ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলনে ছাত্রলীগের বাধা, হেনস্তা ও নারী নেত্রীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র অধিকারের পূর্বঘোষিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। পরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শুরু করলে সেখানেও বাধা পেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সম্মেলন ও ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ।
ছাত্র অধিকার পরিষদের অভিযোগ, সম্মেলনে অতিথিদের বক্তব্য চলাকালে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে ছাত্রলীগের একাংশ। সম্মেলন বানচাল করতে পুরোটা সময় তারা বিদ্বেষ ও উসকানিমূলক স্লোগান দেয় এবং এক নারী নেত্রীর বক্তব্য চলাকালে ‘নতুন নাকি’, ‘সুন্দরী মেয়ে এখানে কি করে’সহ নানাভাবে খারাপ ভাষায় কথা বলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কমিটি ঘোষণার পর মিছিল নিয়ে প্রক্টর অফিসের যাওয়ার সময়ও মোটরসাইকেল দিয়ে বিশৃঙ্খলা ও নারী নেত্রীদের উত্ত্যক্ত করা হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সম্মেলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, বিশেষ করে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারীরা নানাভাবে বিরক্ত ও হয়রানি করার চেষ্টা করে। এসময় সাংবাদিকদেরও ‘ইয়েলো’ বলে হেনস্তার চেষ্টা করা হয়।
সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে ছাত্রলীগের সমালোচনা করেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, আজ ছাত্র অধিকার পরিষদের পূর্বঘোষিত একটি সম্মেলন ছিল। তারা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টরকেও জানিয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পেলাম ছাত্রলীগের কালচারাল প্রোগ্রাম চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সহনশীলতা থাকা দরকার। সেখানে যদি আন্তরিক পরিবেশ এবং আন্তরিকতা না থাকে। সেখানে যদি যৌন নিপীড়নকারী ও ইভিটিজারদের মতো বিহেভ করে, সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করে সেটা খুব দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আমাদের কয়েকজন নেত্রী এখানে ছিলেন। একজন নেত্রী বক্তব্যকালে তার হাসি দেখে নাকি প্রেমে পড়ে গেছেন— এমন কথা বলেছেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে বলতে চাই ওদের ঘরে কি মা-বোন নেই? ওরা আজ এই মেয়েটিকে যে কথা বলছে, সে কথাটি তার মা-বোনকে বলতে পারবে?
ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি তরিকুল ইসলাম। বাধার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বানচাল করতে ছাত্রলীগ ব্যান্ড সোসাইটির নামে একটা প্রোগ্রাম শুরু করে। যার কারণে আমরা বটতলায় সম্মেলন করতে পারিনি। তারপর আমরা রাজু ভাস্কর্যে গেলে সেখানেও তারা দখল নিলো। এরপর ভিসি বাসভবনের সামনে সম্মেলন শুরু করলেও নানাভাবে হয়রানি ও উসকানিমূলক কথা ও স্লোগান দিতে থাকে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন। তিনি বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সম্মেলন আছে সেটা আমি জানিও না। আমাকে দাওয়াতও দেওয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ সম্পর্কে আমার জানা নেই।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বটতলার গানের আয়োজন করেছি। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অংশ। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করুক এটা আমাদের চাওয়া। কিন্তু ছাত্র অধিকার পরিষদ আমরা মনে করি যে স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যে কারণে এই সংগঠনটির প্রতি শিক্ষার্থীদের নৈতিক প্রতিবাদ জারি রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন