের ৯ মার্চ চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলার শীর্ষস্থানীয় ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসায় পড়ালেখা করেন। তিনি ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় এত মেধাবী ছিলেন যে আলিম (এইচএসসি) ক্লাসে পড়ার সময় ফাজিল (ডিগ্রি) ক্লাসের ছাত্রদের পড়াতেন। তিনি ওই মাদরাসা থেকে কামিল (এমএ) পাস করেন। তিনি বাংলা ভাষার পাশাপাশি আরবি, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারতেন। তার বহু ভাষার ওপর কথা বলার দক্ষতা মন্ত্রিত্বকালীন সময়ে দেশের জন্য অনেক সুফল বয়ে এনেছিল।

জ্ঞানতাপস মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:) ছিলেন কার্যত একজন দেশপ্রেমী রাজনীতিবিদ। তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ হলেও প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি ফরিদগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। ইসলামী চিন্তাধারা এবং দেশের তৌহিদী জনতার মুখপত্র হিসেবে তিনি দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়াও ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ ও সাপ্তাহিক পূর্ণিমা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষিতদের মধ্যে সফলতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেন মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:)। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পদেও মাদরাসা শিক্ষিতদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। এরশাদের শাসনামলে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন চাঁদপুর-৬ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি এই আসন থেকে দুইবার জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচন করেন। প্রথমবার তিনি সফলতার সাথে নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রী হন। তিনি পাকিস্তান শাসনামল থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। প্রথম রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ১৯৬২ সালে ইস্ট পাকিস্তান আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ওই পদে বহাল ছিলেন। এছাড়াও তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ইস্ট পাকিস্তান অ্যাসেম্বলির পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন। মাওলানা এম এ মান্নান পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের (মন্ত্রণালয়ের) দায়িত্বে নিয়োজিত পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৬৫ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৬৮ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডলজির সদস্য ছিলেন। এ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যদের পদ ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় সচিবদের সমপদমর্যাদার। ১৯৭৯ সালের বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৎকালীন কুমিল্লা-২৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় তিনি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। মাওলানা এম এ মান্নান ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন চাঁদপুর-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রী এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

মাওলানা এম এ মান্নানের (রহ:) দেশের জন্য অনেক অবদান রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতন, ভাতা ও অনুদান বাড়ানোর পেছনে তাঁর অবদান স্মরণীয়। মাদরাসা শিক্ষায় উন্নয়ন ও শিক্ষকদের জন্য তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। এছাড়াও ১৯৮৭ সালের বন্যাতেও তার অবদান স্মরণীয়। বাংলাদেশের ১৯৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেশের বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণসহায়তা আনেন। তিনি সমাজসেবার পাশাপাশি দানবীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দেশের অনেক দুঃখী অনাথ ছেলেমেয়ের শিক্ষায় অর্থসহায়তা করেন। তিনি দেশে অনেক স্কুল, মাদরাসা ও মসজিদ তৈরি করেছেন। তিনি ঢাকার মহাখালীতে গাউছুল আজম জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। এছাড়াও তিনি তাঁর গ্রাম ইসলামপুরে একটি ইসলামি মিশন চালু করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
মহি আল ফয়সাল ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১১ এএম says : 0
বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসারে তার অবদান চিরস্মরণীয় ! তার সান্নিধ্যে আমি জীবন চলার অনেক বাস্তবতার শিক্ষা পেয়েছি! মুসলিম উম্মার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তার অবদান অমলিন! আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন!
Total Reply(0)
মহি আল ফয়সাল ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১১ এএম says : 0
বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসারে তার অবদান চিরস্মরণীয় ! তার সান্নিধ্যে আমি জীবন চলার অনেক বাস্তবতার শিক্ষা পেয়েছি! মুসলিম উম্মার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তার অবদান অমলিন! আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন!
Total Reply(0)
MD Abdus Sattar ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৬ এএম says : 0
রোজ কেয়ামত পর্যন্ত যেন মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইনকিলাবের এই সিলসিলা জারি থাকে- মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে সেটাই প্রার্থনা করি।
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৬ এএম says : 0
সামগ্রিক আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সংরক্ষণ এবং উন্নয়নে মরহুম মাওলানা আবদুল মান্নানের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। পরম করুণাময় আল্লাহ্ তায়ালা মরহুম মাওলানা আবদুল মান্নানকে মাদ্রাসা শিক্ষায় তার চির স্মরণীয় অবদানের জন্য তাকে পরকালে যথাযথ জাজায়ে খায়ের নসিব করুন।
Total Reply(0)
Ikbal Lst Ikbal ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৬ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সকল মুসলমানদের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
Total Reply(0)
Jahangir Alam ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৬ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ হজরত মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ) যেভাবে এ দেশের ইসলাম, মুসলমান ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য কাজ করে গেছেন ঠিক একইভাবে তার সুযোগ্য সন্তান এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেবেও কাজ করছেন। এজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, এই পরিবার ও তাদের সকল কর্মকাণ্ডের প্রতি তিনি যেন রহমত ও বরকত দান করেন।
Total Reply(0)
Ikbal Lst Ikbal ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৬ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সকল মুসলমানদের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
Total Reply(0)
Khorshed Gazi ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৬ এএম says : 0
বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ইসলামী চেতনাভিত্তিক ইনকিলাবের ন্যায় পত্রিকার সফলতা ছিল প্রায় অসম্ভব এবং অপ্রত্যাশিত। মাওলানা আবদুল মান্নান এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সর্বগ্রাসী হতাশার দিগন্তে ইসলামী চেতনাসম্পন্নদের নিকট মাওলানা আবদুল মান্নান উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক।
Total Reply(0)
Khorshed Gazi ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৬ এএম says : 0
বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ইসলামী চেতনাভিত্তিক ইনকিলাবের ন্যায় পত্রিকার সফলতা ছিল প্রায় অসম্ভব এবং অপ্রত্যাশিত। মাওলানা আবদুল মান্নান এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সর্বগ্রাসী হতাশার দিগন্তে ইসলামী চেতনাসম্পন্নদের নিকট মাওলানা আবদুল মান্নান উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক।
Total Reply(0)
মহি আল ফয়সাল ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১১ এএম says : 0
বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসারে তার অবদান চিরস্মরণীয় ! তার সান্নিধ্যে আমি জীবন চলার অনেক বাস্তবতার শিক্ষা পেয়েছি! মুসলিম উম্মার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তার অবদান অমলিন! আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন!
Total Reply(0)
Kazi Md. Jamal Uddin ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:১৩ এএম says : 0
সামগ্রিক আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সংরক্ষণ এবং উন্নয়নে মরহুম মাওলানা আবদুল মান্নানের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। পরম করুণাময় আল্লাহ্ তায়ালা মরহুম মাওলানা আবদুল মান্নানকে মাদ্রাসা শিক্ষায় তার চির স্মরণীয় অবদানের জন্য তাকে পরকালে যথাযথ জাজায়ে খায়ের নসিব করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন