বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তিন ফসলি জমিতে প্রকল্প নয়

বিশেষ নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর কড়া সাজা ওষুধের লাইসেন্সহীন উৎপাদন-মজুদ-ভেজালে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

এখন থেকে তিন ফসলি জমিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না বলে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিদেশনা দেওয়া হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরেও একটা বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটি হলো—লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিন ফসলি জমিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, স্থাপনা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বা আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে সোলার প্যানেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিল্ডিং, বিভিন্ন ভবন তৈরি করার প্রস্তাব বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সুস্পস্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন কোনো তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। কোনো তিন ফসলি জমিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না, এটি সংরক্ষণ করতে হবে। এটি সুস্পস্টভাবে বলেছেন। এটা আমরা এখন নিয়মিতভাবে মনিটর করবো। সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্র কি এর মধ্যে পড়বে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো ক্ষেত্রেই কোনো প্রকল্প হতে পারবে না। সরকারি-বেসরকারি সব লেভেলে। কোনো তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। প্রকল্প নেওয়ার সময় যাচাই করে দেখা হবে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছেও তা পাঠানো হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে।

এদিকে ঔষধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩ এর খসড়ার চূড়ান্তঅনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর আওতায় ঔষধের লাইসেন্সহীন উৎপাদনে ১০ বছর সাজা মজুদ কিংবা ভেজাল করলে যাবজ্জীবন কারাদÐের বিধান রাখা হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আইনের আওতায় কিছু কিছু ওষুধের দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। আগে আইনটি ছিল ঔষুধ নিয়ে। এই আইনে কসমেটিক্সকে ফোকাস করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বর্তমানে আমাদের দুটি আইন আছে। একটি হলো দ্য ড্রাগস অ্যাক্ট, ১৯৪০। আরেকটি হলো দ্য ড্রাগস কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স-১৯৮২। এ দুটোকে এক করে এবং এর সঙ্গে আরও নতুন কিছু যুক্ত করে আইনটি করা হয়েছে। এর আগে খসড়া আইনটি ২০২২ সালের ১১ আগস্ট নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেটি আজকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে আজকে অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন এসেছে। আগের আইনগুলোতে শুধুমাত্র ওষুধকে ফোকাস করা হয়েছিল, নতুন খসড়ায় কসমেটিকসকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন এ আইনের নাম হবে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩’। এ নামেই আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন আইনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

মাহবুব হোসেন বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ঔষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নতুন ঔষুধ, ভ্যাকসিন ও মেডিকেল ডিভাইস ডেভেলপ করা। ট্রায়াল চারটি ধাপে যাতে করা হয় সেটি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ফার্মাকো ভিজিল্যান্স বলে ওষুধ শিল্পে একটা কনসেপ্ট আছে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের সুযোগ নতুন আইনে রাখা হয়েছে। আগের আইনে সেই সুযোগ রাখা হয়নি। এগুলো যদি ক্ষত্রি হয় তাৎক্ষণিকভাবে যাতে নিবন্ধন বাতিল করা যায়। ভ্যাকসিনের লটের কোয়ালিটি পরীক্ষায় সুযোগ আগের আইনে ছিল না, নতুন আইনে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ (প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করা যাবে যে ওষুধ) ছাড়া রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোন ওষুধ বিক্রি করা হলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে। ওষুধ কোনটা কোনটা ওভার দ্য কাউন্টার বিক্রি করা যাবে সেটা বলা থাকবে। কসমেটিকস নিয়ে তিনি বলেন, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর লাইসেন্সি অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য ওষুধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে। তিনি বলেন, ঔষুধের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্যর যে গাইডলাইন্সটি আছে সেটি যাতে সর্বোচ্চ ব্যবহার করায়, সেই বিষয়ে খুব জোর দেওয়া হয়েছে। এটা প্রতিপালন বাধ্যতামূলক করা হবে। এটা সংসদে পাস হওয়ার সাথে সাথেই কার্যকর হবে। আইনটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অনুমোদনের পর সংসদে পাস হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিকে মনিটর করা, এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কন্ট্রোল করার জন্য ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে। এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের বিষয়টি নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিছু জিনিসকে এখানে মেডিকেল ডিভাইস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলো ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি জানান, নতুন আইনের মাধ্যমে কসমেটিকসের উৎপাদন, বিতরণ এবং মজুত নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তাদের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। খসড়া আইনে ৩০টি অপরাধ চিহ্নিত ও সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদÐ ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এজন্য আলাদা আলাদা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে ওষুধের ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে যাবজ্জীবন পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া যাবে। নকল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি, বিতরণ বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করলে যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ওষুধ ভেজাল করলে বা ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি ও মজুত করলে এক্ষেত্রেও যাবজ্জীবন শাস্তি পেতে হবে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সে উল্লেখিত শর্ত না মেনে ওষুধ উৎপাদন করলে; নিবন্ধন ছাড়া ওষুধ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, বিক্রি, বিতরণ, প্রদর্শন করলে; সরকারি ওষুধ বিক্রি বা বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত বা প্রদর্শন করলে; লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সের শর্ত না মেনে ওষুধ আমদানি করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দÐ হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন