শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বুশরার তদন্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন

অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন ডিবির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪) মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়ায় স্পেনে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্পেনে যাওয়ার প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ফারদিন। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ জন্ম হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ফারদিন। গত সোমবার ফারদিন হত্যা মামলায় বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

তবে ফারদিনের মৃত্যুর পর পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ফারদিন মৃত্যুর সঠিক তদন্ত না করেই কেন নি:অপরাধ বুশরাকে গ্রেফতার করা হল। গ্রেফতারের পর দু’মাস কারাভোগও করতে হলো বুশরাকে।
গতকাল বুশরা সাংবাদিকদের বলেন, ফারদিনের সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। নিখোঁজের আগে আমরা এক সাথে আড্ডা দিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে আমাকে আসামি করা হয়। আমাকে দুই মাস কারাগারে রাখা হয়। অথচ আমি এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। আমরা জীবনে বড় ধরনের যে ক্ষতি হয়েছে এর দায়ভার কে নেবে?

সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা ইনকিলাবকে বলেন, ফারদিন হত্যা মামলা তদন্তের ভিত্তিতে এজাহারভুক্ত আসামি বুশরাকে পুলিশ গ্রেফতার করে, কিন্তু তদন্তের এক পর্যায়ে তার সম্পৃক্ততা না থাকায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি বেশ জটিল। আইনের কোথাও নেই যে এজ্হাার ভুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করে তদন্ত করতে হবে। পুরো বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তের উপর নির্ভর করে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বুশরার যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সব ধরনের মামলা তদন্তের ক্ষেত্রেই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলাটি তথ্যগত ভুলে করা হয়েছে। তদন্তে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা আপাতদৃষ্টিতে পেয়েছি। তাই মামলার আসামি বুশরাকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এর বাইরে আমার কোন মন্তব্য নেই।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বুয়েটের ছাত্র ফারদিন নূর পরশ পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তাকে পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করাতে হতো। অন্যদিকে, নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্পেনে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় হতাশায় ভুগছিলেন। পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে বুয়েটে চলমান পরীক্ষার ফলাফল ক্রমাগত খারাপের দিকে যাওয়ায় বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করতে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ জন্ম হয় তার। তাই জীবনের শেষ মুহূর্তে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন, যা ফারদিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর (কল ডিটেইলড রেকর্ড) পর্যালোচনায় প্রতীয়মান।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ফারদিন পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপ, পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়া, স্পেনে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায় জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ জন্ম হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরে কাউকে কোনো কিছু না বলে সবার অগোচরে ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর বিকেল ৩টা থেকে পরদিন ৫ নভেম্বর দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অস্বাভাবিক আচরণ করেন।

এদিন রাত ২টায় যাত্রাবাড়ী মোড় দিয়ে একা হেঁটে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপাগামী একটি লেগুনায় ওঠেন। এরপর রাত ২টা ২৫ মিনিটের সময় সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর পৌঁছায় এবং ২টা ৩৫ মিনিটের সময় বা তার কিছুক্ষণ আগে ব্রিজের ওপর থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তদন্তকালীন সিডিআর ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় এর সত্যতা পাওয়া যায় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

মামলার তদন্তকালে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারনামীয় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেফতার করা হলেও ব্যাপক ও গভীর তদন্তপ্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে আমাতুল্লাহ বুশরা জড়িত ছিল মর্মে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। নথি সংযুক্ত সুরতহাল, ময়নাতদন্ত, ভিসারা প্রতিবেদন, আইটি বিশেষজ্ঞের মতামত ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনাটি একটি খুনের ঘটনা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার বাদী ফারদিনের বাবা তার বুয়েটপড়ুয়া ছেলের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুতে পুত্রশোকে হতবিহ্বল হয়ে আমাতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করে তথ্যগত ভুল ধারার অভিযোগ করার বিষয়টি তদন্তে প্রতীয়মান। এছাড়া মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় বাদীর অভিযোগে বর্ণিত অজ্ঞাতনামা আসামিদের এ ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন